ইউরোপে পরিবেশবাদী আন্দোলনে সম্প্রতি সাড়া জাগিয়েছে ‘লাস্ট জেনারেশন’ নামে একটি সংগঠন। তবে তাদের বিতর্কিত কিছু কর্মসূচি জনমনে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে লাস্ট জেনারেশনের কর্মীদের। তবে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে জাতিসংঘ।
Advertisement
সাধারণত রাস্তা বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শুয়ে-বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করে দেন ইউরোপের এই পরিবেশবাদী আন্দোলনকারীরা। তাতে বন্ধ হয়ে যায় যানচলাচল। কোথাও পরিবেশবাদী হয়েও করেন পরিবেশের ক্ষতি। অনেক মূল্যবান শিল্পকর্মেরও ক্ষতি করেছেন তারা।
জার্মানিতে লাস্ট জেনারেশনের সদস্যরা আন্দোলন করতে গিয়ে হঠাৎ কোনো রাস্তায় বসে বা শুয়ে পড়ার পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন। এভাবে রাস্তা আটকে তারা মূলত গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে জ্বালানি সাশ্রয়ে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে চান।
জার্মানির মতো ইতালিতেও বিতর্কিত কর্মসূচি দিয়ে চাপের মুখে পড়েছেন লাস্ট জেনারেশনের সদস্যরা। পরিবেশ রক্ষার দাবি আদায়ে তাদের কর্মসূচি ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। গত সপ্তাহে রোমের ট্রেভি ঝরনায় কয়লার গুঁড়া মেশানো পানি ঢেলে দেয় লাস্ট জেনারেশন। এসময় তাদের কর্মীদের হাতে ব্যানারে লেখা ছিল, ‘জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি অবিলম্বে বন্ধ করো’।
Advertisement
ট্রেভি ঝরনা স্বচ্ছ পানিতে কালো পানি ঢেলে দেওয়ায় লাস্ট জেনারেশনের কঠোর সমালোচনা করেছেন রোমের মেয়র রবার্তো গুয়ালতিয়েরি। তিনি জানান, পরিবেশকর্মীদের ওই কর্মসূচির কারণে এখন তিন লাখ লিটার পানি ঝরনা থেকে সরিয়ে আবার নতুন করে ঢালতে হবে। এ কাজে প্রচুর জ্বালানি খরচ হবে জানিয়ে মেয়র প্রশ্ন রাখেন, পানি দূষিত করে জ্বালানি খরচ বাড়ানো কি পরিবেশবান্ধব কর্মসূচি?
ইতালিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের সময় সম্পদহানির অভিযোগে গ্রেফতার পরিবেশকর্মীদের মোটা অংকের আর্থিক জরিমানা হতে পারে। দেশটির আইন বলছে, এ ধরনের অপরাধে জরিমানার অংকটা সর্বনিম্ন ১০ হাজার ইউরো থেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার ইউরো পর্যন্ত দাঁড়াতে পারে।
‘সংস্কৃতি ধ্বংসের’ অভিযোগরোমে লাস্ট জেনারেশন সদস্যরা শুধু ঝরনার পানিই নোংরা করেননি, তারা ফ্লোরেন্সে একটি শিল্পকর্ম ধ্বংস করেছেন। পালাৎসো ভেচ্চিওর একটি চিত্রকর্মে রং ঢেলে দিয়েছেন। এছাড়া ঐতিহ্যবাহী স্প্যানিশ স্টেপস-এ কালো রং ঢেলে দিয়েছেন লাস্ট জেনারেশন কর্মীরা। ভিনসেন্ট ভ্যান গগের ছবিও রেহাই পায়নি তাদের হাত থেকে। বিখ্যাত শিল্পীর একটি ছবিতে সস ঢেলে দিয়েছেন পরিবেশবাদী আন্দোলনকারীরা।
স্পেনে লাস্ট জেনারেশন কর্মীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করলেও সেখানে কিছু ধ্বংস করা হয়নি। তবে মাদ্রিদে ফ্রান্সিসকো দে ওয়ার একটি চিত্রকর্মের ওপর শুয়ে পড়েছিলেন তারা।
Advertisement
চলছে ধরপাকড়লাস্ট জেনারেশন কর্মীদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে কঠোর ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে ইতালীয় সরকার। নানা জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। পাদুয়ায় গ্রেফতার পরিবেশকর্মীদের বিরুদ্ধে অপরাধকর্মে জড়িত সংগঠন তৈরির অভিযোগ তুলেছে পুলিশ।
গত সপ্তাহে জার্মানিতেও লাস্ট জেনারেশনের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় পুলিশ। পরিবেশবাদী সংগঠনটির বিরুদ্ধে চালানো এ অভিযানে পুলিশের সঙ্গে ছিলেন সরকারি আইনজীবীরা। গ্রেফতার পরিবেশবাদীদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠন তৈরি বা তাদের প্রতি সমর্থনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
রাজনীতিবিদদের সমর্থন, জাতিসংঘের সমালোচনালাস্ট জেনারেশনের কর্মসূচির নামে পরিবেশ বা সম্পদের ক্ষতি করার সমালোচনা করছে বিভিন্ন মহল। এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন ইউরোপের রাজনীতিবিদরা। জার্মানির জোট সরকার এবং সিডিইউসহ কয়েকটি বিরোধী দল মনে করে, জনজীবনে সমস্যা সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে সংবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
তবে বিতর্কের মুখেও এসব পরিবেশকর্মীর পাশে দাঁড়িয়েছে জাতিসংঘ। বৈশ্বিক সংস্থাটি লাস্ট জেনারেশনের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সমালোচনা করে বলেছে, তরুণদের নীতিগত অবস্থান প্রকাশের অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে
কেএএ/জেআইএম