দশ বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে সেতুটি। গত বছর একাংশ ধসেও পড়েছে। এরপরও জোড়াতালি দিয়ে কোনোমতো টিকিয়ে রাখা হয়েছে। তার ওপর দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছেন ২০ গ্রামের লাখো মানুষ। জরাজীর্ণ এই বেইলি সেতুটি আবারো যেকোনো সময় ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
Advertisement
প্রায় দুইশো বছরের ঐতিহ্যবাহী মানিকগঞ্জের ঘিওর হাটের পাশেই এই বেইলি ব্রিজের অবস্থান। ঘিওর-জিয়নপুর সড়কের ইছামতি নদীর ওপর ব্রিজটি ৩১ বছর আগে নির্মাণ হয়। জরাজীর্ণ সেতুটি ২০১২ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বিকল্প না থাকায় তার ওপর দিয়েই ছোট যানবাহন ও মানুষ যাতায়াত করছে।
ঘিওর এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯২ সালে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ইছামতী নদীর ওপর ওই বেইলি ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিনের বাজার ছাড়াও বুধবার ঘিওর সাপ্তাহিক হাট বসে। ব্রিজ দিয়ে ভারি যানচলাচল বন্ধ থাকায় এই হাটে পণ্য আনা নেওয়া খুবই অসুবিধা হচ্ছে। এছাড়া সেতুর পশ্চিমপাড়ে রয়েছে সরকারি খাদ্য গুদাম। এই গুদামেও সরাসরি ধান, চাল, গমসহ বিভিন্ন মালামাল আনা-নেওয়া করা যাচ্ছে না। পাশেই রয়েছে একটি সরকারি কলেজ, তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কবরস্থান ও শশ্মাণ। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সেতুটি পারাপার করতে হয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, হাটের ব্যবসায়ীসহ লাখো মানুষকে।
Advertisement
স্থানীয় বাসিন্দা আওয়াল মিয়া জানান, যাতায়াতের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর আগে দুই দফায় ধসে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে জোড়াতালি দিয়ে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ছোট গাড়ি ও মানুষের যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু সেতুর সামনের অংশে আবারো ফাটল ধরেছে। পিলারের পাশ থেকে মাটি সরে গেছে। বর্ষার আগেই যদি সেতুটি মেরামত করা না হয় তাহলে আবারো ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঘটতে পারে।
আকবর হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী জানান, প্রতিবছর ব্রিজটি শুধু জোড়াতালি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এটি পুনর্নির্মাণ করা জরুরি। অনেকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে এখানে একটি নতুন ব্রিজ হবে। কিন্তু বাস্তবায়ন দেখছি না। মানুষের দুর্ভোগ ও ভোগান্তি লাঘবে অতিদ্রুত একটি নতুন ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হামিদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বেইলি ব্রিজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাশেই সরকারি খাদ্য গুদাম রয়েছে। যদি কোনো কারণে সেতুটি আবারো ধসে পড়ে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায় তাহলে পুরো উপজেলাতেই খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া এই সেতু দিয়েই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল আনা নেওয়া করেন। তাই এখানে একটি নতুন সেতু নির্মাণের জন্য তাদের পক্ষ থেকেও তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। ঘিওর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. সাইফুর রহমান হৃদয় জানান, গত বন্যায় সেতুটির একপাশ ধসে পড়ে। জরুরি ভিত্তিতে তা মেরামত করা হয়। কিন্তু দুর্ঘটনা এড়াতে ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সেতুটি নির্মাণের জন্য নকশা ও স্টিমেটসহ যাবতীয় তথ্যাবলি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করা হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটি নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যাবে।
এফএ/এএসএম
Advertisement