যার যেমন আয়, সেই অনুপাতে জরিমানা- এমনটাই নিয়ম সুইজারল্যান্ড-ফিনল্যান্ডের মতো নর্ডিক দেশগুলোতে। সেখানে অভিযুক্ত যদি অতিধনী হন, তার জরিমানাও হবে মোটা অংকের। এই হিসাবে গাড়ির গতিসীমা লঙ্ঘনের দায়ে সম্প্রতি ১ লাখ ২১ হাজার ইউরো জরিমানা করা হয়েছে ফিনল্যান্ডের এক ব্যবসায়ীকে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
Advertisement
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে জানা যায়, ওই ব্যবসায়ীর নাম অ্যান্ডার্স উইক্লোফ। ৭৬ বছর বয়সী এ ধনকুবের নির্ধারিত গতিসীমার চেয়ে ৩২ কিলোমিটার বেশি বেগে গাড়ি চালিয়েছিলেন। এ জন্য তার আয়ের অনুপাত হিসাব করে জরিমানা করা হয় তাকে।
আরও পড়ুন>> রাস্তার গর্ত বন্ধ করায় লাখ টাকা জরিমানা!
উইক্লোফ নায়া আল্যান্ড নামে স্থানীয় একটি সংবাদপত্রকে বলেন, আমি বিষয়টির জন্য সত্যিই দুঃখিত। আমি গাড়ির গতি কমাতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু মনে হয় সেটি যথেষ্ট দ্রুত ঘটেনি।
Advertisement
তার দাবি, সড়কের সর্বোচ্চ গতিসীমা ‘হঠাৎ’ ৭০ কিলোমিটার/ঘণ্টা থেকে ৫০ কিলোমিটার/ঘণ্টায় নেমে আসে। ওই সময় তার গাড়ির গতি ছিল ৮২ কিলোমিটার/ঘণ্টা।
আরও পড়ুন>> হাত দিলেই উঠে আসছে সড়কের পিচ, ঠিকাদারের দাবি ‘জার্মান প্রযুক্তি’
ফিনল্যান্ডে সাধারণত ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের জন্য জরিমানা নির্ধারিত হয় অপরাধের তীব্রতা এবং অপরাধীর আয়ের ওপর ভিত্তি করে। ফিনিশ পুলিশ তাদের স্মার্টফোনের মাধ্যমে একটি কেন্দ্রীয় করদাতা ডেটাবেসের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্তের আয় পরীক্ষা করতে পারে।
দেশটিতে অপরাধীর দৈনিক নিষ্পত্তিযোগ্য আয়ের ওপর ভিত্তি করে ‘একদিনের জরিমানা’ (ডে ফাইন) গণনা করা হয়। সাধারণত দৈনিক নিট আয়ের অর্ধেকটা নিষ্পত্তিযোগ্য আয় হিসেবে বিবেচিত হয়। একজন চালক যত বেশি সীমা লঙ্ঘন করবে, তত বেশি দিনের জরিমানা দিতে হবে।
Advertisement
আরও পড়ুন>> চলন্ত বাইকে বান্ধবীকে কোলে বসিয়ে রোমান্স, অতঃপর কান ধরালো পুলিশ
ধনকুবের উইক্লোফ বছরে ৩৫ কোটি ইউরো আয় করা একটি হোল্ডিং কোম্পানির মালিক। গতিসীমা লঙ্ঘনের দায়ে তাকে আগে দু’বার জরিমানা করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে ৬৩ হাজার ৬৮০ ইউরো (৭৩ লাখ টাকা প্রায়), এর পাঁচ বছর আগে ৯৫ হাজার ইউরো (১ কোটি ৯ লাখ টাকা প্রায়) দিয়েছিলেন তিনি। উইক্লোফের ড্রাইভিং লাইসেন্স ১০ দিনের জন্য স্থগিতও ছিল। এসব কারণ তার সবশেষ জরিমানার অংক আরও বড় করতে ভূমিকা রেখেছে।
ফিনল্যান্ডে শুধু গতিসীমা লঙ্ঘনেই নয়, চুরি, সিকিউরিটিজ এবং আর্থিক লেনদেন আইন ভঙ্গসহ বিভিন্ন অপরাধের জন্য স্লাইডিং স্কেল (আয়ের অনুপাতে) জরিমানার বিধান রয়েছে। তাদের নীতি বলে, ট্যাক্স যেহেতু শ্রেণিভিত্তিক, তাই জরিমানাও সেভাবেই হওয়া উচিত। অর্থাৎ আপনি যত বেশি উপার্জন করবেন, তত বেশি অর্থ দেবেন।
আরও পড়ুন>> মোটরসাইকেলের চেয়ে পারমিটের খরচ বেশি যে দেশে
২০০২ সালে আনসি ভানজোকি নামে নোকিয়ার এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে ৫০ কিলোমিটার গতিসীমা এলাকায় ৭৫ কিলোমিটার গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর দায়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ইউরো (১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা প্রায়) জরিমানা করেছিল ফিনল্যান্ড পুলিশ।
তবে গতিসীমা লঙ্ঘনের দায়ে সর্বোচ্চ জরিমানার রেকর্ড এগুলোর কোনোটাই নয়, এমনকি ঘটনাটি ফিনল্যান্ডেও নয়। জানামতে, গতিসীমা সংক্রান্ত বিশ্বের সর্বোচ্চ জরিমানার রেকর্ডটি সুইজারল্যান্ডের।
আরও পড়ুন>> এক বাইকে সাতজন!
সেখানে বার্ন এবং লুসানের মধ্যে এক চালককে ২৯০ কিলোমিটার/ঘণ্টা বেগে মোটরসাইকেল চালানোর দায়ে দৈনিক ৩ হাজার ৬০০ সুইস ফ্রাঁ ধরে ৩০০ দিনের, অর্থাৎ প্রায় ১১ লাখ ইউরো জরিমানা করা হয়েছিল। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ইউরোপের এই দেশটিতেও ‘যেমন আয়, তেমন জরিমানা’র আইন রয়েছে।
কেএএ/