জাতীয়

পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপে পরিচ্ছন্ন থাকবে নগর

দেশে প্রথমবারের মতো বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এরই মধ্যে জমি অধিগ্রহণসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ। সব ঠিক থাকলে ৫ জুলাই উদ্বোধন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এই কেন্দ্রে উৎপাদন হবে ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। একই সঙ্গে প্রতিদিনের বর্জ্য রিসাইক্লিং হওয়ায় দূষণমুক্ত হওয়ার পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন থাকবে নগরী।

Advertisement

ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্র জানায়, ১৫ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিএমইসি)। এ বিদ্যুৎ দেশের জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। নির্দিষ্ট মূল্যে বিদ্যুৎ কিনবে সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ।

আরও পড়ুন>>বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজ করছে সরকার

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে শহরে পরিবেশ দূষণের পরিমাণ অনেকাংশে কমবে বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আদিল মোহাম্মদ খান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হলে নগরে সঠিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হবে। তখন বর্জ্যের চাহিদা বাড়বে। যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকা বা ফেলা বর্জ্যের পরিমাণও কমবে। মানুষের মধ্যেও সচেতনতা তৈরি হবে। এজন্য ডিএনসিসির এ প্রকল্পটির মতো দেশের অন্য সিটি করপোরেশনেও বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র চালু করা দরকার।

Advertisement

সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২০ সালের নভেম্বরে বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের (সিএমইসি) সঙ্গে চুক্তি করে সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ ও ডিএনসিসি। ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ১৫ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে সিএমইসি। এ প্রকল্প হবে ২৫ বছর মেয়াদি। বিদ্যুৎ বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। নিজ ঝুঁকিতে প্ল্যান্ট স্থাপন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে চীনা কোম্পানি। পরে চুক্তি অনুযায়ী উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিক্রি করবে বিউবোর কাছে।

এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ডিএনসিসি ৩০ একর জমি এবং দিনে তিন হাজার টন জ্বালানি বর্জ্য সরবরাহ করবে। প্রয়োজনীয় বর্জ্য সরবরাহ করতে না পারলে ডিএনসিসি প্রতি টন ঘাটতি বর্জ্যের জন্য তিন হাজার টাকা হারে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে।

ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প নেওয়ার অন্যতম কারণ ঢাকার আমিনবাজারে ল্যান্ডফিল্ডের ওপর চাপ কমানো। অন্যথায় দিন দিন ল্যান্ডফিলের আয়তন বাড়তে থাকলে নগরে বায়ুদূষণের পরিমাণও বাড়বে। তাই চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন তিন হাজার টন বর্জ্য চীনা প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে। এই পরিমাণ বর্জ্য ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ড থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব। যদিও এই পরিমাণ বর্জ্য দিতে না পারলে প্রতি টনের জন্য জরিমানা দিতে হবে তিন হাজার টাকা করে।

আরও পড়ুন>>ডিএনসিসির বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কবে? 

Advertisement

জানতে চাইলে ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এস এম শফিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এখন ডিএনসিসি এলাকায় দিনে তিন হাজার ৪শ টন বর্জ্য উৎপাদন হয়। বর্জ্য সংগ্রহে কোনো ঘাটতি হবে না। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ পরিবেশবান্ধব প্রকল্প। ডিএনসিসি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর।জমি অধিগ্রহণঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্র জানায়, ডিএনসিসি এলাকার গৃহস্থালি, হোটেল-মোটেল, কল-কারখানা, হাট-বাজার, সড়কে পড়ে থাকা বর্জ্য প্রতিদিন সাভারের আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে ফেলা হয়। এই ল্যান্ডফিলের আয়তন প্রায় ৫০ একর। এখন এই ৫০ একর জমির পাশেই আরও ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করছে ডিএনসিসি। যদিও এ প্রকল্পের জন্য প্রথমে ১০০ একর জমি চেয়েছিল চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিএমইসি)। কিন্তু ওই পরিমাণ জমি অধিগ্রহণের সক্ষমতা ডিএনসিসির নেই। তাই তারা ৩০ একর জমিতে প্ল্যান্ট স্থাপনের চুক্তি করে। এই জমি অধিগ্রহণে ৬শ কোটি টাকা দিয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। এখন বর্জ্যের বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ১৮ দশমিক ২৯৫ টাকায় কিনবে সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ।

গত ২২ মে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিএমইসি) কার্যালয়ে ডিএনসিসি ও সিএমইসি শীর্ষ কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে ডিএনসিসির মেয়র ও কর্মকর্তাদের বিভিন্ন দেশে চলমান সিএমইসি প্রকল্প সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। এরই মধ্যে চায়নিজ কোম্পানিটি বেলারুশ, আর্জেন্টিনা, আরব আমিরাত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশে সফলতার সঙ্গে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে বলে জানায় সিএমইসি।

ওই বৈঠকে সিএমইসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফনগ ইয়ানসু বলেন, বৈশ্বিকভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নগরায়ণের প্রভাবে মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। চীন ও বাংলাদেশ দুটোই অধিক জনসংখ্যার দেশ। ফলে এসব দেশে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না করলে পরিবেশ দূষণ বাড়ে। আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এমন ব্যবস্থা রেখে যেতে পারি না। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় বেইজিং এখন সুফল পাচ্ছে। এ প্রকল্প ঢাকায়ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সিএমইসির সঙ্গে বৈঠকে প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সিএমইসি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের তারিখ ৫ জুলাই কনফার্ম করেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সব খরচও তারাই বহন করবে। আমরা আশা করছি, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। বর্জ্য যে বিরাট বড় সম্পদ, বর্জ্য থেকে যে টাকা আয় করা সম্ভব আজ তা প্রমাণ হতে চলছে।

তিনি বলেন, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটা বিরাট বিপ্লব ঘটবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন যুগে প্রবেশ করবে দেশ। যে বর্জ্য পরিবেশের ক্ষতি করতো, মিথেন গ্যাস সৃষ্টি করতো সেটা এ প্রকল্পের মাধ্যমে সম্পদে পরিণত হবে। নগরে আর যত্রতত্র বর্জ্য ছড়িয়ে থাকবে না।

এমএম/এএসএ