দেশজুড়ে

একবছর ধরে বন্ধ ড্রেনের কাজ, ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের রাজবাড়ী পৌরসভা অংশের রাস্তার উভয়পাশে ড্রেন নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে প্রায় এক বছর ধরে। কিছু অংশের কাজ হলেও বসানো হয়নি ঢাকনা। ওই অংশে বের হয়ে আছে রড। ফলে রাস্তার পাশে খোলা ড্রেন থাকায় বাঁশ-কাঠের মাচা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে পথচারী, ব্যবসায়ীসহ অন্যদের।

Advertisement

এ অবস্থায় দ্রুত কাজ শেষ করার দাবি স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের। অন্যথায় যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।

রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান উন্নতি ও প্রশস্তকরণ প্রকল্পের আওতায় রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের তিনটি অংশে ভিন্নভাবে দরপত্র আহ্বান করা হয়। তিন অংশের মোট চুক্তিমূল্য প্রায় ৩০২ কোটি ২৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। এরমধ্যে শহরের শ্রীপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে চরলহ্মীপুর আহমদ আলী মৃধা কলেজ এলাকা পর্যন্ত চার কিলোমিটার রাস্তা চারলেনে উন্নীত করা হয়।

এই কাজের দায়িত্ব পায় স্পেকটা ইনঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ও ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন। ২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৬ জুন কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। এছাড়া রাস্তার দুইপাশে ড্রেন নির্মাণ করা হবে। রাস্তার উত্তরপাশে ড্রেন হবে চার কিলোমিটার এবং দক্ষিণপাশে ড্রেন পাশে হবে পৌনে পাঁচ কিলোমিটার। ড্রেন নির্মাণকাজের যৌথভাবে দায়িত্ব পায় স্পেকটা ইনঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ও ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন এবং ওয়েস্টার কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড শিপিং ও রানা বিল্ডার্স।

Advertisement

রাস্তাসহ পুরো কাজের ব্যয় ধরা হয় ৬০ কোটি ২০ লাখ ৪ হাজার টাকা। এই কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয় মোট পাঁচবার। রাস্তার কাজ সম্পন্ন হলেও ড্রেনের কাজ বাকি প্রায় দুই তৃতীয়াংশ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মূল টাকার মধ্যে ৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার বিল তুলে নিয়েছে। মেয়াদ শেষের পরেও কাজ বন্ধ রয়েছে প্রায় এক বছর।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের শ্রীপুর বাস টার্মিনাল থেকে বড়পুল মোড় পর্যন্ত উভয়পাশে রাস্তার মূল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। রাস্তার মাঝখানে সড়ক বিভাজক স্থাপনও সম্পন্ন হয়েছে। শহরের ফায়ার সার্ভিস স্টেশন এলাকা থেকে আহম্মদ আলী মৃধা কলেজ পর্যন্ত ড্রেনের কাজ বন্ধ রয়েছে। মাঝেমধ্যে কিছু স্থানে ড্রেনের কাজ হলেও দেওয়া হয়নি ঢাকনা বা স্লাব, বের হয়ে রয়েছে রড। আবার অনেক অংশে এখনো মাটি খোঁড়াই হয়নি।

ভবানীপুরের বাসিন্দা তসলিম আহমেদ তপন বলেন, দীর্ঘসময় ধরে এই কাজটি চললেও এখনো পুরোপুরি কাজ সম্পন্ন করা হয়নি। ড্রেনের মুখ মাঝেমাঝে বন্ধ। কোথাও ড্রেনের ওপর স্লাব দেওয়া হয়নি। আবার কোথাও একেবারেই কাজ করা হয়নি। কর্তৃপক্ষের সঠিক তদারকি ও গাফিলতির কারণেই এমনটি হয়েছে। খোলা ড্রেনের পাশে রড বেরিয়ে থাকায় মাঝেমধ্যেই ছোট ছোট দুর্ঘটনা ঘটছে। দ্রুত কাজটি শেষ না হলে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

পুলিশ লাইনস এলাকার বাসিন্দা নাছির বলেন, ড্রেনের কাজ বন্ধ থাকায় বাড়িতে আসা-যাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। তাছাড়া ড্রেন খোলা থাকায় ময়লা-আবর্জনায় ভরে যাচ্ছে। ফলে ড্রেন নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এছাড়া উন্মুক্ত ড্রেন থাকায় দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা রয়েছে।

Advertisement

সড়কের পাশের ব্যবসায়ী মিলন হুসাইন, মজিবর রহমান, সুজন, আবু দাউদসহ কয়েকজন জানান, দীর্ঘ প্রায় এক বছর আগে তাদের দোকানের সামনে ড্রেন করলেও ঢাকনা দেওয়া হয়নি, রড় বেড়িয়ে রয়েছে। এতে তাদের চলাচল ও ব্যবসায় ব্যাঘাত ঘটছে। নিজেদের সুবিধার জন্য বাঁশ-কাঠ দিয়ে দোকানের সামনে মাচা তৈরি করে নিয়েছেন। তারপরও মাচা ভেঙে কয়েকবার কর্মচারীরা নিচে পড়ে আহত হয়েছেন। রাস্তার দুইপাশে ড্রেন নির্মাণের কথা থাকলেও একপাশে এখনো কাজই শুরু হয়নি। ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও পথচারীসহ সবার সুবিধার জন্য দ্রুত ড্রেনের কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানান তারা।

রিকশাচালক আব্দুর রহিম খান ও শহিদুল জানান, ড্রেনের মুখ খোলা থাকায় তাদের রিকশা চালাতে খুব সমস্যা হয়। তাছাড়া রড় বেড়িয়ে আছে। রাস্তা দিয়ে দ্রুত গতির অনেক গাড়ি চলাচল করে, সাইড দিতে গিয়ে ভয় লাগে। দ্রুত ড্রেনটির কাজ শেষ করা উচিত।

রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নওয়াজিস রহমান বিশ্বাস বলেন, চারলেনের কাজ শেষ হয়েছে। শুধু অসমাপ্ত আছে ড্রেনের কাজ। ওই কাজের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে যা প্রক্রিয়াধীন। দ্রুত অনুমোদন পেলে বাকি কাজ শেষ করা হবে। এরমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে স্লাব বসিয়ে দেওয়া হবে। তাছাড়া আবর্জনা নিয়মতি পরিষ্কার করা হয়।

ড্রেনের এখনো প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ বাকি বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

এমআরআর/জিকেএস