ফিচার

মোহাম্মদ নাসিমের প্রয়াণ দিবস

মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সালে স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ৬ বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র হিসেবে ছিলেন।

Advertisement

১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতা শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী, স্বাধীন বাংলাদেশের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে পড়াশোনা করেন। এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশের পর তিনি ঢাকায় এসে জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন ও এখান থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে ষাটের দশকে ছাত্র রাজনীতির জীবন শুরু করেন। তিনি ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন।

পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর সরাসরি প্রভাবে তিনি ছাত্রলীগে যোগদান করেন। ছাত্রাবস্থায় ১৯৬৬ সালে তিনি পাবনা অঞ্চলে ‘ভুট্টা আন্দোলন’ সংগঠিত করলে পিতা এম. মনসুর আলীর সঙ্গে কারারুদ্ধ হন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর নাসিম আওয়ামী লীগের পাবনা জেলা শাখার যুগ্মসচিব হন। ১৯৭৩ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তাকে পরে আওয়ামী লীগের যুব শাখা বাংলাদেশ যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়। ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের পরে তাকে এর সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত করা হয়। পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর মোহাম্মদ নাসিমকেও গ্রেফতার করা হয়। সেসময় দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন তিনি।

Advertisement

১৯৮১ সালের আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন নাসিম। ওই সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুব সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮২ সালে নাসিমকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালের সম্মেলনে দলের প্রচার সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালের সম্মেলনে তিনি দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

২০০২ সালের আগ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ একটি ছিল। এরপর থেকে বিভাগভিত্তিক সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০২ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত দলের সম্মেলনে তাকে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির এক নম্বর সদস্য পদে রাখা হয়। ২০১২ সালের সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পরপর তিন মেয়াদে তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৬ সালে নাসিম প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। সিরাজগঞ্জ-১ সংসদীয় আসন (কাজীপুর) থেকে পাঁচবার বিজয়ী হন তিনি। ১৯৯১-এ তিনি জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের চীফ হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে নাসিমকে মনোনয়ন পান এবং বিজয়ী সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৯ সালের নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন। ২০২০ সালের ১৩ জুন ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

কেএসকে/জিকেএস

Advertisement