ধর্ম

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের ইবাদত ‘হজ ও ওমরা’

হজ ও ওমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের ইবাদত। এ জন্য প্রয়োজন পূর্ণভাবে হজ ও ওমরা সম্পাদন করা। কোরআনুল কারিমে এসেছে, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ ও ওমরা পূর্ণভাবে সম্পাদন কর।’ হাদিসের নির্দেশনাও এমনই।

Advertisement

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো- সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞাসা করা হলো- এরপর কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞাসা করা হলো- এরপর কোনটি? তিনি বলেন, হজ্জে মাবরুর (কবুলযোগ্য হজ)।’ (বুখারি)

হজ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ। হজ শব্দের অর্থ সংকল্প করা বা ইচ্ছা করা। এ শব্দটি কোরআনুল কারিমে ১০২ বার উল্লেখ রয়েছে। এটি আর্থিক এবং শারীরিক ইবাদত। তাই আল্লাহ তাআলা আর্থিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক ব্যক্তিকে পরিপূর্ণভাবে হজ সম্পাদন করার নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে-

وَلِلّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ الله غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ

Advertisement

‘আর এ ঘরের হজ করা সে সব মানুষের জন্য অবশ্যক কর্তব্য; যারা সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য রাখে । আর যে প্রত্যাখ্যান করবে সে জেনে রাখুক- আল্লাহ সারা বিশ্বের কোনো কিছুরই পরোয়া করেন না।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৯৭)

তাই মুসলিম উম্মাহর সক্ষম ব্যক্তিদের ইখলাসের সঙ্গে হজ আদায় করতে হবে। কিন্তু যদি তা ইবাদত ছাড়া অন্য কোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য পোষণ করে আদায় করা হয় তবে কখনই তা আল্লাহ তাআলার দরবারে কবুল হবে না। বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি বা সওয়াবের পরিবর্তে গুনাহগার হতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاء وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ

তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম।’ (সুরা বাইয়্যেনাহ : আয়াত ৫)

Advertisement

فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاء رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا

অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ১১০)

পক্ষান্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তম ও একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ সম্পাদনকারীকে গুনাহ থেকে ক্ষমা পাওয়ার সুসংবাদ দিয়েছেন এভাবে-

‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোনো লোক যদি হজ করে এবং তাতে কোনো রকম অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ না করে থাকে; তাহলে তার আগের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (তিরমিজি)

হজ পালনের জন্য প্রত্যেক হাজিকে পবিত্র কাবা শরিফ তওয়াফের পাশাপাশি সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে সাঈ করতে হয়। আর ঐতিহাসিক এই দুই পাহাড় ও তা প্রদক্ষিণ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-

إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَآئِرِ اللّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَا وَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَإِنَّ اللّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ

নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তাআলার নিদর্শন গুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কাবা ঘরে হজ বা ওমরাহ পালন করে; তাদের পক্ষে এ দুটিতে (কাবা শরিফ ও সাফা-মারওয়া পাহাড়) প্রদক্ষিণ করাতে কোনো দোষ নেই। বরং কেউ যদি স্বেচ্ছায় কিছু নেকির কাজ করে, তবে আল্লাহ তাআলার অবশ্যই তা অবগত হবেন এবং তার সে আমলের সঠিক মুল্য দেবেন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৮)

হজের অন্যতম কাজ

হজ ও ওমরা পালনকারীর ইহরাম বাঁধা এবং তালবিয়া পড়া আবশ্যক। অনেকে ইহরাম বাঁধে ঠিক কিন্তু না পারার কারণে তালবিয়া সঠিকভাবে পড়তে পারে না। তাই তাদের তালবিয়া শিখে নেওয়া জরুরি।

১. ইহরাম বাঁধা

২. তালবিয়া পড়া। বাংলায় উচ্চারণ ও অর্থসহ তালবিয়া হলো-

i) لَبَّيْكَ ا للّهُمَّ لَبَّيْكَ ii) لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ

iii)     اِنَّ الْحَمدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ

iv) لاَ شَرِيْكَ لَكَ

তালবিয়ার উচ্চারণ-

i) লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, ii) লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক,

iii) ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নিমাতা লাকা ওয়ালমুল্‌ক,

iv) লা শারিকা লাক।

তালবিয়ার অর্থ-

i) আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত! ii) আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোন অংশীদার নেই।

iii) নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার।

iv) আপনার কোন অংশীদার নেই।

৩. আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা।

৪. মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করা।

৩ মিনার জামরাতে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা।

৪. দমে শোকর বা কোরবানি করা।

৫. মাথা মুন্ডন করা। এরপর

৬. কাবা ঘর তওয়াফ করা।

মনে রাখতে হবে

এ সবের মধ্যে সর্বোত্তম আমল হচ্ছে- তালবিয়া তথা লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক পাঠ করা। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন কাজটি সর্বোত্তম? তিনি বলেন, উচ্চঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করা এবং কোরবানির দিন কোরবানি করা।’ (ইবনে মাজাহ)

তাছাড়া পুরুষের পাশাপশি সামর্থ্যবান নারীদেরও হজ পালন করা ফরজ। তবে নারীদের জন্য হজ আদায়ের ক্ষেত্রে মাহরাম পুরুষ থাকা শর্ত। নারীর জন্য মাহরাম পুরুষ (বৈধ পুরুষ) সঙ্গে নিয়ে হজ পালন করাকে শর্ত করা হয়েছে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের জন্য হজ পালন করা কে সর্বোত্তম জিহাদ বলে ঘোষণা করেছেন। হাদিসে এসেছে-

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! জিহাদকে আমরা সর্বোত্তম আমল মনে করি। কাজেই আমরা কি জিহাদ করবো না? তিনি বললেন, না; বরং তোমাদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হল, হজ্জে মাবরূর (কবুল হজ)।’ (বুখারি)

হজ ও ওমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। তাই কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথভাবে হজ আদায় করা। যখনই হজ কিংবা ওমরার সুযোগ আসবে; তখনই সামর্থ্যবানদের হজ ও ওমরা করা জরুরি। এতে মিলবে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে হজ ও ওমরা সম্পাদনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম