রাজনীতি

ঈদের পরেই এক দফার আন্দোলনে যেতে পারে বিএনপি

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে রাজপথে আন্দোলনরত বিএনপি ক্রমেই এক দফার আন্দোলনে যাওয়ার হুঙ্কার ছাড়ছে। কিন্তু কবে সেই চূড়ান্ত কর্মসূচি- এর সুনির্দিষ্ট জবাব নেই দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী বা আন্দোলন সহযোগীদের কাছে। তারা মনে করছেন, আসন্ন ঈদুল আজহার পর জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে। অবরোধ, ঘেরাও ও অবস্থান ধর্মঘটের মতো কর্মসূচিতে যাওয়ার নির্দেশনা থাকতে পারে চূড়ান্ত ঘোষণায়।

Advertisement

তবে দায়িত্বশীলরা বলছেন, আন্দোলন চলমান। যে কোনো সময় যে কোনো ধরনের কর্মসূচি আসতে পারে। এটি সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করছে।

আরও পড়ুন: ঢাকাসহ ৬ শহরে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’

বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, ঈদের পর জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বিএনপি কঠোর কর্মসূচির দিকে যাবে। এরই মধ্যে বিএনপির চলমান আন্দোলনে তরুণদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে দলটির তিন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথভাবে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ কর্মসূচির ঘোষণা করেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ছয়টি বড় শহরে ঘোষিত এ কর্মসূচিতে ব্যাপক জনসমাগমের পরিকল্পনা রয়েছে।

Advertisement

আগামী ১৪ জুন চট্টগ্রাম, ১৯ জুন বগুড়া, ২৪ জুন বরিশাল, ৯ জুলাই সিলেট, ১৭ জুলাই খুলনার পর ২২ জুলাই ঢাকায় ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করবে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। এ কর্মসূচি সফলে বাধা আসতে পারে, এমন আশঙ্কাও রয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। তবে ২২ জুলাই ঢাকায় যে সমাবেশ হবে তাতে যদি সরকার কঠোর অবস্থানে থেকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে তবে বিএনপি এক দফার কঠোর কর্মসূচিতে যাবে।

জুলাইয়ে চূড়ান্ত কর্মসূচি কেন- এ প্রশ্নের উত্তরে দলটির বিভিন্ন পর্যায় থেকে জানা গেছে, এ সময়ের মধ্যে সরকারের ওপর জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়বে। বিশেষত জনমানসে বাজেটের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে। মার্কিন সরকার তথা পশ্চিমারা বাংলাদেশ ইস্যুতে আরও পদক্ষেপ নিতে পারে। এছাড়া বিএনপিও এখন জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে। দলের প্রতিনিধিদল প্রতিদিন কোনো না কোনো দেশের কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক করছেন। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক এখন বিএনপির রুটিন ওয়ার্ক হয়ে গেছে। আগামীতে এ তৎপরতা আরও বাড়বে। সবমিলিয়ে জুলাই নাগাদ সরকার আরও কোণঠাসা হয়ে পড়বে। সেটিই হবে চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণার উপযুক্ত সময়।

আরও পড়ুন: অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ইনডোরে সমাবেশ করতেই পারে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বিএনপির এক দফার কঠোর আন্দোলনে কী ধরনের কর্মসূচি আসতে পারে, এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা বলেন, দল শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির দিকে থাকতে চায়। সেক্ষেত্রে ‘অবরোধ, অবস্থান ধর্মঘট ও ঘেরাও কর্মসূচি’ আসতে পারে। চূড়ান্ত দাবি আদায়ে সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধের মতো সিদ্ধান্তে যেতে পারে দল। এছাড়া সরকারি অফিস যেমন- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, স্থানীয় নির্বাচন কার্যালয়, থানা, জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। ঢাকায় সচিবালয়, নির্বাচন কমিশন, গণভবন ও বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি আসতে পারে। এছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থপনার সামনে লাগাতার অবস্থান ধর্মঘটের কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অতীতের ব্যর্থতা থেকে দলটি এবার ঢাকাকে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু করতে চায়।

Advertisement

মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, হরতালের মতো কর্মসূচি বিএনপি এড়িয়ে চলছে। এ ধরনের কর্মসূচিতে সরকার নানা কায়দায় সহিংসতার পথ তৈরি করতে পারে। যার দায়ভার বিএনপির ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ২০১৩-১৪ সালের আন্দোলনের সময় বিএনপি এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছে।

আরও পড়ুন: ঈদের পর কি আন্দোলন আরও চাঙা করবে বিএনপি?

আসন্ন সব কর্মসূচিতে জোট শরিকদের সর্বোচ্চ সমর্থন নিয়ে মাঠে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি। কর্মসূচি পালনে একই সময়ে এক স্থানে জড়ো না হয়ে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেওয়ার ব্যাপারেও শরিকদের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি চায়, জোটের মিত্ররা এখন শক্তভাবে মাঠে নামুক।

রাজশাহী জেলা বিএনপির সদস্য সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন জাগো নিউজকে বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীরা চূড়ান্ত কর্মসূচির অপেক্ষায়। আন্দোলনের জন্য তারা প্রস্তুত। তবে চূড়ান্ত কর্মসূচি কবে আসবে সেটা আমরা জানি না। এটা নীতিনির্ধারকদের ব্যাপার। যখনই ঘোষণা আসবে তখনই নেতাকর্মীরা মাঠে নামবে।

বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল-ফাইল ছবি

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন এবং জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সঙ্গে কথা বলেও পাওয়া গেছে একই ইঙ্গিত।

আরও পড়ুন: বিএনপির সঙ্গে শরিক দলগুলোর দূরত্ব বাড়ছে?

দলটির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন জাগো নিউজকে বলেন, আন্দোলন এখন নেতাদের হাতে নেই। আন্দোলন এখন কর্মী এবং জনগণের হাতে। পরিস্থিতি অনুযায়ী জনগণ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহম্মাদ ইবরাহিম বলেন, আগামীতে দাবি আদায়ে এক দফার আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। তাই বিএনপি শিগগির যে আন্দোলনের ডাক দেবে সেখানে শরিকদের সর্বাত্মকভাবে মাঠে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কর্মসূচিতে সোচ্চার বিএনপি-ফাইল ছবি

১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও জাপা (জাফর) নেতা মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, বিএনপির সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ের বৈঠকে কর্মসূচির ধরন ও কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের সিরিয়াসলি মাঠে থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আন্দোলনই এখন ভরসা।

আরও পড়ুন: যুগপৎ আন্দোলনে তৃণমূলের ঐক্যে মনোযোগী বিএনপি

শিগগির আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে, দ্রুতই বিএনপি এক দফার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচিতে যাবে। এজন্য বিএনপি ও তার মিত্ররা প্রস্তুত। একদফার আন্দোলনের কোনো বিকল্প দেখছে না দল। পদত্যাগের আগে সরকার টোপ হিসেবে সংলাপে ডাকতে পারে। সেই সংলাপে বিএনপির যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। দাবি মানতে বাধ্য করায় রাজপথের কোনো বিকল্প নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফেরাতে গণতন্ত্রমনাদের সহযোগিতা খারাপ কিছু নয়। গণতন্ত্রকামী দেশসমূহ চায় বাংলাদেশে গণতন্ত্র বজায় থাকুক।

কেএইচ/এমকেআর/এসএইচএস/জেআইএম