আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। একজন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সাবেক মন্ত্রী। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য। একই সঙ্গে দলটির বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান।
Advertisement
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি, বিএনপির আন্দোলন, আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গ নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথমটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।
জাগো নিউজ: যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিতে বিএনপির প্রতিক্রিয়া এমন যে, সরকার আরও চাপে পড়ছে যা আপনারা প্রত্যাশা করে আসছেন। আসলে যুক্তরাষ্ট্রের এমন ভিসানীতিতে দেশ-জাতি কী বার্তা পেল?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিতে প্রথমত, দেশ-জাতি হিসেবে আমরা অপমানবোধ করছি। বাংলাদেশের ভাবমূর্তির ক্ষতি করলো। অত্যন্ত লজ্জার বিষয়।
Advertisement
নির্বাচনে বাধা দিলে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা বাতিল করবে- এমন একটি বিধান কোনো জাতির জন্যই সুখকর নয়। আমেরিকার এই নীতিকে গণতান্ত্রিকমনা শান্তিকামী মানুষ সাধুবাদ জানাবে বটে। কিন্তু দেশের জন্য বিব্রতকর বলে মনে করি।
আরও পড়ুন>> গাজীপুরের নির্বাচন থেকে অনেক কিছুর বার্তা মিলেছে
জাগো নিউজ: আপনি বলছেন এই ভিসানীতি জাতির জন্য লজ্জার। কিন্তু বিএনপি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: বিএনপি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে না। তরুণ ভোটাররা ভোট দিতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করছে। তাদের মৌলিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে ক্রমাগতভাবে। আওয়ামী লীগ আর কত ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় থাকবে, এই প্রশ্ন নতুন প্রজন্মের কাছে। তরুণরা এখান থেকে মুক্তি চায়। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি এখানে হয়তো কিছুটা আশার বাণী হিসেবে কাজ করছে।
Advertisement
জাগো নিউজ: তরুণরা মুক্তির জন্য মাঠে নামেনি। যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থান কি মুক্তি দেবে তাদের?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: তরুণরা তো মাঠে নেমেছে। বিএনপির আন্দোলনে ৯০ শতাংশই তরুণ। লাখ লাখ তরুণ আমাদের সঙ্গে মাঠে নেমেছে। মানুষ তো প্রতিবাদ করছে। সরকার ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। বিচার বিভাগ পরাধীন এখন। এরপরেও মানুষ মাঠে নেমেছে সরকার পতনের দাবিতে।
জাগো নিউজ: নিজেদের সমস্যা নিজেদেরই সমাধান করার কথা। বাইরের দেশের নাক গলানো সমস্যা আরও জটিল করবে কি না?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: এই সরকার রাষ্ট্রের ক্ষতি করেই ফেলছে। দেশের মানুষের কথা তো শুনছে না। এরকম পরিস্থিতি বিশ্ব মহলও দেখতে চাইছে না। আর ক্ষতি হতে দিতে পারি না।
জাগো নিউজ: এই ক্ষতির পেছনে বিএনপিরও দায় আছে?
আরও পড়ুন>> ‘চোখ-কান খোলা রাখলেই গরিবের কান্না দেখতে পাওয়া যায়’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: বিএনপির দায় থাকবে কেন? আমরা তো ভোট ডাকাতি করিনি। আমরা তো রাতে ভোট করিনি। একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে আওয়ামী লীগ বের হতে পারেনি, যা স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সব সংস্কার বিএনপির আমলে। বিএনপিকে আপনি যদি গণতান্ত্রিক বিরোধীদল হিসেবে দেখতে চান, সেটা হবে সম্পূর্ণ ভুল।
দলীয় সরকারের অধীনে ভোট সুষ্ঠু হয় না বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি উঠে এসেছে। এই ব্যবস্থার প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য হলে বিএনপি তাতে সম্মান জানিয়েছে। দাবি মেনে নিয়েছিল। আমরা আইন পাস করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলাম।
জাগো নিউজ: তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে বিএনপিকে প্রচণ্ড চাপে ফেলেছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট। বিএনপিকে মানতে বাধ্য করেছিল।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: আমরা চাইলে আওয়ামী লীগের মতো নির্বাচন করে ফেলতে পারতাম।
জাগো নিউজ: ১৯৯৬ সালে আপনারাও এমন নির্বাচন করেছিলেন। টিকে থাকতে পারেননি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: আমরা আওয়ামী লীগের মতো টিকে থাকতে চাইনি। গুম, খুন, হত্যার মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা বাহাদুরির কিছু নয়।
জাগো নিউজ: গুম, খুনের ঘটনা বিএনপির আমলেও হয়েছে? এমনকি ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও আন্দোলনের নামে মানুষ পোড়ানোর অভিযোগ আছে আপনাদের বিরুদ্ধে?
