দেশজুড়ে

দুই ইউনিয়নের সীমানায় খাল, সেতুর দুঃখ ঘুচছে না সাঁকোতে

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়ন ও গোগনগর ইউনিয়নের সীমানায় সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে ৮ হাজার বাসিন্দাদের। এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তর ঘুরে বেড়ালেও তাদের সেতুর আর দেখা মিলছে না। বর্তমানে তাদের প্রধান ভরসা হচ্ছে বাঁশের সাঁকো। কিন্তু সেতুর দুঃখ এ বাঁশের সাঁকোতে ঘুচছে না। নিত্যদিনই নানা রকম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

Advertisement

বিশেষ করে যারা দুর্বল প্রকৃতির মানুষ কিংবা গর্ভবতী নারীদের জন্য বাঁশের সাঁকো পাড়ি দেওয়া খুবই দুষ্কর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে ছোট ছোট শিশুরা সাঁকো পার হতে গিয়ে প্রায় সময়ই দুর্ঘটনার শিকার হয়। কিন্তু এ বিষয়ে যেন কোনো কর্ণপাত করছেন না সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি থাকলেও পরবর্তীতে তাদের আর দেখা মিলে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়নের মধ্যচর এলাকায় কয়েক হাজার বাসিন্দা বাস। এ এলাকায় কৃষকরা নানা রকম ফসল ফলান। এখানকার উৎপাদিত ফসল শহরসহ বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে থাকেন। এ এলাকায় আসা যাওয়া করতে হলে ধলেশ্বরী নদী সংযুক্ত খালের ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকো হতে হয়। যেটাকে আউয়ালের গুদারাঘাট বলা হয়ে থাকে।

এলাকাটির সঙ্গে আবার বক্তাবলী ইউনিয়নেরও কয়েকটি এলাকার বাসিন্দা সংযুক্ত আছেন। যাদের শহরে আসা যাওয়া করতে হলে এ বাঁশের সাঁকো পার হয়ে যেতে হয়। যার কারণে কয়েক হাজার বাসিন্দাদের নিত্যদিনের ভোগান্তি হচ্ছে এই বাঁশের সাঁকো। এই গুদারাঘাটের বাঁশের সাঁকো পার হয়েই শহরে যাতায়াত করতে হয় বিভিন্ন পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা মানুষজনকে।

Advertisement

আব্দুল খালেক নামে এক বাসিন্দা বলেন, আমরা দীর্ঘ দিন ধরে সেতুর জন্য কষ্ট করছি। আমাদের ছেলে মেয়েরা অনেক কষ্ট করে যাতায়াত করে। এই ব্রীজটার জন্য আমরা এ পর্যন্ত অনেকের কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। জনপ্রতিনিধিরা আমদের দিকে নজর দিলে অনেক উপকার হতো। প্রতিদিন প্রায় ৭- হাজার লোক এ সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। আমাদের একটা পাকা সেতু খুব দরকার। রাস্তার অবস্থাটিও ভালো না। আমরা বিভিন্ন জনের কাছে আবেদন করেও কোনো ফল পাচ্ছি না।

তিনি আরও বলেন, আমরা রোগী নিয়ে যাতায়াত করতে পারি না। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় গর্ভবতী নারীদের জন্য। আমরা বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলিয়ে থাকি। এখানে প্রায় কয়েক হাজার বিঘা জমি রয়েছে। ফসল নিয়ে আসা যাওয়া করতে অনেক কষ্ট করতে হয়। অনেকে মালামাল নিয়ে আসা যাওয়ার সময় পড়ে যায়। অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে ৬ টাকা ভাড়া দিতে হয়। মালামাল নিয়ে গেলে ৩০ থেকে ৪০ টাকা দিতে হয়।

ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকার বাসিন্দা আব্দুল কাদির বলেন, আলীরটেক ইউনিয়নে প্রায় কয়েক হাজার লোক শহরে গিয়ে কাজ করে। সকালে বিকেলে আসা যাওয়া করতে হয়। এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। সরকার আমাদের যে কোনো ব্যবস্থা করে দিক। যাতে করে একটা গাড়ি নিয়ে আসা যাওয় করতে পারি। ঘুরিয়ে গেলে অনেক টাকা খরচ করতে হবে। আমার মতো হাজার হাজার লোক যাতায়াত করে থাকে। এখানে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষজনের বসবাস আছে।

জাহানারা নামে এক গৃহিণী বলেন, বাচ্চাদের আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা ভুগতে হয়। বাচ্চাদের কিছু আনতে দিলে এখানে ফেলে চলে যায়।

Advertisement

মধ্যচর পঞ্চায়েত কমিটির নেতা হযরত আলী মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন ৪-৫ হাজার লোক যাতায়াত করেন। আমাদের দুর্ভোগ বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা এত খারাপ বলার বাইরে। একটি সেতু অনেক জরুরি। সেতু হলে মানুষের কল্যাণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। এ মধ্যচরের জন্য কেউ কিছু করে না। আমাদের অবহেলায় দিন যাপন করতে হচ্ছে। কেউ কোনো খবর নেয় না। গোগনগর ও আলীরটেক দুই ইউনিয়নের মাঝামাঝি হওয়ায় সেতুটা হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফিরোজ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, একটি সেতু করা তো সহজ বিষয় নয়, বললেই হয়ে যাবে। আমরা অনেকদিন ধরেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দুই ইউনিয়নের সীমানার কারণে হচ্ছে না নাকি অন্য কারণে হচ্ছে না তা আমাদের জানা নেই। এরপরও আমাদের চেষ্টা চলমান আছে।

এ বিষয়ে আলারটেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাকির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে সারা বিশ্বেই অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ যাচ্ছে। আর এ সময় সেতু করা সম্ভব হবে না। তবে যেহেতু এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী সেতু নির্মাণের জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাবো।

এসজে/জিকেএস