অর্থনীতি

ভারতের চিনি-চীনের আদা আমদানি বন্ধে দেশে সংকট: বাণিজ্যসচিব

ভারত থেকে চিনি ও চীন থেকে আদা আমদানি বন্ধ থাকায় দেশের বাজারে এসব পণ্যের সংকট রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যখন বেশি অস্থিতিশীল থাকে তখন দেশের বাজারে দাম স্থিতিশীল করাটা খুবই টাফ বলে জানান তিনি।

Advertisement

রোববার (১১ জুন) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রাণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের ৭ম সভা’ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

বাণিজ্যসচিব বলেন, আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ঈদকেন্দ্রিক নিত্যপণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা ছিল এদিনের বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়। ঈদকে সামনে রেখে পেঁয়াজ আদা, রসুন, ভোজ্যতেল বেশি প্রয়োজন হবে। ঈদে এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে, সেগুলোর দাম স্থিতিশীল রাখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অন্যান্য পণ্যের দামও স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে কথা হয়েছে। আজকে তেলের দাম কমিয়ে দেওয়া হলো। লবণের উৎপাদন ও সরবরাহ ভালো রয়েছে।

এছাড়া চীনে আদা উৎপাদন কম হওয়ায় তারা রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। চীন থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় দেশে আদার সংকট আছে। সমাধানের চেষ্টা চলছে। মিয়ানমার থেকে এখন আদা আমদানি হচ্ছে। দেশে গত এক বছরে ২৪ লাখ টন গম এবং ৭২ হাজার টন চিনি আমদানি কমেছে।

Advertisement

সরকার দাম নির্ধারণ করলেও ব্যবসায়ীরা তা অমান্য করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাণিজ্যসচিব বলেন, চিনির প্রধান উৎস ব্রাজিল ও ভারত। এ মুহূর্তে ভারত থেকে চিনি আমদানি বন্ধ। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির ফলে টিসিবির আন্তর্জাতিক টেন্ডারের চিনিও দেশে আনা সম্ভব হয়নি। আন্তর্জাতিকভাবে চিনির একটা সংকট যাচ্ছে। চিনির দাম প্রতিটন ৪৫০ ডলার থেকে বেড়ে গিয়ে প্রায় ৭০০ ডলারে ঠেকেছে।

আরও পড়ুন>> পেঁয়াজের কেজি ৭৫ টাকা, তেল-চিনি-ডিমের বাজারও চড়া

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যখন বেশি অস্থিতিশীল থাকে তখন দেশের বাজারে দাম স্থিতিশীল করাটা খুবই টাফ। তারপরও মাসখানেক আগে আমরা যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম সেটাও রক্ষা করা যায়নি। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম আরও বেড়ে যাচ্ছিল। সে কারণে আমাদের মিলাররাও দাম বাস্তবায়ন করতে পারেননি। সবার মধ্যে একটা আশঙ্কা ছিল যে, আন্তর্জাতিক বাজারে দামটা আরও বেড়ে যায় কি না।

নতুন প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চিনি আমদানি কমেছে ৭২ হাজার টন। আমদানি কম হওয়ার দামের প্রভাব পড়েছে বাজারে। দেশের চিনি চাহিদার প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। এজন্য আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দাম নির্ধারণ করতে হয়। বেশ কিছুদিন ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম স্থির রয়েছে। এখন আমরা বিভিন্ন ধরনের প্যারামিটার বিশ্লেষণ করে দেখবো যে আসলে পরিস্থিতি কী।

Advertisement

সরকার এক মাস আগে চিনির দাম প্রতি কেজি ১২০ টাকা থেকে ১২৫ টাকার মধ্যে নির্ধারণ করে দিলেও ব্যবসায়ীরা তা মেনে চলেননি। উল্টো এখন নতুন করে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১৪০ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ১৫০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। আর বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১৩৫ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির পেছনে সিন্ডিকেট কাজ করেছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, সিন্ডিকেটের বিষয়টি আমি জানি না। তবে যখন আমদানি বন্ধ থাকে তখন হয়তো ব্যবসায়ীরা মনে করতে পারেন যে, চাহিদা বেশি। আমরা দাম বাড়িয়ে দেবো। ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগটা নেওয়ার চেষ্টা করেন।

এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এরই মধ্যে ৩০ হাজার টন দেশে এসেছে। এর মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে প্রতি কেজি ৬০/৭০ টাকায় নেমে এসেছে। অনুমোদনপ্রাপ্ত বাকি পেঁয়াজ দেশে আসলে দাম আরও কমবে।

দাম বৃদ্ধির ঘোষণা সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর করা হলেও দাম কমার ঘোষণা খুব ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন হয়। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির খবরেই দেশের বাজারে দাম বেড়ে যায়। আবার দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার পরও দেশের বাজারে তার প্রভাব পড়ে খুব ধীর গতিতে।

ব্যবসায়ীদের এমন প্রবণতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেই সঙ্গে সঙ্গে দেশে সেই পণ্যের দাম কমানো সম্ভব হয় না, কারণ আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে ডলারের দাম একটা বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। এছাড়া, শুল্কহার, অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যয় মূল্য নির্ধারণে প্রতিফলন ঘটে।

আরও পড়ুন>> যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৮২ টাকা কেজি দরে চিনি কিনবে সরকার

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার দুই মাসেও দেশের বাজারে কেন দাম কমে না- এমন এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যসচিব বলেন, সহজভাবে ব্যাখ্যা করলে হবে না। আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার এক্সচেঞ্জ রেট, পণ্যের ওপর শুল্ক বেড়ে যায় কেনা মূল্যবাড়ার কারণে। এর সঙ্গে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়া। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই দামটা পরিবর্তন হয়। এজন্য যদি কেউ বলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম ২০ শতাংশ কমেছে, দেশের বাজারে কেন ২০ শতাংশ কমলো না? তাহলে কিন্তু হবে না। সবকিছু ক্যালকুলেশন করেই বলা যাবে যে দাম আসলে কত টাকা সমন্বয় করা উচিত।

বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এফবিসিসিআইসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

আইএইচআর/ইএ/জিকেএস