বিয়ে করা ও উত্তম জীবনসঙ্গী পাওয়া আল্লাহর রহমত। সামর্থ্য ও সময় হলেই দ্রুত বিয়ে করতে হয়। কিন্তু অনেকেরই বিয়ে হয় না। নিয়ের ক্ষেত্রে থাকে নানা অসঙ্গতি। যেসব নারী-পুরুষের বিয়ে হয় না বা অসঙ্গতির কারণে বিয়ে বিলম্ব হয়, তাদের জন্য রয়েছে কিছু করণীয় ও আমল। যেসব আমলে যেমন দ্রুত বিয়ে হবে তেমনি মিলবে উত্তম জীবনসঙ্গী। সেসব আমল কী?
Advertisement
এমন অনেক নারী-পুরুষ আছে যারা বিয়ে প্রস্তাব পায় ঠিকই কিন্তু সহজে বিয়ে হয় না। আবার এমন অনেক নারী-পুরুষ রয়েছে যারা বিয়ের প্রস্তাব না পেয়ে পুরোপুরি হতাশ হয়ে যায়। তাদের জন্য প্রাথমিক কিছু করণীয় হলো-
১. গুনাহের কাজ ছেড়ে দেওয়া।
২.সব সময় ইসতেগফার পড়াকে আবশ্যক করা।
Advertisement
৩. আগে নিজেকে দ্বীনদার হিসেবে গড়ে তোলা।
৪. আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করে নিজের মনের একান্ত চাওয়াগুলো তুলে ধরা। কেননা দোয়া ছাড়া ভাগ্য পরিবর্তন হয় না। হাদিসে পাকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
لاَ يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُ
‘দোয়া ছাড়া ভাগ্য পরিবর্তন হয় না।’ (তিরমিজি ২১৩৯)
Advertisement
এরপরই দ্রুত বিয়ে কিংবা উত্তম জীবনসঙ্গী পাওয়ার জন্য এই আমলগুলো নিয়মিত করে যাওয়া। তাহলো-
১. অতিদ্রুত হালাল, উত্তম ও সম্মানজনক রিজিক এবং উত্তম ও দ্বীনদার স্ত্রী কিংবা স্বামী পাওয়ার জন্য হজরত মুসা আলাইহিস সালামের সেই ঐতিহাসিক দোয়াটি বেশি বেশি পড়া-
رَبِّ إِنِّيْ لِمَا أَنْزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيْرٌ
উচ্চারণ : ‘রাব্বি ইন্নি লিমা আংযালতা ইলাইয়্যা মিন খাইরিং ফাক্বির।’
অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! নিশ্চয়ই আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহই নাজিল করবেন; আমি তার মুখাপেক্ষী।’ (সুরা কাসাস: আয়াত ২৪)
২. উত্তম জীবনসঙ্গী, নেককার সন্তান-সন্ততির জন্য আল্লাহ তাআলার শেখানো কোরআনি দোয়াটি বেশি বেশি পড়া-
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
উচ্চারণ : ‘রাব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াঝিনা ওয়া জুররিয়্যাতিনা কুররাতা আইয়ুনিও ওয়াঝআলনা লিলমুত্তাক্বিনা ইমামা।’
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের এমন স্ত্রী ও সন্তান দান করুন। যারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় আর আমাদেরকে (পুরুষদেরকে) মুত্তাকি লোকদের নেতা বানিয়ে দাও।’ (সুরা ফুরক্বান : আয়াত ৭৪)
৩. নিয়মিত সুরা আলাম-নাশরাহ অর্থসহ বেশি বেশি পড়া এবং হৃদয় দিয়ে তা উপলব্দি করা-
اَلَمۡ نَشۡرَحۡ لَکَ صَدۡرَکَ
আমি কি তোমার জন্য তোমার বক্ষ প্রশস্ত করিনি?
وَ وَضَعۡنَا عَنۡکَ وِزۡرَکَ
আর আমি নামিয়ে দিয়েছি তোমার থেকে তোমার বোঝা,
الَّذِیۡۤ اَنۡقَضَ ظَهۡرَکَ
যা তোমার পিঠ ভেঙ্গে দিচ্ছিল।
وَ رَفَعۡنَا لَکَ ذِکۡرَکَ
আর আমি তোমার (মর্যাদার) জন্য তোমার স্মরণকে সমুন্নত করেছি।
فَاِنَّ مَعَ الۡعُسۡرِ یُسۡرًا
সুতরাং কষ্টের সাথেই রয়েছে সুখ।
اِنَّ مَعَ الۡعُسۡرِ یُسۡرًا
নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই রয়েছে সুখ।
فَاِذَا فَرَغۡتَ فَانۡصَبۡ
অতএব যখনই তুমি অবসর পাবে, তখনই কঠোর ইবাদাতে রত হও।
وَ اِلٰی رَبِّکَ فَارۡغَبۡ
আর তোমার রবের প্রতি আকৃষ্ট হও। (সুরা ইনশিরাহ: আয়াত ১-৮)
৫. নিয়মিত সুরা ইউসুফ, সুরা নুর, সুরা মুমিনুন, সুরা লোকমান, সুরা ওয়াকিয়াহ, সুরা ইয়াসিন, সুরা লোকমান, সুরা মুলক, সুরা শুআরা এবং সুরা আল-বাকারাহ সাধ্যনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে পড়তে থাকা।
৬. নিয়মিত হাজতের নামাজ ও তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।
৭. বেশি বেশি গোপনে দান-সাদকা করা।
কখনও হতাশ হওয়া যাবে না। আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও দৃঢ়বিশ্বাস রাখা। আল্লাহর সাহায্য চাইতে থাকলে তিনি বান্দাকে সাহায্য করবেন। তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহর কর্তব্য হয়ে যায়। হাদিসে পাকে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
ﺛَﻠَﺎﺛَﺔٌ ﺣَﻖٌّ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻮْﻧُﻬُﻢْ: ﺍﻟﻤُﺠَﺎﻫِﺪُ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟﻤُﻜَﺎﺗَﺐُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻷَﺩَﺍﺀَ، ﻭَﺍﻟﻨَّﺎﻛِﺢُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻟﻌَﻔَﺎﻑَ
‘তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ তাআলার জন্য কর্তব্য হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলার রাস্তায় জিহাদকারী, চুক্তিবদ্ধ গোলাম যে তার মনিবকে চুক্তি অনুযায়ী সম্পদ আদায় করে মুক্ত হতে চায় এবং ওই বিয়েতে ইচ্ছুক ব্যক্তি যে (বিয়ে করার মাধ্যমে) পবিত্র থাকতে চায়।’ (তিরমিজি ১৬৫৫, নাসাঈ ৩২১৮)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব অবিবাহিত নারী-পুরুষকে উত্তম বিয়ে ও উত্তম জীবনসঙ্গী পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম