অর্থনীতি

কার্গো নিষেধাজ্ঞায় কৃষিপণ্যের বাজার হারানোর শঙ্কা

নিরাপত্তা ঘাটতিকে কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কার্গো বিমান প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাজ্য। এতে চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে পণ্য পাঠানো নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশের ফল ও সবজিসহ কৃষিপণ্যের রফতানিকারকরা। ফলে প্রায় সাড়ে ৪শ কোটি টাকার কৃষিপণ্যের বাজার হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন তারা।যুক্তরাজ্যের এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে বলে ইতোমধ্যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ।ফল ও সবজিসহ কৃষিপণ্য পচনশীল হওয়ায় নৌপথে পাঠানোর সুযোগ নেই। আর অন্য দেশে কার্গোতে তা পাঠালে বেড়ে যাবে খরচ। ফলে কার্গো নিষেধাজ্ঞার কারণে কৃষিপণ্যের রফতানিকারকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা।এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল অ্যালাইট প্রোডাক্ট এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্য, এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের মতো কৃষিপণ্য রফতানিকারকরা। তিনি বলেন, অন্য দেশে কার্গো নামিয়ে সেগুলো স্ক্যান করার ফলে যে খরচ পড়বে, তা কোনোভাবেই পোষাবে না। এই নিষেধাজ্ঞা আমাদের রাস্তায় বসিয়ে দেবে।এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত অর্থবছরে সবজি ও ফল রফতানি করে দেশের আয় হয়েছে ১৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার; যার ৪০ শতাংশই আয় হয়েছে যুক্তরাজ্যের বাজার থেকে, বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ প্রায় ৪শ কোটি টাকা। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে কৃষিপণ্য রফতানির সঙ্গে প্রায় ২০০টি প্রতিষ্ঠান জড়িত বলে জানান তিনি। এ প্রতিষ্ঠানগুলো ৭০ থেকে ৮০ ধরনের সবজি ও ফল রফতানি করছে।জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তৈরি পোশাকসহ অপচনশীল পণ্য বিকল্প পথে রফতানির সুযোগ থাকলেও সবজি ও ফলসহ কৃষিপণ্য রফতানি ভয়াবহ সঙ্কটে পড়বে। সবজি ও ফল রফতানির বড় বাজার যুক্তরাজ্য। এ বাজার হারালে রফতানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিমানে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ টন কৃষিপণ্য যুক্তরাজ্যে যায়। আকাশপথে পণ্য পাঠানোর সুযোগ না থাকলে রফতানিতে ধস নামবে। কারণ, অন্য পণ্যের মতো পচনশীল পণ্য নৌপথে পাঠানোর সুযোগ নেই। যুক্তরাজ্য নিষেধাজ্ঞা জারির পর শুক্রবার থেকে সবজি ও ফল রফতানি বন্ধে রয়েছে বলেও জানান জাহাঙ্গীর আলম।জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দেশটির আগে অর্ডার করা পণ্যের ডেলিভারি দিতে যেসব বিমানের ট্রানজিট পয়েন্টে স্ক্যান বাধামুক্ত তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এতে আমাদের ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী পণ্য পাঠানো না গেলে ক্রেতারা অন্য দেশ থেকে পণ্য আমদানি করবে। এতে করে আমাদের বাজার হারাবে।সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর বলেন, শুধুমাত্র বিমানবন্দরের এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও গাফিলতির কারণেই আজকের এ বিপর্যয়। কারণ, গত কয়েকমাস আগেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও স্ক্যানিং মেশিনের ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের বাধা ছিল। কিন্তু এত সময়পরও তার কোনো উন্নতি না হওয়ায় এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছে।তিনি বলেন, গত বছর আমরা এক হাজার কোটি টাকার পণ্য আকাশপথে বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছি। এর মধ্যে ৩৫ শতাংশই ইউরোপীয় ইউনিয়নে। অবশিষ্ট ৬৫ শতাংশ মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে।বাংলাদেশ থেকে কাকরোল, কাঁচামরিচ, বরবটি, শিম, লাউ, পটোল, কচু, লতি, করলা, পান ও বিভিন্ন ধরনের শাকসহ অর্ধশতাধিক সবজি এবং লেবু, আমড়া, চালতে, আম, কাঁঠালসহ ৭০ থেকে ৮০টি মৌসুমি ফল বৃটেনে রফতানি করা হয়।প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন অথোরিটির সঙ্গে বৈঠক করে কার্গোর নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়ে সংশোধনমূলক কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছিল। এই কর্মপরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করা হয়নি। ২৯ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে যুক্তরাজ্য দুটি সুপারিশ করে। তারা ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) সদস্য হিসেবে সংস্থাটি থেকে বাংলাদেশকে এয়ারপোর্টের নিরাপত্তা বৃদ্ধির বিষয়ে সহায়তা চাওয়ার পরামর্শ দেয়। এছাড়া তারা পলিসি, ম্যানেজমেন্ট ও অপারেশনের জন্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করারও পরামর্শ দেয়।এসব শর্ত পূরণে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশকে সময় দিয়েছিল যুক্তরাজ্য। কিন্তু নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ২৩ দিন আগেই নিরাপত্তার অজুহাত তুলে ঢাকা থেকে লন্ডনের সরাসরি ফ্লাইটে কার্গো বহন নিষিদ্ধ করে ব্রিটিশ পরিবহন দফতর। ৮ মার্চ যুক্তরাজ্য সরকার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ বিমানকে দেয়া এক চিঠিতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাজ্যের সরাসরি ফ্লাইটে কার্গো পণ্য পরিবহনের ওপর এই নিষেধাজ্ঞার কথা জানায়।এরআগে নভেম্বরে বাংলাদেশ থেকে কার্গো বিমানে পণ্য নেয়া বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় অস্ট্রেলিয়া।   এসআই/এনএফ/আরআইপি

Advertisement