যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরা মনে করেন, বাংলাদেশে এখন ভয়াবহ মুদ্রা সংকট চলছে। ব্যবসা চালিয়ে যেতে মুদ্রার সরবরাহ বাড়াতে হবে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ সমস্যাও প্রকট হয়ে উঠেছে। গত ১৫ বছরে দেশে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র হয়েছে। সেগুলোতে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার। বিনিয়োগ বাড়িয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চলমান রাখতে হবে।
Advertisement
প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে আইটি যন্ত্রপাতির দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি। আইটি যন্ত্রপাতির দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। ফলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এছাড়া কর আইন স্বচ্ছ করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
বুধবার (৭ জুন) রাজধানীর বনানীর একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) আয়োজিত বাজেট-পরবর্তী প্যানেল আলোচনায় এসব কথা তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। প্যানেল আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহম্মদ আব্দুল মজিদ, পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ। অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করনে পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।
Advertisement
আরও পড়ুন>> অর্থনীতি ওপরে চকচকে কিন্তু গভীরতা কম: পরিকল্পনামন্ত্রী
প্যানেল আলোচনায় ব্যবসায়ীরা বলেন, বাজেটে রাজস্ব আহরণের জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত হয়নি। রপ্তানি আয় বাড়ানোর জন্য কেবল তৈরি পোশাক খাতের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। বরং রপ্তানি খাতের বহুমুখীকরণ করতে হবে। অন্যান্য শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নীতিগত সহায়তা দিতে হবে ও বিদ্যমান নীতিমালার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। একইসঙ্গে দেশের আয়কর, করছাড়, কর্তন এসব ক্ষেত্রে একাধিক নীতির বদলে অটোমেশন করতে হবে। সেইসঙ্গে করজালের আওতা বাড়াতে হবে। কর আইনের ক্ষেত্রে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
মুক্ত আলোচনায় সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, কয়েক বছরে আমরা বিদ্যুতের জন্য অনেক পাওয়ার প্ল্যান্ট বানিয়েছি। কিন্তু সেখানে বড় বিনিয়োগ হয়নি। এখন সেগুলোতে বড় বিনিয়োগ করে চালিয়ে নিতে হবে। দেশে এখন বড় সংকট মুদ্রা সরবরাহের। এ সংকটে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য মুদ্রা সরবরাহ বাড়াতে হবে। দেশের অনেক বড় দুর্বলতা কর আদায়ে। তাছাড়া এনবিআরের কর জটিলতার কারণে অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী দেশে বিনিয়োগে অনাগ্রহী।
অ্যামচেম সভাপতি বলেন, আইটি পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। আইটি ছাড়া বাংলাদেশ অচল। যদি সফটওয়্যার, কম্পিউটারের দাম বেড়ে যায়, তাহলে তো উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলে তো ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সেই হিসেবে এটা ব্যবসায়ী বান্ধব হয়নি।
Advertisement
কর আইনের বিষয় তিনি বলেন, জাতীয় আয়কর আইন কী হচ্ছে, সেটা তো কেউ জানেন না। এটা সবাইকে জানাতে হবে। স্বচ্ছ ও সহজ করতে হবে এবং অটোমোশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
মূল প্রবন্ধে আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিশ্ববাজারে যখন দাম কমছে, তখনো দেশের বাজারে দাম কমছে না। উল্টো মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। সরকারের এখন মূল চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। এ পরিস্থিতিতে সেটা কঠিন হবে। সরকার বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করেছে, সেটা অর্জন করা কঠিন হবে। ডলার বিক্রি ও আমদানি কমিয়ে ডলারের রিজার্ভ ধরে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এ মুহূর্তে অর্থনৈতিক চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ভয়ংকর মূল্যস্ফীতি ও বিদ্যুতের সমস্যা। এটা মোকাবিলা করতে হবে। মোকাবিলার জন্য কিছু কৌশল ঠিক করা হয়েছে। খুব দ্রুতই বাস্তবায়ন করতে হবে। কৌশলগুলোর মধ্যে প্রধান হলো- ডলার বাড়ানো। বেশি পরিমাণে মার্কিন মুদ্রা আয় করতে হবে ও জমাতে হবে।
এমওএস/এএএইচ/এএসএম