ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বিনোদনের প্রধান কেন্দ্র মুজিব শতবর্ষ পার্কটি প্রায় চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে করে বিনোদনপ্রেমীরা দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেও নিরাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকেই। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি বহিরাগতদের আগমন ও অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে পার্কটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের ২২ একর জায়গার মধ্যে ৫ একর জায়গাজুড়ে মুজিব শতবর্ষ পার্কটি নির্মাণ করা হয়। পার্কটি চালুর পর প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। জনপ্রতি ২০ টাকা টিকিটের মাধ্যমে প্রবেশ ফি নেওয়া হলেও মানুষের মাঝে ব্যপক সারা জাগায় পার্কটি। এতে ভালো সরকারি রাজস্বও আসে। তবে বহিরাগত ও উশৃঙ্খল তরুণ-যুবকদের গণ্ডগোল, অসামাজিক কার্যকলাপের কারণে পার্কটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আগামী জুনে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর যাবে ট্রেন
সরেজমিনে দেখা যায়, পার্কটির মূল গেট তালাবদ্ধ। ছোট একটি গেট দিয়ে উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন। একটি পুকুর সংস্কার করে পুরোনো ও জীর্ণ গাছপালা ছেঁটে সেখানে পরিকল্পিত বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। একই সঙ্গে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে দুই পাশে গাছ রোপণের মাধ্যমে হাঁটাচলার জন্য মনোরম পথ তৈরি করা হয়েছে। পুকুরের মধ্যে বসানো হয়েছে আলো ঝলমলে ফোয়ারা। বসার জন্য রাখা হয়েছে একাধিক বেঞ্চ। উদ্যানের খোলা জায়গায় শিশুদের খেলাধুলার জন্য দোলনা, চরকা, স্লিপার, বোটসহ রয়েছে নানা উপকরণ।
Advertisement
স্থানীয় ও উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৬ আগস্ট বিকেলে মুজিব শতবর্ষ পার্ক উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুর হোসেন ও ফরিদপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক অতুল সরকার। ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় দীর্ঘদিনেও কোনো বিনোদনকেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে গড়ে ওঠা পার্কটি গোটা উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়।
আরও পড়ুন: ৫০০ মিটার রাস্তার জন্য ঘুরতে হয় ৩ কিলোমিটার
এ ব্যাপারে মুজিব শতবর্ষ পার্কটিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত আনসার সদস্য রোকন উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, খুবই খারাপ অবস্থা। প্রায় চার মাস ধরে পার্কটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। চালুর পর প্রতিদিন শত শত মানুষের আগমন হতো। প্রবেশের জন্য টিকিটের মূল্য ছিল ২০ টাকা। পার্কটিতে বহিরাগতরা এসে উল্টাপাল্টা কাজ করতো। অসামাজিক কার্যকলাপে যুক্ত হতো। এখানকার অফিসাররা পরিবার নিয়ে বসবাস করতে বিব্রত হতেন। যার কারণে পার্কটি বন্ধ করে দেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ওই এলাকার স্কুলছাত্র তানিম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন,পার্কটি চালুর পর প্রায়দিনই যেতাম এবং খেলাধুলা করতাম। বেশ ভালো লাগতো। কয়েক মাস হলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তাই এখন আর ভেতরে যেতে পারি না, খেলাধুলাও করতে পারি না।
Advertisement
ফরিদপুর থেকে আগত দর্শনার্থী তুহিন জাগো নিউজকে বলেন, ফরিদপুর থেকে এখানে আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। শুনলাম এখানে ঘোরাফেরার জন্য ভালো একটি পার্ক আছে। এসে দেখি প্রধান গেটে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। কী আর করার। ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে দুঃখ নিয়ে ফিরে যাচ্ছি।
আরও পড়ুন: গভীর রাতে হাজির হয়ে বাল্যবিয়ে বন্ধ করলেন ইউএনও
স্থানীয় পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. এনায়েত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, গত কয়েক মাস ধরে পার্কটি বন্ধ রয়েছে। নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জেনেছি। তবে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে পার্কটি চালু রাখা যেতে পারে।
এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু তাহের জাগো নিউজকে বলেন, পার্কটি সুন্দর ও নয়নাভিরাম। আমি নিজেও পরিবার নিয়ে হাঁটতে এবং ঘুরতে যাই। ছোট পকেট গেট দিয়ে সীমিত পরিসরে চালু রয়েছে। জনসাধারণের জন্য বন্ধ রাখার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন।
আরও পড়ুন: কোরবানির হাটে উঠবে ফরিদপুরের ‘ডন’, দাম হাঁকছেন ২৫ লাখ
এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান জাহিদ জাগো নিউজকে বলেন, বহিরাগত উচ্ছৃঙ্খল কিছু ছেলে এখানে এসে আড্ডা দিতো। পাশাপাশি অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হতো। তাই সাময়িকভাবে পার্কটি সাধারণের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে পার্কটি আবার চালু করা হবে।
এন কে বি নয়ন/জেএস/এমএস