তীব্র গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের কারণে জনভোগান্তির পাশাপাশি ক্ষতির মুখে পড়েছে মেহেরপুরের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাত। বিদ্যুতের অভাবে জমিতে পর্যাপ্ত পানি দিতে পারছেন না চাষিরা। মাছচাষে হ্রাস পেয়েছে উৎপাদন। ক্ষতিতে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও।
Advertisement
কয়েকদিন ধরে তীব্র দাবদাহ চলছে মেহেরপুরে। ফলে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও জাতীয় গ্রিড থেকে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় বেড়েছে লোডশেডিং। গত দুই সপ্তাহ ধরে চলছে লোডশেডিং। অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে জেলার অন্তত ১৭০৭টি ছোট বড় ও মাঝারি ধরনের শিল্প কারখানা। সেইসঙ্গে বিপাকে পড়েছেন এসব শিল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার শ্রমিক।
বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়ায় এরইমধ্যে বন্ধের পথে ছোট ও মাঝারি ধরনের শতাধিক শিল্প কারখানা। এসব কারখানার মধ্যে রয়েছে হাসকিং ও ক্যাটল অ্যান্ড ফিস ফিড মিলস।
মেহেরপুর ডায়মন্ড অটোমেটিক রাইস মিলের ম্যানেজার মারুফ হোসেন তপু জানান, গত কয়েক সপ্তাহের লোডশেডিংয়ে আমাদের উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে। আগে আমাদের অটোমিলে ৫০ টন চাল উৎপাদন হতো। আর এখন সেই উৎপাদন ২০ টনে ঠেকেছে।
Advertisement
মেহেরপুর মড়কা বাজারের সাগর চাল কলের মালিক আব্বাছ আলী জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে চলছে লোডশেডিং। বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় মিলের কাজ বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি যারা মিলে কাজ করতো তাদেরও ছুটি দিয়েছি।
মেহেরপুর ষোলটাকার দেলোয়ার হাসকিং অ্যান্ড ফিসফিড মিলের মালিক দেলোয়ার হোসেন জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় তিনি মিলের কাজ বন্ধ করেছেন। মিলে ১০ জন শ্রমিক ছিল তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তারা এখন বেকার।
মেহেরপুর বিসমিল্লাহ অ্যাগ্রো ফিডের স্বত্তাধিকারী লাল্টু মিয়া জানান, বিদ্যুৎ সঠিকভাবে না পাওয়ায় তার মিলের তিনটি ইউনিটের একটি ইউনিট সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। উৎপাদন নেমেছে অর্ধেকে। তারপরও শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে।
একই কথা জানালেন মুক্তি ফ্লাওয়ার মিলের মালিক সোহেল রানা বাবু।
Advertisement
এছাড়া যেসব মিল কারখানা চালু রয়েছে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় সেগুলোর উৎপাদন নেমেছে একেবারে তলানিতে। উৎপাদন কম হলেও প্রয়োজনের তাগিদে শ্রমিক রাখতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় তার চাপ পড়ছে গ্রাহক পর্যায়ে।
রাইসমিল ব্যবসায়ী জিনারুল ইসলাম জানান, লোডশেডিংয়ের কারণে ঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে পারছি না। দৈনিক কাজের সময়ের তিন ভাগের দুই ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না।
অপরদিকে মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের মাছচাষি হাসান আলী জানান, বিদ্যুতের কারণে মাছের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। জেনারেটর চালিয়ে মাছচাষ করে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী মাছের উৎপাদন হচ্ছে না।
গোভিপুর গ্রামের কৃষক কামাল হোসেন জানান, দিনের বেলা কোনো কোনো দিন আট ঘণ্টাও লোডশেডিং হচ্ছে। ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহার করতে খরচ বেশি হয় বলে বৈদ্যুতিক পাম্প দিয়ে সেচ দিই। এখনতো সেটাও হচ্ছে না।
মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার আবু রায়হান জানান, জাতীয় পর্যায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতির ফলে লোডশেডিং হচ্ছে। মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিদ্যুৎ বিতরণের শতভাগ সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ প্রাপ্তি না থাকায় সাময়িক সময়ের জন্য লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি জানান।
আসিফ ইকবাল/এফএ/এমএস