ভারতে গত ২০ বছরের মধ্যে এমন ট্রেন দুর্ঘটনা দেখেনি কেউ। তিনটি ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার (২ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উড়িষ্যা রাজ্যের বালেশ্বরের বাহাঙ্গাবাজার স্টেশনের কাছে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত ২৭৫ জন নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। যদিও গতকাল মৃতের সংখ্যা ২৮৮ বলে জানানো হয়। আহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৮০০ ছাড়িয়েছে। গত তিন দশকের মধ্যে এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা বলে উল্লেখ করেছে ভারতের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম।
Advertisement
এদিকে ভয়াবহ ওই ট্রেন দুর্ঘটনার বিভীষিকা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি করমণ্ডল এক্সপ্রেসের চালক। এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে আতঙ্ক। দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যান করমন্ডলের চালক জে এন মোহান্তি এবং সহকারী চালক এইচ বেহারা। আহত অবস্থায় তারা ভুবনেশ্বরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আরও পড়ুন: উড়িষ্যায় এবার পণ্যবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত
উড়িষ্যার গণমাধ্যম থেকে জানা গেছে, করমন্ডল এক্সপ্রেসের চালকের বাম পায়ে চিড় ধড়েছে। তার অবস্থা স্থিতিশীল হলেও বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তাছাড়া মানসিকভাবেও বিধ্বস্ত তিনি। তাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন চিকিৎসকরা। সহকারী চালকের অবস্থাও সঙ্কটজনক। তিনি আইসিইউতে ভর্তি আছেন।
Advertisement
শুক্রবার চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়। দুর্ঘটনার শিকার হয় বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসও। দুর্ঘটনার সময় একটি মালগাড়ির কামরার ওপর উঠে যায় করমন্ডলের ইঞ্জিন। এদিকে করমন্ডল এক্সপ্রেসের দুই চালকের পরিবারের সদস্যদের দিন কাটাচ্ছে ভীষণ উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায়।
করমন্ডল দুর্ঘটনার তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। রেল বোর্ডের সদস্য (অপারেশন) জয়া বর্মা সিনহা জানিয়েছেন, চালক তাদের জানিয়েছেন যে, দুর্ঘটনার ঠিক আগে আপ লাইনের সিগন্যাল সবুজ ছিল। তারপরেই গাড়ি লুপ লাইনে ঢুকে পড়ায় দুর্ঘটনা ঘটে।
জয়া বর্মা বলেন, এই ঘটনায় চালকের কোনও দোষ নেই বলেই মনে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের (বেঙ্গালুরু-হাওড়া এক্সপ্রেস) টিটি জানিয়েছেন, পেছন থেকে তিনি বিকট শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন। তখন বোঝেননি কী হয়েছে। এ-১ কোচের পর দুটি কামরা এবং গার্ডের কামরা ছিল। শেষের দুটি কামরা লাইনচ্যুত হয়। দুর্ঘটনার ৫১ ঘণ্টা পর রোববার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে বালেশ্বরের রেলপথে ডাউন লাইন দিয়ে প্রথম একটি মালগাড়ি চালানো হয়। পরে রাত ১২টা ৫ মিনিটে আপ লাইন দিয়ে চালানো হয় আরও একটি ট্রেন।
আরও পড়ুন: হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়লো নির্মাণাধীন সেতু, ভিডিও ভাইরাল
Advertisement
এদিকে করমন্ডল দুর্ঘটনার ক্ষত শুকোতে না শুকোতেই ভারতের উড়িষ্যায় আবার ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। বালেশ্বরের বাহানগা বাজারে ট্রেন দুর্ঘটনার ৪ দিনের মাথায় সোমবার (৫ জুন) একটি পণ্যবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। তবে এই ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, চুনাপাথর নিয়ে যাচ্ছিল ট্রেনটি। কী কারণে লাইনচ্যুত হলো তা এখনো জানা যায়নি। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে পুলিশ। ডুংরি চুনাপাথর খনি ও বারগড়ে একটি সিমেন্ট কারখানার মধ্যে ন্যারো গেজ লাইন রয়েছে। সেখানেই লাইনচ্যুত হয়েছে ট্রেনটি। ওই রেলপথের সঙ্গে ভারতীয় রেল যুক্ত নয়।
টিটিএন