দেশজুড়ে চলছে তাপপ্রবাহ। কোথাও সেটি মৃদু থেকে মাঝারি, আবার কোথাও তীব্র। এই আবহাওয়ায় সৃষ্ট ভ্যাপসা গরমে মানুষ ও প্রাণীকুলের জীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। আর এ ভোগান্তি দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে দেশজুড়ে চলা লোডশেডিং।
Advertisement
এমন পরিস্থিতিতে মানুষ ও প্রাণীকুলে হিটস্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে ক্রমশ। প্রতিদিনই মানুষের পাশাপাশি হিটস্ট্রোকের শিকার হচ্ছে খামারিদের পালন করা স্বপ্নের গবাদিপশু। তাদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। এভাবেই কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা গরু নিয়ে দুচিন্তায় দিন পার করছেন মেহেরপুরের খামারিরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর মেহেরপুরে এক লাখ ৯০ হাজার ৫২০টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন খামারিরা। এর মধ্য গরু প্রায় ৫০ হাজার এবং ছাগলের সংখ্যা আছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৬৯টি। জেলায় কোরবানির চাহিদা ৯০ হাজার ১১২টি এবং উদ্বৃত্ত এক লাখ ৪০৮টি পশু বিক্রি হবে দেশের বিভিন্ন স্থানে। বিশেষ করে রাজধানীর কোরবানির পশু হাটে বিক্রির জন্য অনেক খামারি গরু পালন করে থাকেন।
মেহেরপুর সদর উপজেলার শালিকা গ্রামের খামারির তুহিন মাসুদ জানান, গরু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় তাপমাত্রা সহনীয় রাখা একটি অত্যাবশ্যকীয় কাজ। এই গরমে গরুর প্রয়োজনে ফ্যান চালানো জরুরি। তবে ব্যাপকভাবে লোডশেডিং হওয়ায় তা চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অসহনীয় গরমে খাদ্যগ্রহণ বন্ধ করে দিয়েছে অনেক গরু। তাই দুশ্চিন্তার আছেন তিনি।
Advertisement
গাংনী উপজেলার বামন্দী গ্রামের প্রবাস ফেরত রানা বলেন, আমি দালালের মাধ্যমে বিদেশ গিয়ে নিঃস্ব হয়ে দেশে এসে কৃষিকাজ শুরু করি। বছরখানেক আগে একটি ষাঁড় কিনে লালনপালন শুরু করি। এই কোরবানির ঈদে বিক্রি করবো মনে করেছিলাম। পাঁচদিন আগে এক ব্যবসায়ী দেড় লাখ টাকা দাম দিতে চেয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে গরু হিটস্ট্রোক করায় সেটি জবাই করে সাড়ে চারশ টাকা কেজি দরে গোশত বিক্রি করেছি। তাতে লাখ টাকাও জমেনি। এই গরমে গরুর ঘরে ফ্যান আছে কিন্তু বিদ্যুৎ থাকে না সারাদিন।
খামারি ফান্টু হোসেন বলেন, গরমের মধ্যে চলছে প্রচণ্ড লোডশেডিং। চলমান আবহাওয়ায় গরু নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি। আগে গরু প্রতিদিন যে পরিমাণ খাবার খেতো বর্তমানে তা পারছে না। তাছাড়া গরুকে যে ঠান্ডা জায়গায় রাখবো তার উপায় নেই। সারাদিন অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ থাকে না।
মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী গ্রামের ইনসান আলীর দাবি তার বাড়িতে দেশসেরা ৬০ মণ ওজনের একটি গরু আছে। তীব্র গরমে গরুকে বাঁচাতে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে সোলার প্যানেল বসিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি দিনে তিনবার করে গোসল করাচ্ছেন। কারণ গরুর কিছু হলে বড় রকমের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন তিনি।
একই উপজেলার বল্লভপুর গ্রামের খামারি সাহাবুদ্দিন বলেন, চলতি বছর ২০টি গরু লালনপালন করছি। একটি বড় আকারের গরু আছে, যার বর্তমানে ওজন প্রায় ১৮০০ কেজি। গরুটির দাম চাচ্ছি ১৭ লাখ টাকা। এই গরুটি ঢাকায় নিতে এখনো ১৫ দিনের মতো বাকি আছে। অনাবৃষ্টি আর প্রচণ্ড গরমের মধ্যে সারাদিন বিদ্যুৎ থাকে না।
Advertisement
তিনি বলেন, এক সপ্তাহ হবে আমি আর আমার গিন্নি সারারাত জেগে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করা লাগে। ঠিক দামে বিক্রি করতে পারলে সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে। যত বড় গরু ততো বেশি টেনশন।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান বলেন, সারাদেশের ন্যায় মেহেরপুর জেলাতেও প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ বইছে। এই গরম থেকে গবাদিপশু বাঁচাতে ঘর শীতল রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। টিনের চালে পানি ছিটাতে হবে। ফ্যানের ব্যবস্থা করতে হবে। গরুকে দিনে তিনবার গোসল করাতে হবে বা গায়ে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। স্যালাইন খাওয়াতে হবে। বাইরে বেশি তাপমাত্রায় গবাদিপশু বাঁধা যাবে না। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত আবদ্ধ ঘরে গবাদিপশু না রেখে প্রাকৃতিক ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখতে হবে।
তিনি বলেন, অতিরিক্ত গরমে খাবার সরবরাহ কম দিয়ে ঠান্ডা বা শীতল সময়ে খাবার বাড়িয়ে দিতে হবে। প্রচণ্ড গরমে কৃমিনাশক বা টিকা দেওয়া পরিহার করতে হবে। সম্ভব হলে মিনারেল মিক্সার ব্লক সরবরাহ করা যেতে পারে। এই নির্দেশনা মেনে চললে গবাদিপশুর হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি কমবে।
এমআরআর/জিকেএস