রাত পোহালেই (১২ জুন) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের উপ-নির্বাচন। এ ওয়ার্ডের নির্বাচনে সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছেন ১৬ জন। তবে তাদের মধ্যে সাতজনই একাধিক মামলার আসামি। তাদের মধ্যে চিহ্নিত মাদক কারবারিসহ বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিরাও আছেন।
Advertisement
উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আলোচিত সাবেক ইউপি সদস্য বজলু মেম্বারের মৃত্যুতে সদস্য পদটি শূন্য ঘোষণা করে ১২ জুন উপ-নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এই ওয়ার্ডটি পড়েছে চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের মধ্যে।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১২ জুন কায়েতপাড়া ইউপির চনপাড়া পুনর্বাসন এলাকায় ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণ হবে। ওয়ার্ডটিতে মোট ভোটার ২২ হাজার সাতজন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে।
ওয়ার্ডটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম, সাবেক সহ-সভাপতি মো. শাহাবুদ্দীন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শমসের আলী খান, জয়নাল আবেদিন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য নূর আলম, শেখ রাসেল নগর ইউনিয়ন (চনপাড়া সাংগঠনিক ইউনিয়ন) আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম মোল্লা, ৩ নম্বর ওয়ার্ড (সাংগঠনিক ওয়ার্ড) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা যুবলীগের কার্যকরী সদস্য মো. ইব্রাহিম, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবিদ হাসান ওরফে চান মিয়া, মো. বাবুল, আল আমিন, খলিলুর রহমান, রবিন মিয়া এবং আওয়ামী লীগ নেতা জহিরুল ইসলাম।
Advertisement
রূপগঞ্জ থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের উপ-নির্বাচনে ১৬ প্রার্থীর মাঝে সাতজনের বিরুদ্ধেই রূপগঞ্জ থানায় হত্যা, মাদক, অস্ত্রসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এ উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন জয়নাল আবেদীন (৩৯)। তার বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক, অস্ত্র, বাড়িঘরে হামলা ভাঙচুরসহ ১৯টি মামলা রয়েছে। এছাড়া তার নেতৃত্বে চনপাড়ায় কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
আরেক প্রার্থী শমসেরের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় অস্ত্র, মাদক, হত্যা ও হামলা ভাঙচুরসহ ১৩টি মামলা রয়েছে। গত কয়েক মাসের মাঝে বেশকয়েকবার জয়নাল ও শমসের গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
ওই ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র মামলাসহ সাতটি মামলা রয়েছে। শাহাবুদ্দিন চনপাড়ার আধিপত্য নিতে এরইমাঝে জয়নাল ও শসমের গ্রুপের সঙ্গে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়েছেন।
এছাড়া ইউপি সদস্য প্রার্থী শফিকুল ইসলাম ওরফে জাহিদের বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র মামলাসহ সাতটি মামলা রয়েছে। সেইসঙ্গে ওই ওয়ার্ডর সদস্য প্রার্থী খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের একটি অস্ত্র মামলা রয়েছে। আরেক প্রার্থী আলামিনের বিরুদ্ধেও একটি মামলা রয়েছে।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুয়েটছাত্র ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর পর দেশব্যাপী আলোচনায় উঠে আসা চনপাড়া পুনর্বাসন প্রকল্প এলাকাটি স্থানীয়ভাবে চনপাড়া বস্তি নামেই পরিচিত। ঢাকার কাছেই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত এই চনপাড়া বস্তি নিয়ে গড়ে উঠেছে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড। তিনদিকে নদীবেষ্টিত এই ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য ছিলেন ‘চনপাড়ার ডন’খ্যাত বজলুর রহমান। তার নেতৃত্বে চনপাড়ায় অপরাধ কর্মকাণ্ড ও মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রিত হতো। বজলুর মৃত্যুর পর সেই নিয়ন্ত্রণ নিতে এখানে অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া কেউ কেউ আছেন, যারা চনপাড়াকে সুন্দর করে সাজাতে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নেমেছেন।
চনপাড়া পুনর্বাসন এলাকায় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হলে মামলার আসামিদের প্রার্থী হওয়া নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, “এরা কেউ জনসেবার জন্য প্রার্থী হয়নি, তা তো বোঝাই যায়। এদের মূল উদ্দেশ্য বজলুর জায়গায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা। মানে এরা নতুন ইউপি সদস্য না, চনপাড়ার ‘নতুন ডন’ হওয়ার জন্য ভোটের মাঠে নেমেছে।”
তিনি বলেন, একাধিক মামলার আসামিরাও প্রার্থী হয়েছে। এমন লোকজনের মনোনয়নপত্র কীভাবে বৈধ ঘোষিত হয়েছে তাই ভেবে পাচ্ছি না।
এদিকে, প্রার্থীরা এসব অভিযোগ নিজেদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অপপ্রচার বলে দাবি করেন।
চনপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শামিম আল মামুন জানান, ১৬ প্রার্থীর সাতজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা থাকলেও তারা জামিনে আছেন।
রূপগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ওই ওয়ার্ডে উপ-নির্বাচন ঘিরে এরইমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশে চনপাড়ায় স্মরণকালের সবচেয়ে ভালো নির্বাচন উপহার দিতে পুলিশ প্রস্তুত। এলাকার প্রার্থী ও অপরাধীদের ওপর আমাদের সার্বক্ষণিক নজরদারি আছে।
এমআরআর/জিকেএস