ঈদুল আজহা উপলক্ষে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তর ঈশ্বরদীর অরণকোলা পশুর হাটে বিপুল সংখ্যক গরু উঠলেও ক্রেতা তেমন নেই। গরু দেখাদেখি ও দরকষাকষি হলেও বেচাকেনা হচ্ছে কম। ক্রেতারা গরুর দাম বেশির অভিযোগ করলেও বিক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় পশু খাদ্যসহ সব জিনিসপত্রের দাম দ্বিগুণ। সে অনুযায়ী গরুর দাম দাম বাড়েনি। বেচাকেনা কম হলেও হাটে লোক সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় জমজমাট হয়ে ওঠে হাট।
Advertisement
মঙ্গলবার (১৩ জুন) বিকেল ৩টায় অরণকোলা পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, দূর-দূরান্ত থেকে ট্রাক, ভটভটি ও ট্রলিতে শত শত গরু আসছে হাটে। বিভিন্ন আকারের পর্যাপ্ত গরু হাটে সমাগম হয়েছে। ক্রেতারা পছন্দের গরু দেখে দরদাম করছেন। ক্রেতা-বিক্রেতাদের দরকষাকষিতে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে হাটের পরিবেশ।
কুষ্টিয়ার মিরপুর থেকে অরণকোলা হাটে গরু কিনতে আসা আমছের আলী জাগো নিউজকে বলেন, আমার মতো শত শত ব্যাপারী অরণকোলা হাটে গরু কিনতে এসেছে। এখানে প্রচুর গরু-মহিষের সমাগম হয়েছে। এখানকার গরুর দাম অন্য এলাকার চেয়ে তুলনামূলক কিছুটা কম। এ হাট থেকে গরু কিনে নিজ এলাকায় নিয়ে যাবো। এ পর্যন্ত চারটি গরু কিনেছি, এখনো ১০-১৫টা কেনার ইচ্ছা আছে।
ঈশ্বরদী শহরের কলেজ রোড এলাকার গরু ব্যবসায়ী ও খামারি জীবন হোসেন বলেন, হাটে প্রচুর লোকসমাগম কিন্তু বেচাকেনা নেই। ৫০টি গরু হাটে নিয়ে এসেছি। গরু অনেকেই দেখছেন; দাম শুনছেন কিন্তু কিনছেন না। অন্য বছর ঈদের ২০-২৫ দিন আগে কোরবানির গরু-মহিষ বেচাকেনা শুরু হয়ে যায় কিন্তু এবার তা হচ্ছে না। গরুর দাম অন্যবারের তুলনায় খুব একটা বেশি না। পশু খাদ্যের দাম অনুযায়ী দাম তেমন বাড়েনি।
Advertisement
অরণকোলার গরু ব্যবসায়ী আকবর হোসেন আকু বলেন, হাটে পর্যাপ্ত গরু-মহিষ উঠেছে। গরুর ব্যাপারীরা কমবেশি কিনছেন। আর যারা স্থানীয় মানুষ কোরবানি দেবেন তারা গরুর দাম কেমন সেটা দেখতে এসেছেন। এ হাটে কোরবানির জন্য এক লাখ থেকে চার লাখ টাকা দামের গরু উঠেছে। সবচেয়ে বেশি আছে তিন থেকে পাঁচ মণ ওজনের ষাঁড়।
গরু কিনতে আসা ঈশ্বরদী পৌর শহরের কলেজপাড়া এলাকার আরিফ বিশ্বাস বলেন, কোরবানির জন্য ছোট গরু কিনতে এসেছিলাম। গত বছরের তুলনায় এবার দাম বেশি। এবার তিন মণ মাংস হয় এমন গরু কিনতে হলেও এক লাখ টাকার বেশি লাগবে। কোরবানির আগে আরও হাট আছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে, বিক্রেতারা বেশি দামের আশায় গরু বিক্রি করছেন না। ঈদের আগের হাটে গরুর দাম কমবে বলে আশা করছি। দরদাম করে সাধ্যের মধ্যে গরু কেনার চেষ্টা করছি।
উপজেলার রূপপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, কোরবানির গরু কেনার জন্য হাটে এসেছিলাম। হাট ঘুরে বুঝতে পারলাম, গরুর দাম অন্যবারের তুলনায় বেশ চড়া। এখনো ঈদের প্রায় দুই সপ্তাহ বাকি আছে। গরুর দাম এরমধ্যে কমবে আশা করছি। এ হাটে গরু কিনতে না পারলেও আগামী হাটে কিনবো, ইনশাআল্লাহ।
অরণকোলা পশুর হাটের ইজারাদার মিজানুর রহমান রুনু মণ্ডল বলেন, হাটে গরু কেনার চেয়ে দেখতে আসা মানুষের সংখ্যাই বেশি। হাটে পর্যাপ্ত গরু-মহিষ উঠেছে। হাটভর্তি মানুষও রয়েছে কিন্তু বেচাকেনা তেমন হয়নি।
Advertisement
ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, গরুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও চিকিৎসাসেবা দিতে অরণকোলা হাটে মেডিকেল টিম কাজ করছে। সন্দেহজনক গরুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
শেখ মহসীন/এমআরআর/এএসএম