‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ নিয়ে চালকদের মাঝে অপপ্রচার চালানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ নিয়ে চালকদের মাঝে যে অপপ্রচার রয়েছে, তা হলো- আমি চালকদের নাকি ফাঁসি চেয়েছি, ঘাতক বলেছি। তাদের (চালক) ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্যই নাকি এ আইনের প্রস্তাব করেছি। বাস্তবতা হলো- এটা মোটেও সত্য নয়। সম্পূর্ণ মিথ্যা ও গুজব।’
সোমবার (৫ জুন) দুপুরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের হলরুমে অনুষ্ঠিত নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর উদ্যোগে গাড়িচালকদের নিয়ে ‘যত গতি তত ক্ষতি’ শীর্ষক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা, প্রতীক্ষার পর বিভিন্ন মহলের মতামত, বহু গবেষণা ও ব্যাপক পরিসরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ পেয়েছে সবাই। কাউকে শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে এ আইন করা হয়নি। এ আইনে উল্লেখ আছে, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে হত্যা করে, তাহলে তাকে এ আইনে নয়, অন্য আইনে নিয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্তে যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে জড়িতকে শাস্তি দেওয়া হবে। এ আইনে বলা হয়েছে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী পক্ষ। একটি দুর্ঘটনা ঘটলে তদন্ত করা হবে, তদন্তের পর যারা দায়ী হিসেবে প্রমাণিত হবেন, তাদেরই শাস্তি হবে।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের আইন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। সবসময় আমি আপনাদের (চালক) পক্ষে, নিরাপদ সড়কের পক্ষে কাজ করেছি। সরকারের কাছে ১১১টি সুপারিশ করেছি। এর মধ্যে আপনাদের (চালকদের) সন্তানদের লেখাপড়া, চিকিৎসা সেবাসহ নানান বিষয় রয়েছে। আপনারা সড়কে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের যে দাবি করেছেন এটাও আমার সুপারিশে রয়েছে। আমি প্রতি ৩০ কিলোমিটার অন্তর অন্তর কোমা সেন্টার স্থাপনেরও দাবি করেছি।’
অভিনয় জীবনের সঙ্গে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের যোগসূত্র ব্যাখ্যা করে এ চিত্রনায়ক বলেন, ‘সিনেমার পর্দায় যেমন ভিলেন আছে, সামাজিক আন্দোলন করতে গিয়েও তেমন ভিলেন পেয়েছি। আমি যখন নায়কের চরিত্রে অভিনয় করতাম, তখন যেমন আমার পেছনে ভিলেন লেগে থাকতো, এখনো আমার পেছনে ভিলেনরা রয়েছেন। যারা ব্যক্তিস্বার্থে আমাকে আপনাদের (চালকদের) শত্রু বানাচ্ছেন।’
নিসচার কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হক কামালের সভাপতিত্বে ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মিশুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল আহসান।
সেমিনারের প্রথম সেশন শুরু হয় সকাল ১০টায়। এ সময় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে কিছু সংখ্যক পরিবহন শ্রমিক এ সেমিনারে অংশগ্রহণ করতে অনীহা প্রকাশ করেন। তাদের ধারণা ইলিয়াস কাঞ্চন পরিবহন শ্রমিকের শত্রু। ইলিয়াস কাঞ্চন শুধু চালকদের ফাঁসি চান।
Advertisement
এ কারণে নিসচার আয়োজনে কোনো সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে তারা অংশগ্রহণ করতে রাজি নন। পরে পরিবহন সেক্টরের নেতাদের সহযোগিতায় শ্রমিক ও চালকরা হলরুমে প্রবেশ করেন। তাদের বক্তব্য তারা নিসচা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনের সামনে তুলে ধরেন। সবার বক্তব্য শোনার পর সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ইলিয়াস কাঞ্চন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন ওসমানীনগর উপজেলার চেয়ারম্যান শামীম আহমদ, সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মো. সেলিম, এসএমপির সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) আতাহারুল ইসলাম, বিআরটিএর সিলেটের উপ-পরিচালক মো. শহিদুল আযম, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহিত চৌধুরী, জেলা পুলিশের ডিআইও মো. নুরুল ইসলাম, সিলেট জেলা বাস মিনি বাস কোচ ও মাইক্রোবাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ময়নুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুহিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর রাজন, নিসচা সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি এম ইকবাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাদি পাবেল প্রমুখ।
ছামির মাহমুদ/এএএইচ