তীব্র গরমে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে লালমনিরহাটের জনজীবন। ভ্যাপসা গরম আর অসহনীয় লোডশেডিংয়ে নাজুক হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক কাজকর্ম। প্রচণ্ড গরম আর ঘরে লোডশেডিংয়ের কারণে হাঁপিয়ে উঠছে লোকজন। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন খেটে খাওয়া মানুষ।
Advertisement
কয়েকদিনের টানা তাপপ্রবাহ ও গরমে লালমনিরহাট বুড়িমারী স্থলবন্দরের লোড-আনলোড কাজে নিয়োজিত প্রায় তিন হাজার শ্রমিকও আছেন কষ্টে। তারা একটানা কাজ করতে না পারায় ট্রাক লোড-আনলোডে যেমন ধীরগতি দেখা দিয়েছে, তেমনি কমে গেছে শ্রমিকদের আয়ও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আসছে গম, ভুট্টা, ভুসি, হার্ডবোর্ড, পেঁয়াজ ও পাথর। গরম ও তাপপ্রবাহে স্থলবন্দরের শ্রমিকরা এক ঘণ্টা কাজ করার পর বিশ্রাম নিচ্ছেন। অনেক শ্রমিক কাজ না করে গাছতলায় বসে সময় কাটাচ্ছেন। এতে কাজের ধীরগতি দেখা দিয়েছে। সঠিক সময়ে ভারতীয় ট্রাকগুলো মালামাল খালাস করে ফিরে যেতে পারছে না। আবার বাংলাদেশি ট্রাকগুলোও সঠিক সময়ে লোড করতে না পেরে বন্দরে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকছে। এদিকে, টানা তাপপ্রবাহে কাজ করে কয়েকজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
বুড়িমারী স্থলবন্দরের কাজে নিয়োজিত ইমদাদুল হক বলেন, আগে একটি ভুট্টাবোঝাই ট্রাক আনলোড করতে লাগতো দুই থেকে তিন ঘণ্টা। এখন সময় লাগছে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। তীব্র গরমের ফলে দিনদিন শ্রমিকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
Advertisement
ট্রাক লোড-আনলোড করা শ্রমিক শফিকুল বলেন, একসময় সারাদিন স্থলবন্দরে কাজ করে পেতাম ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। বর্তমানের বন্দরে ব্যবসা-বাণিজ্য কম ও তীব্র গরমের কারণে কাজকাম কমে গেছে। এখন দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ইনকাম করতে কষ্ট হয়। পরিবারের কথা চিন্তা করে কষ্ট হলেও কাজ করতে হয়। একদিন কাজ না করলে পরিবারের মুখে খাবার জোটে না।
ট্রাকচালক আজিজুল ইসলাম বলেন, এই গরমে শ্রমিকরা সময়মতো ট্রাকলোড করতে পারছে না। আমরাও ছেড়েও যেতে পারছি না। তাই দীর্ঘক্ষণ ধরে বুড়িমারী স্থলবন্দরে বসে আছি। এদিকে রাস্তা গরম থাকায় লোড গাড়ি নিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে।
বুড়িমারী স্থলবন্দরের আমদানি ও রপ্তানিকারক কমিটির সহ-সভাপতি বকুল হোসন বলেন, এই গরমে শ্রমিক থেকে শুরু করে সবার কষ্ট। এই গরমের মধ্যেও শ্রমিকরা কাজ করছেন পেটের দায়ে। লোড-আনলোড কাজে দেরি হলেও করার কিছুই নেই।
বুড়িমারী স্থলবন্দরের লোড-আনলোড শ্রমিকের সভাপতি সফর উদ্দিন বলেন, স্থলবন্দরে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার শ্রমিক কাজ করেন। কয়েকদিনের টানা গরম উপেক্ষা করে মাঝে মাঝে একটু করে বিশ্রাম নিয়েই কাজ করছেন তারা। অনেক শ্রমিকই গরমে কাজ করে অসুস্থ হয়ে বাসায় অবস্থান করছেন। এতে স্থলবন্দরে লোড-আনলোডে বিলম্ব হচ্ছে। এটা ব্যবসায়ী থেকে সবাইকে মেনে নিতে হবে।
Advertisement
বুড়িমারী স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুজ্জামান সায়েদ বলেন, কয়েকদিনের টানা তাপপ্রবাহ স্থলবন্দরেও প্রভাব ফেলেছে। তীব্র রোদ আর গরম উপেক্ষা করে শ্রমিকরা কাজ করছেন।
তিনি আরও বলেন, এদিকে ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকটের কারণে আমদানি কম হচ্ছে। বন্দরে পাঁচ থেকে সাতশ ব্যবসায়ীর মাঝেও দুই-একটা এলসি পার হচ্ছে।
এমআরআর/জিকেএস