নওগাঁয় কোরবানি উপলক্ষে ৭ লাখ গবাদিপশু প্রস্তুত করেছেন খামারিরা। শেষ সময়ে পরিচর্যায় ব্যস্ত তারা। এ বছর গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় বাড়তি টাকা গুণতে হয়েছে খামারিদের। তাই পশুও বাড়তি দামে বিক্রি হবে বলে আশাবাদী তারা।
Advertisement
জেলায় এবার চাহিদার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাবে বিভিন্ন জেলায়। এ বছর জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার গবাদিপশু বেচাকেনার আশা করছেন খামারিরা।
নওগাঁ সদর উপজেলার দুবলহাটি ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের খামারি আব্দুল মজিদ। ২০১৬ সালে তিনি তিনটি গরু দিয়ে শুরু করেছিলেন খামার। চার মাস লালন-পালন করে বিক্রি করেছিলেন প্রায় ৫ লাখ টাকায়। যা থেকে খরচ বাদ দিয়ে লাভ করেছিলেন ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। সেই আশা থেকে বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন গরু পালন। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে প্রায় ২১৭টি দেশি ষাঁড়, হলিস্টিয়ান ফ্রিজিয়ান ও অস্ট্রেলিয়ান জাতের গরু। এরমধ্যে কোরবানির ঈদের জন্য প্রস্তুত করেছেন ১৪৪টি। বাকিগুলো দুগ্ধবতী এবং বাছুর।
তিনি খামারের নাম দিয়েছেন ‘মেসার্স রিহাদ এগ্রো ফুড প্রোডাকশন অ্যান্ড ডেইরি খামার’। খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে ১২ জন শ্রমিকের। নিয়মিত গরুকে খাবার দেওয়া ও পরিচর্যা করেন শ্রমিকরা। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে সবুজ ঘাস, খড়, গম ও ভুট্টার ভুসি-আটা, ছোলা, খৈল খাইয়ে লালন-পালন করা হচ্ছে এসব গবাদি পশু।
Advertisement
খামারি আব্দুল মজিদ বলেন, গবাদিপশু পালন ও মৎস্য চাষের ওপর যুব উন্নয়ন থেকে ১৯৯৬ সালে ১৫ দিন এবং ১৯৯৮ সালে ১ মাসের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। কোরবানির ঈদের জন্য এ বছর ১৪৪টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিটি গরু ৮০ হাজার থেকে ৬ লাখ টাকার মধ্যে। এরইমধ্যে খামার থেকে প্রায় অর্ধেক গরু বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগে সব গরু বিক্রি হওয়ার আশা করছি।
এবার খরচ বাদে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা লাভের আশা এ খামারির। এছাড়া দুগ্ধজাত ৩৬টি গরু থেকে প্রতিদিন খরচ বাদ দিয়ে তার লাভ থাকে প্রায় ২০ হাজার টাকা। অনেকে গরু কেনার পর খামারেই রেখে দিয়েছেন। ঈদের আগে খামার থেকে নিয়ে যাবেন তারা।
খামারের শ্রমিক মুক্তার হোসেন ও আজিজুল ইসলাম বলেন, গত ৫ বছর থেকে খামারে কাজ করছি। প্রাকৃতিক সবুজ ঘাস ও দানাদার খাবার দিয়ে লালন-পালন করা হচ্ছে। প্রতিদিন গরুকে গোসল, খাবার ও পরিচর্যা করা হয়। দিনে ৩ বার গোসল করানো হয়। মাসে ১২ হজার টাকা বেতন পাই এখানে।
জেলার ধামইরহাট উপজেলা সদরের টিএনটি মোড়ের খামারি আহসান হাবিব আদর বলেন, তার খামারে ১৫টি গরু আছে। এরমধ্যে ১২টি কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা। এ বছর দানাদার খাবারের দাম বেশি হওয়ায় পশু লালন-পালন করতে খরচ পড়েছে বেশি। গত বছরের তুলনায় দানাদার খাবারের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এখন দাম ভালো পেলে লাভবান হওয়া সম্ভব।
Advertisement
তিনি বলেন, ছোট উদ্যোক্তা বা খামারিদের পক্ষে গরু লালন-পালন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আগামীতে বড় খামারিরা থাকবে আর ছোটরা ঝরে পড়বে।
নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মহির উদ্দীন বলেন, জেলায় ৩৩ হাজার খামারে প্রায় ৭ লাখ বিভিন্ন জাতের পশু লালন-পালন করা হয়েছে। যা চাহিদার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। জেলায় প্রায় ৩ লাখ ২৯ হাজার পশু জবাই হবে। অতিরিক্ত পশু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাবে দেশের বিভিন্ন জেলায়।
তিনি বলেন, খামারিরা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পশুগুলো লালন-পালন করেছেন। এখনো বেচাকেনা তেমন জমে ওঠেনি। তবে কয়েকদিন পর থেকে বাজার জমতে শুরু করবে। সেসময় জেলার বাইরে থেকেও ব্যবসায়ীরা পশু কিনতে আসবেন।
এফএ/জেআইএম