দেশজুড়ে

দখলে বিলীনপ্রায় বারোখালি খাল

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের বংশাই ও লৌহজং নদীর মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী বারোখালি খালটি দখলে বিলীন হতে চলেছে। দখলের কারণে অনেক জায়গায় অনেকটাই সংকুচিত হয়ে পড়েছে খালটি। স্থানীয়দের আশঙ্কা, এতে পৌর এলাকার মূল কেন্দ্র মির্জাপুর বাজারের নোংরা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।

Advertisement

মির্জাপুর থানা ও শহীদ ভবানি প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের পূর্ব পাশ দিয়ে প্রবাহিত বংশাই ও লৌহজং নদীর মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী ঐতিহ্যবাহী এ খালটির নাম ‘বারোখালি’। এর দৈর্ঘ্য প্রায় দুই কিলোমিটার। প্রস্থ গড়ে ১২৬ ফুট। একসময়ে এটি খরস্রোতা ছিল। বছরের পুরো সময়ই খাল দিয়ে ছোট-বড় মালবাহী নৌকা চলাচল করতো। উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ নৌকাযোগে এ খাল দিয়ে মির্জাপুর সদরের হাটে আসতেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশির দশক থেকে খালটির দুই পাড় ধীরে ধীরে অবৈধ দখল প্রক্রিয়া শুরু হয়। দখল করা স্থানগুলো একাধিকবার হাতবদল হয়ে এখন বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। খালটির দুই পাড় অব্যাহত দখলের ফলে বর্তমান প্রশস্ততা কমে দাঁড়িয়েছে ৫০ ফুটে। উপজেলা ভূমি অফিসের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সার্ভেয়ার সাখাওয়াত হোসেন বিষয়টি জানিয়েছেন। এ দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে ঐতিহ্যবাহী এ খালটি একসময় বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, খাল দখল করে ভবন নির্মাণের কথা উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হলে তারা সরেজমিন এসে কাজ বন্ধ করে দেন। এর কয়েকমাস পর আবার ভবনের কাজ শুরু হয়।

Advertisement

উয়ার্শী গ্রামের আব্দুস সালাম মিয়া বলেন, ‘বারোখালি খাল সংলগ্ন ভোলা ব্যাপারীর ৬ শতাংশ জমি কেনার জন্য বায়না করি। পরে পৌর ভূমি অফিসে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, ওই জমির বেশকিছু অংশ খালের মধ্যে পড়েছে। এজন্য আমি আর ওই জমি কিনিনি। কিন্তু তার কয়েক মাস পর দেখি ওই জমি বিক্রি হয়ে গেছে। পরবর্তী সময়ে ছয়তলা ভবনও নির্মাণ করা হয়েছে। এটা কীভাবে সম্ভব?’

শহীদ ভবানি প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহকারি অধ্যাপক মো. শহিদুুল্লাহ বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পৌর শহরের পানি নিষ্কাশন ও নাব্য ফিরিয়ে আনতে ঐতিহ্যবাহী বারোখালি খালটি দখলমুক্ত করা প্রয়োজন। উপজেলা সদরের পুষ্টকামুরী গ্রামের বাসিন্দা, সাবেক ভিপি ও উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু আহমেদ বলেন, ‘খালটি দিয়ে চৈত্র মাসেও পানি প্রবাহিত হতে দেখেছি। আগে এ খাল দিয়ে পাট, নারিকেল ও ধানভর্তি বড় বড় নৌকা চলাচল করতো। দখল হতে হতে এখন এটি আর খাল নেই। শহর রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এদিকে নজর দেওয়া দরকার।’

মির্জাপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি গোলাম ফারুক দিদ্দিকী বলেন, খালটির নাব্য ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি। তা নাহলে অদূর ভবিষ্যতে সদরের রাস্তাঘাটে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ময়লা-আবর্জনায় জনস্বাস্থ্য হুমকির মধ্যে পড়বে।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, মির্জাপুরবাসীর দাবির সঙ্গে প্রশাসনও একমত। অচিরেই খালটি দখলমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Advertisement

মির্জাপুর পৌরসভার মেয়র সালমা আক্তার শিমুল বলেন, ‘প্রয়াত মেয়র সাহাদাৎ হোসেন সুমন খালটি দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। খালটি খনন করে নাব্য ফিরিয়ে আনার জন্য বিশ্ব ব্যাংকের একটি প্রকল্প হঠাৎ বন্ধ হওয়ায় আর অগ্রসর হওয়া যায়নি। পরে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকেও প্রতিনিধিদল এসেছিল। পরে তারাও কোনো যোগাযোগ করেননি। তবে এ বিষয়ে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।’

এস এম এরশাদ/এসআর/এমএস