দেশজুড়ে

নারায়ণগঞ্জের বায়ু-মাটি-পানি তিনটিই দূষিত

পরিবেশের প্রধান উপাদান বায়ু, মাটি ও পানি। নারায়ণগঞ্জের বায়ু, মাটি ও পানি—এ তিনটিই দূষিত। বিশেষ করে বায়ুদূষণের মাত্রা অত্যন্ত বেশি। কথাগুলো বলেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমান।

Advertisement

বায়ু মান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জের বায়ু নারী, শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠ ও অসুস্থদের জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’।

দূষণের দিক থেকে ঢাকা ও গাজীপুরের পরই এ জেলার অবস্থান। শুষ্ক মৌসুমে নারায়ণগঞ্জের বায়ু মানের সূচক থাকে ২৭০ এর ওপরে। বায়ু মানের সূচক ২০০ অতিক্রম করলে তা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নারায়ণগঞ্জ জেলা সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘শহরের চারদিকে অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। ধলেশ্বরী পূর্বপাড়ে অনেক অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠেছে। প্রশাসন থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের কর্মচারীদের ম্যানেজ করে বছরের পর বছর এসব ভাটা চলছে। ধলেশ্বরী ও বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে যেসব কারখানা আছে ইটিপি (বর্জ্য পরিশোধনাগার) প্ল্যান বাস্তবায়নের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তারা সেগুলো মানছেন না। ফলে নদীগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। ইটভাটার ধোঁয়ায় শহরের বায়ুদূষণ হচ্ছে।’

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ‘শহরের বিভিন্ন জায়গায় সিটি করপোরেশনের ময়লার স্তূপ ফেলে রাখা হয়। এসব ময়লা-আবর্জনা সময়মতো পরিষ্কার করছে না। এখানে সিটি করপোরেশনের গাফিলতি রয়েছে। আমাদের বাজারগুলোও পরিবেশসম্মত না। সিটি করপোরেশনের উচিত বাজারগুলো সংস্কার করে যুগোপযোগী ও পরিবেশসম্মত করা। পলিথিনের ব্যবহার নিয়ে আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।’

এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সুষ্ঠুভাবে ময়লা-আবর্জনা অপসারণের বিষয়ে আমাদের কার্যক্রম চলমান।

সিটি করপোরেশনের পরিকল্পনাবিদ মঈনুল ইসলাম জানান, কার্বন নিঃসরণ কমাতে এলইডি বাতি স্থাপন, খাল ও জলাধার সংরক্ষণ, বৃক্ষরোপণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ধলেশ্বরীর কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা বক্তাবলী, এনায়েতনগর ও আশপাশের এলাকাসহ পুরো জেলায় কয়েকশ ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার মধ্যে অনেকগুলো ইটভাটা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। একইসঙ্গে যানবাহনের কালো ধোঁয়াও নারায়ণগঞ্জে বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৌসুমে এসব ইটভাটায় কমপক্ষে ৫০ লাখ কাঁচা ইট পোড়ানো হয়। এজন্য প্রতিদিন একটি ইটভাটায় প্রয়োজন হয় কমপক্ষে তিন টন কয়লা। ইটভাটাগুলোর বেশিরভাগই লোকালয়, ফসলি জমি ও নদীর পাশে অবস্থিত।

বক্তাবলী-এনায়েতনগর ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি শওকত আলী জাগো নিউজকে বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে ইটভাটাগুলো পরিচালনা করার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। পরিবেশ দূষণ করে এমন কোনো কাজ আমরা করতে চাই না।

স্থাপনা নির্মাণের সময় ধুলাবালি বাতাসে ছড়িয়ে দূষণ বাড়ছে। এসব নির্মাণকাজে নিয়মিত পানি ছিটানোর শর্ত থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না। সিমেন্ট কারখানায় ব্যবহৃত ফ্লাইঅ্যাশ জাহাজ থেকে ওঠানোর সময় বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। রি-রোলিং স্টিল মিল থেকে লোহা গলানোর সময়ও বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জের সহকারী পরিচালক শেখ মোজাহিদ বলেন, নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ নানাভাবে দূষিত। অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় রয়েছে। তবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিনিয়ত আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন জাগো নিউজকে বলেন, পরিবেশ দূষণ রোধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি। কোনো কোনো সময় ছুটির দিনেও অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে পরিবেশ দূষণ রোধে সবাইকে সচেতন হওয়া উচিত। একার পক্ষে এটি সম্ভব নয়।

মোবাশ্বির শ্রাবণ/এসআর/এমএস