মতামত

দুস্থদের আশ্রয়ণ প্রকল্প শেখ হাসিনার অনন্য উদ্যোগ

বাংলাদেশের মানুষের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনে শেখ হাসিনার বিভিন্ন উদ্যোগ বিশ্বজুড়ে আজ আলোচিত এবং প্রশংসিত। এ দেশের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জন্য তিনি যে গভীর ভালোবাসা লালন করেন, তা দেখে বিশ্ববাসী আজ বিস্মিত। কারণ, এমন কিছু উদ্যোগ তিনি এরইমধ্যে নিয়েছেন এবং তা অত্যন্ত সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছেন, যার তুলনা বিশ্বে বিরল। এমন একটি সাড়া জাগানো মানবিক উদ্যোগ হলো গৃহহীন, অসহায়, দুস্থ ও ভূমিহীনদের জন্য শেখ হাসিনা সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্প। গোটা বিশ্বে সম্ভবত এটাই প্রথম এত বৃহৎ কোনো সরকারি উদ্যোগ, যেখানে সরকারি খরচে গৃহহীনদের জন্য থাকার ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোকে উন্নয়নের মূলধারায় নিয়ে আসার জন্য শেখ হাসিনা অত্যন্ত নিবিড়ভাবে কাজ করছেন। গ্রহণ করেছেন বিভিন্নমুখী যুগান্তকারী সব কার্যক্রম। সমাজের মূলধারার মানুষের সাথে জলবায়ু উদ্বাস্তু, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, তৃতীয় লিঙ্গ, ভিক্ষুক, বেদে, দলিত, হরিজনসহ সমাজের পিছিয়ে পড়া অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের জন্যও জমিসহ ঘর প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করার মাধ্যমে তাদেরকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল ধারায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

১৯৯৭ সালে প্রকল্পের শুরু থেকে এ পর্যন্ত শুধু আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যারাক, ফ্ল্যাট, বিভিন্ন প্রকার ঘর ও মুজিববর্ষের একক গৃহে মোট ৭ লক্ষ ৭১ হাজার ৩০১টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। একটি গৃহ কীভাবে সামগ্রিক পারিবারিক কল্যাণে এবং সামাজিক উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার হতে পারে তার অনন্য দৃষ্টান্ত ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন তথা দারিদ্র্য বিমোচনের এই নতুন পদ্ধতি ইতোমধ্যে ‘শেখ হাসিনা মডেল’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ঘোষিত মুজিববর্ষে দেশের গৃহহীন, ভূমিহীন, দরিদ্র-অসহায় পরিবারের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বিনামূল্যে ঘর প্রদানের সুবৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে সরকার। আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে প্রথমধাপে সারাদেশে মোট ৬৯ হাজার ৯শ ৪টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে বসবাসের উপযোগী আধাপাকা ঘর নির্মাণ করে উপহার দিয়েছে।

Advertisement

দুস্থ-ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে এত বিপুল পরিমাণ ঘর নির্মাণ করে দিয়ে বিশ্বজুড়ে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা এদেশের সবচেয়ে সফল প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। চতুর্থ ধাপে ৩৯ হাজার ৩৬৫টি গৃহ ও ভূমিহীন পরিবারের মাঝে ঘর হস্তান্তর করেন । একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী দেশের সাতটি জেলা ও ১৫৯টি উপজেলাকে সম্পূর্ণরূপে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করেন। ‘মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না’- এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর করে দিতে দেশজুড়ে প্রায় ৯ লাখ পরিবারকে তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। গৃহহীন পরিবারগুলোকে মাথা গোঁজার নিরাপদ ঠাঁই উপহার দিয়ে বিশ্বের বুকে এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছে বাংলাদেশ।

মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বিনামূল্যের ঘর উপহার পেয়ে দেশজুড়ে খুশির জোয়ার বইছে একসময়ের গৃহহীন পরিবারগুলোর মধ্যে। উপহার হিসেবে তারা পেয়েছেন দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি ঘর। এতে দুটি রুম ছাড়াও সামনে একটি বারান্দা, একটি টয়লেট, একটি রান্নাঘর এবং একটি খোলা জায়গা রয়েছে। ইটের দেয়াল সাথে মাথার ওপর রঙিন টিন। প্রত্যেকটি ঘর নির্মাণের জন্য খরচ হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। এর অতিরিক্ত হিসেবে মালামাল পরিবহনের জন্য আরো ৪ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে প্রতিটি পরিবারকে।

সারাজীবন বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে গৃহহীন, আশ্রয়হীন থাকা মানুষ প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার পেয়ে দারুণ উল্লসিত সকলে। সকলের চোখেমুখে বইছে আনন্দের বন্যা। দীর্ঘস্থায়ী একটা ঘর, এক টুকরো জমি, একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে পাওয়ার যে স্বপ্ন তারা সারাজীবন দেখেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদান্যতায় সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবায়িত হয়েছে মানুষের। মোট ৬৯ হাজার ৯০৪ পরিবারের মধ্যে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে দুই শতাংশ খাস জমির মালিকানা দিয়ে বিনা পয়সায় দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন তিনি মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে। একইসঙ্গে ব্যারাকের মাধ্যমে ২১টি জেলার ৩৬টি উপজেলায় ৪৪ প্রকল্পের মাধ্যমে তিন হাজার ৭১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হয়। দুস্থ ও গৃহহীন মানুষের পুনর্বাসনের জন্য গৃহীত এ প্রকল্প এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ গৃহায়ণ প্রকল্পের এটি।

বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই করার উত্তম চর্চা হিসেবে সমাদৃত হয়েছে এ দেশের ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের শেখ হাসিনা মডেল’। এরই ধারাবাহিকতায়, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের’ মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীন-গৃহহীন-ছিন্নমূল মানুষকে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের আওতায় আনছেন। সমাজের অনগ্রসর পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ২ শতক জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা একক ঘর প্রদান করা হচ্ছে। জমিসহ ঘরের মালিকানা পেয়ে তারা অর্থনৈতিক উন্নন প্রক্রিয়া নিয়োজিত করেছেন। ফলে এসকল পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবনমান উন্নততর হচ্ছে। উন্নয়নের মূলধারায় নারীদের সম্পৃক্ত করা ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণে আশ্রয়ণের বাড়ি ও জমির মালিকানা স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে দেয়া হচ্ছে। পুনর্বাসিত পরিবারের সদস্যদের উৎপাদনমুখী নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ সঞ্চয়ী হতেও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। প্রতিটি ঘরে বিনামূল্য বিদ্যুৎ সংযোগ ও সুপেয় পানির সুব্যবস্থার মাধ্যমে উপকারভাগীদের জন্য আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

Advertisement

শেখ হাসিনা দেশের শাসনভার গ্রহণ করার পর থেকেই দেশের অর্থনৈতিক সচ্ছলতার পাশাপাশি দুস্থ-দরিদ্র-অসহায় মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তার দূরদর্শী নেতৃত্বে দ্রুতগতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যথাযথ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও উন্নয়নের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ একের পর এক বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে উন্নয়নের মহাসড়কে। এদেশের মানুষের স্বপ্নের পদ্মাসেতু বাস্তবায়িত হয়েছে সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো স্থাপিত হয়েছে মেট্টোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতসব কিছুর পাশাপাশি দেশের আপামর ভাগ্যহত ৯ লাখ মানুষকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়ার যে নজিরবিহীন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে শেখ হাসিনা সরকার, তা অতুলনীয়, অবিস্মরণীয়। প্রধানমন্ত্রী নিজেও এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পেরে আবেগে আপ্লুত হয়েছেন।

গৃহহীনদের ঘর প্রদান অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করতে গিয়ে শেখ হাসিনা সেদিন বলেছেন, “আজকে সত্যি আমার জন্য একটি আনন্দের দিন। কারণ এ দেশের যারা সব থেকে বঞ্চিত মানুষ, যাদের কোনো ঠিকানা ছিল না, ঘর-বাড়ি নেই, আজকে তাদের অন্তত একটা ঠিকানা, মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে পেরেছি। আমি জানি না পৃথিবীর কোনো দেশে কখনো অথবা আমাদের দেশে কোনো সরকার এত দ্রুত এতগুলো ঘর করেছে। ... এই ঘরগুলো তৈরি করা সহজ কথা নয়। সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করার দৃঢ় প্রত্যয় পুর্নব্যক্ত করে টানা তিনবারের সরকার প্রধান বলেন, মুজিববর্ষে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। আমরা সবার জন্য ঠিকানা করে দেবো, সবাইকে ঘর করে দেবো। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ যেন সুন্দর ভাবে বসবাস করতে পারে সেটাই আমার লক্ষ্য।”

ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেওয়া ঘর উপহার পাওয়া এক অসহায় নারীর কান্নার জবাবে তাকে সান্ত্বনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনি কাঁদবেন না। আমি মনে করি এটা আমার কর্তব্য। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, জাতির পিতার কন্যা হিসেবে দেশের মানুষের জন্য কাজ করবো, এটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার স্বপ্ন পূরণ করবো। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে। সে জন্য আমি আমার জীবনকে উৎসর্গ করেছি। বাংলাদেশে একটি মানুষও যেন গৃহহীন ও ভূমিহীন না থাকে আমি সেই ব্যবস্থা করবো। সেই সাথে আপনারা যেন আপনাদের জীবন-জীবিকার পথ খুঁজে পান সেই ব্যবস্থাও করবো।”

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত ও নদীভাঙন কবলিত ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো ১৯৯৭ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। শেখ হাসিনা গৃহীত এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯৯৭ থেকে ২০২৩ সালে মার্চ পর্যন্ত মোট ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩০১টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে (দৈনিক বণিকবার্তা)। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর গুচ্ছগ্রাম কর্মসূচিকে অনুসরণ করে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার ঘরে ফেরা কর্মসূচি, গৃহায়ন কর্মসূচি শুরু করে। যার উদ্দেশ্য হলো- ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন, ঋণপ্রদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করে তোলা এবং আয় বাড়ে এমন কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ। এর আগে গত ২৩ জুলাই কক্সবাজার জেলায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়কেন্দ্র খুরুশকুল আশ্রায়ণ প্রকল্পের প্রথম ধাপে নির্মিত ২০টি ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে প্রথম ধাপে উদ্বোধন হওয়া ভবনগুলোতে ফ্ল্যাট পেয়েছেন ৬০০টি পরিবার। ১০০১ টাকা নামমাত্র মূল্যে এসব ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ১৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথম ধাপে নির্মিত ৫ তলা ২০টি ভবনসহ প্রকল্পের মোট ১৩৯টি ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি পাঁচতলা ভবনে থাকছে ৪৫৬ বর্গফুট আয়তনের ৩২টি করে ফ্ল্যাট। খুরুশকুল প্রকল্পের সবগুলো ভবন নির্মিত হলে উদ্বাস্তু জীবনের অস্বাস্থ্যকর, নোংরা পরিবেশ ছেড়ে সাজানো পরিপাটি দালানে উঠবেন মোট প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পরিবার।৫ খুরুশকুলে বাঁকখালী নদীর তীরে ২৫৩ একর জমির উপর গড়ে ওঠা এ বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পও জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য গড়ে ওঠা বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়কেন্দ্র। এটিও বাস্তবায়ন করার গৌরব অর্জন করেছে শেখ হাসিনার সরকার।

