দেশজুড়ে

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখছে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং

চাঁদপুরে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সামগ্রী প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি হচ্ছে সুতা। আবার এসব প্লাস্টিকের চিপস নামে (কুচি করা অংশ) একটি অংশ রপ্তানি হচ্ছে চীন, জাপান, ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের এমন রিসাইক্লিং পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি ভূমিকা রাখছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও। আর প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাতকরণে জেলার একটি কারখানায় অর্ধশতাধিক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

Advertisement

উদ্যোক্তার দাবি, সরকার খাসজমি লিজ দিলে তিনি আরও বড় পরিসরে প্রতিষ্ঠান করতে পারবেন। তাতে অন্তত আরও এক থেকে দেড়শ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। ক্ষতিকারক পুরোনো প্লাস্টিক সামগ্রী সংগ্রহ করে সুতা তৈরির এমন উদ্যোগ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখবে বলে দাবি পরিবেশ অধিদপ্তরের।

২০১০ সালে চাঁদপুরের পুরান বাজারে জুঁই প্লাস্টিক প্রোডাক্টস নামে প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা চালু করেন উত্তম কুমার দে। তিনি ভাঙারি দোকানের মাধ্যমে সংগ্রহ করেন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক। এসব প্লাস্টিক দুটি প্রক্রিয়ায় আলাদাভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। যার একটি অংশ দিয়ে তৈরি হয় সুতা। এ সুতার নাম ‘কাঁকড়া সুতা’, যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন তিনি। আর অন্য অংশ রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। চাঁদপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার ভাঙারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও সংগ্রহ করা হচ্ছে পরিত্যক্ত এসব প্লাস্টিক। এতে অর্ধশতাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে।

শুধু চাঁদপুর নয়, আশপাশের জেলা থেকেও শ্রমিকরা উত্তমের কারখানায় কাজ করতে আসছেন। তারা বলছেন, এখানে কাজ করে যে টাকা বেতন পান তা দিয়েই সংসার চলে।

Advertisement

মেসার্স জুঁই প্লাস্টিক প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উত্তম কুমার দে বলেন, বর্তমানে আমার কারখানায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্তত এক হাজার লোক কাজ করে। আমি যে প্লাস্টিক দ্রব্যগুলো রিসাইক্লিং করছি তা না করলে এগুলো ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করতো। আমি বিভিন্ন ধরনের বোতল প্রক্রিয়াজাত করি। এর মধ্যে কুচি অংশটুকু (চিপস) ঢাকার বিভিন্ন কোম্পানিতে বিক্রি করি। সেগুলো রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হচ্ছে। আর অপর অংশ দিয়ে এক ধরনের সুতা তৈরি করা হয়। যার নাম কাঁকড়া সুতা। কারখানায় তৈরি এসব কাঁকড়া সুতা চাঁদপুরের চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

তিনি আরও বলেন, সরকারি সহায়তা পেলে আরও বড় পরিসরে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবো। তাতে আমার প্রতিষ্ঠানে আরও অন্তত শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. হান্নান বলেন, বর্তমানে পরিবেশের ক্ষতির অন্যতম কারণ হলো প্লাস্টিক সামগ্রী। পরিবেশের ক্ষতিকর প্লাস্টিক দ্রব্য রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে সুতা তৈরি করে বিদেশে রপ্তানির এমন প্রক্রিয়াকে সাধুবাদ জানাই। প্লাস্টিক দূষণ রোধে ও পরিবেশ সংরক্ষণে এমন উদ্যোগ ভালো ভূমিকা রাখবে।

এছাড়া পরিবেশের ছাড়পত্র পেতে যদি উত্তম কুমারের কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হয় তা করা হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

Advertisement

এদিকে, দূষণ রোধে সারাদেশে পরিত্যক্ত এমন প্লাস্টিক সামগ্রী প্রক্রিয়াজাতকরণের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি সচেতন মহলের। এতে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি বেকারত্ব দূর হবে বলেও জানান তারা।

এমআরআর/এমএস