আরও পড়ুন>> কূটনীতিকরা বিএনপির পরিকল্পনা জানতে চায়: শামা ওবায়েদ
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: না। আমাদের সময় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আমাদের আন্দোলনে কোনো হত্যার ঘটনা ঘটেনি। সব বের হয়েছে কারা করেছে এসব।
জাগো নিউজ: তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ কি না? কেন পারলেন না সরকারকে বাধ্য করতে?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: আমরা ব্যর্থ হইনি। আন্দোলন চলছে। আমাদের ন্যায্য আন্দোলনে মানুষ পুড়িয়েছে আওয়ামী লীগ, আমরা লগি-বৈঠা নিয়ে দিন-দুপুরে মানুষ হত্যা করিনি। আওয়ামী লীগ করেছে। আমাদের ন্যায্য আন্দোলনে মানুষ পুড়িয়েছে আওয়ামী লীগ।
জাগো নিউজ: আপনাদের আন্দোলন, মানুষ পোড়ালো আওয়ামী লীগ, বলছেন। তাহলে বিএনপির আন্দোলনে নিজেদের নিয়ন্ত্রণও ছিল না। এটিও তো ব্যর্থতা?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের মিছিলে এসে হামলা করছে। পুলিশ এসে গুলি করছে। বিএনপি তো কোনো সন্ত্রাসী দল নয়। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। আওয়ামী লীগ আমাদের কর্মসূচির পাশে এসে শান্তি সমাবেশ করার নামে অশান্তি সৃষ্টি করছে। কয়েক মাসের মধ্যে আমাদের ১৭ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে।
বিএনপি মাথা নিচু করে বুলেট এড়িয়ে চলছে। একে আপনি ব্যর্থ বলতে পারেন না। আমরা কোনো সংঘর্ষে যাচ্ছি না। আমাদের সফলতা লাখ লাখ মানুষ আমাদের কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছে। যাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ নেই, তারাই সন্ত্রাস করে। আমাদের আন্দোলন মানুষের জীবনের নিরাপত্তার দাবিতে, বেঁচে থাকার দাবিতে। আমাদের এই আন্দোলন জনগণের আন্দোলন।
জাগো নিউজ: আপনি কি মনে করেন সাধারণ মানুষ আপনাদের আন্দোলনে যোগ দিচ্ছে?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: আমাদের সমাবেশ দেখলেই সরকার হরতাল ঘোষণা করছে। কিন্তু লাখো জনতার অংশগ্রহণ বন্ধ করতে পারেনি।
জাগো নিউজ: জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিএনপির আন্দোলন নেই। সাধারণ মানুষও নেই আপনাদের সঙ্গে। যারা অংশ নিচ্ছেন, তারা বিএনপির নেতাকর্মীই।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলো লক্ষ্য করুন। লাখ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছে। সবাই যদি বিএনপির নেতাকর্মী হয়, তাহলে দেশের অধিকাংশ মানুষই এখন বিএনপি করেন। এটাই প্রমাণ করে।
জাগো নিউজ: আওয়ামী লীগ আপনাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মানলে কী ঘটবে?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা জারি হয়েছিল। এর বাইরে আর কোনো ব্যবস্থা বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেবে না।
জাগো নিউজ: যদি সরকার আগের মতো করেই নির্বাচন করে, বিএনপির কী করার আছে?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: গায়ের জোরে জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে একটা সময় পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবেন। এর পরে আর পারবেন না। বাঁধ ভেঙে সবাই ভেসে যাবে। যাদের ব্যবহার করে এই টিকে থাকা, একদিন তারাও চলে যাবে। জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আপনি বারবার শক্তি প্রদর্শন করে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। এখন সময় জনগণের।
এএসএস/এএসএ/জেআইএম