মুজিব বর্ষে প্রথম পর্যায়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ২১ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে ৬৩ হাজার ৯৯৯ টি পরিবারকে জমির মালিকানাসহ ঘর প্রদান করা হয় এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০ জুন ২০২১ তারিখে ৫৩ হাজার ৩৩০টি পরিবারকে অনুরূপভাবে গৃহ প্রদান করা হয়। বর্তমানে তৃতীয় পর্যায়ে নির্মাণাধীন রয়েছে আরো ৬৫ হাজারেরও অধিক ঘর। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ১ লক্ষ ৮৩ হাজার ৩টি পরিবারকে জমিসহ সেমিপাকা একক ঘর প্রদান করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দৃঢ় প্রত্যয়ের প্রমাণ রেখেছেন। রাষ্ট্রের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে মূলস্রোতে তুলে আনার জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বাসগৃহ নির্মাণ করে জমির চিরস্থায়ী মালিকানা দেওয়া হচ্ছে। জমি কেনার জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার উদাহরণ বিশ্বে কয়েকটি দেশে পাওয়া যায়, কিন্তু বিনামূল্যে ঘরসহ জমির মালিকানা দেয়ার ঘটনা বাংলাদেশেই প্রথম।

শুধু ঘর প্রদানই নয়, শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়নের পাশাপাশি দারিদ্র্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়ও তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দারিদ্র্য নিরসনের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি মিলছে বিশ্বজুড়ে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপি প্রকাশিত ‘মাল্টিডাইমেনশনাল পভার্টি ইনডেক্স ২০১৯’ অনুযায়ী দ্রুত দারিদ্র্য বিমোচনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে যেসকল দেশ, তারমধ্যে বাংলাদেশ এখন ৩ নম্বরে।

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য-এসডিজিতে যে ১৭টি লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে, তার প্রথমটি হল দারিদ্র্য বিমোচন। ২০৩০ সালের মধ্যে সব জায়গা থেকে ‘বহুমাত্রিক’ দারিদ্র্য দূর করার কথা বলা হয়েছে সেখানে। এই লক্ষ্য অর্জনে জাতিসংঘ অধিভুক্ত দেশগুলোর সক্ষমতা ও অগ্রগতি পর্যালোচনা ও বোঝার একটি কৌশল হলো ‘মাল্টিডাইমেনশনাল প্রভার্টি ইনডেক্স’ বা এমপিআই। এর ভিত্তিতেই বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত দারিদ্র্য নিরসন করছে এমন তিনটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। অন্য দু’টি দেশ হলো- ভারত ও কম্বোডিয়া। বাংলাদেশ ২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যসীমার বাইরে আনতে সক্ষম হয়েছে।

দারিদ্র্য হ্রাসে শেখ হাসিনার সরকার গ্রামীণ অর্থনীতিতে অর্জিত গতিশীলতা ও হতদরিদ্রদের জন্য টেকসই নিরাপত্তাবেষ্টনীর মাধ্যমে জনগণের খাদ্যনিরাপত্তা, অতিদরিদ্র ও দুস্থদের জন্য বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ, কাজের বিনিময়ে খাদ্য ও টেস্ট রিলিফ, জিআর, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, আশ্রয়ণ, গৃহায়ণ, আদর্শ গ্রাম, গুচ্ছ গ্রাম, ঘরে ফেরা প্রভৃতি কর্মসূচির পাশাপাশি ওএমএস, ফেয়ার প্রাাইস কার্ড, ভিজিডি, প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতা, বিধবা, স্বামী নিগৃহীতা ও দুস্থ মহিলা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা, চর জীবিকায়ন প্রভৃতি কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে।

এছাড়া দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্রঋণ, ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত গোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীকে আরো যুগোপযোগী ও কার্যকর করার লক্ষ্যে সরকার প্রথমবারের মতো ‘জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল’ (২০১৫) প্রণয়ন করেছে। একটি দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম ও অগ্রগতিশীল করে তুলতে যেসকল উদ্যোগ নেওয়া জরুরি, তার সবই সুনিপুণভাবে একের পর এক গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছেন জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা। তার হাত ধরেই রচিত হচ্ছে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাস। তার হাত ধরেই রচিত হবে আগামীর উন্নত বাংলাদেশ, সেদিন আর বেশি দূরে নয়। সুতরাং মোদ্দাকথা হচ্ছে দেশের সর্বশ্রেণির জনগণের মঙ্গলের জন্য বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠির মঙ্গলের জন্য শেখ হাসিনার সরকার বার বার দরকার।

লেখক: সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এইচআর/জিকেএস