বিদিশা এরশাদ। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান, জাতীয় পার্টি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। মুখোমুখি হন রাজনীতির সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে। দীর্ঘ আলোচনায় তুলে ধরেন ব্যক্তি জীবনের নানা চ্যালেঞ্জের কথাও। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে শেষটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।
Advertisement
জাগো নিউজ: বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ফের সরব বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসানীতি করছে, যা রাজনীতিতে নতুন আলোচনা যোগ করেছে।
বিদিশা এরশাদ: আমি এই মুহূর্তে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছি। সম্প্রতি আমার বড় একটি অপারেশন হয়েছে। তিন মাসের জন্য বিশ্রামে থাকতে হচ্ছে ডাক্তারের পরামর্শে। চাইলেও মুভ করতে পারছি না।
রাজনীতিতে আমি এখনো ছোট মানুষ। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসাধারণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশেষ উচ্চতায় এখন। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশের পথে। বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে বিশ্ব এখন ভূয়সী প্রশংসা করছে। ক্রিকেট দিয়ে বাংলাদেশকে যেমন জানে তেমনি পোশাকের জন্যও জানে। খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা, চিকিৎসা নিয়ে আপনি সাফল্য দেখতে পাবেন। পদ্মা সেতুর জন্যও বাংলাদেশকে এখন বিশেষভাবে চিনতে হচ্ছে। বাংলাদেশের এই এগিয়ে যাওয়াও কারও কারও কাল হয়ে হয়ে গেছে।
Advertisement
জাগো নিউজ: কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তো আছে। দেশের মধ্যেও এ নিয়ে চাপ আছে।
বিদিশা এরশাদ: প্রশ্ন সব দেশ নিয়েই আছে। হয়তো ভিন্ন ভিন্ন প্রশ্নে। আর বিরোধীরা তো সরকারের বিপক্ষে গিয়ে রাজনীতি করবেই।
জাগো নিউজ: যুক্তরাষ্ট্র এমন অবস্থান কিন্তু আগে নেয়নি?
বিদিশা এরশাদ: যুক্তরাষ্ট্র অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের তাগিদ দিচ্ছে। ভালো কথা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। মানুষের দাবিও তাই। শেখ হাসিনা বোল্ড লেডি, তিনি ভয় পান না। তিনি শেখ হাসিনা, শেখ মুজিবের মেয়ে। এটি আমাদের মনে রাখতে হবে।
Advertisement
জাগো নিউজ: রাজনৈতিক জোট বা অবস্থান নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছেন কি না?
বিদিশা এরশাদ: আমি আজ পর্যন্ত সরকারের কোনো চেহারাই দেখিনি। সরকারের কাছ থেকে এক টাকার কোনো বেনিফিট নেইনি। আমিই মনে হয় একমাত্র রাজনীতিক যে কোনো প্রকার সুবিধা না নিয়ে সরকারের অগ্রযাত্রার প্রশংসা করি, যা সত্য তাই বলি। সরকার কোথাও ব্যর্থ হলে সেটাও বলবো।
আরও পড়ুন>> ‘যত বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছে তত আমার মঙ্গল হয়েছে’
জাগো নিউজ: ২০১৪, ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে আপনার অবস্থান?
বিদিশা এরশাদ: ওই দুটি নির্বাচন কেন ত্রুটিপূর্ণ, তা সবারই জানা। তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির জোট করার ক্ষেত্রে আমার ভূমিকা ছিল। এরশাদ সাহেবকে আমিই বারবার ম্যানেজ করেছি। প্রতিটি নির্বাচনে আমার ভূমিকা ছিল। আমার অবদানের কথা আওয়ামী লীগও অস্বীকার করতে পারবে না।
জাগো নিউজ: এমন অবদানের কথা রওশন এরশাদও বলে থাকেন।
বিদিশা এরশাদ: তারও হয়তো অবদান ছিল। রওশন এরশাদ তো বিএনপির সঙ্গে জোট করতে চেয়েছিলেন। পরে এসেছেন। সুবিধার জন্য সব করেছেন। আমি তো কোনো সুবিধা নেইনি। আমি দেশের মানুষের জন্য জোট করার তাগিদ দিয়েছি।
জাগো নিউজ: আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে জাতীয় পার্টি আসলে কী পেল?
বিদিশা এরশাদ: এরশাদ সাহেবের ফ্যামিলি ভালো বলতে পারবেন কী কী সুবিধা পেয়েছেন। রওশন এরশাদকে জিজ্ঞেস করেন কী সুবিধা পেলেন। আমি বাদে সবাই সুবিধা নিয়েছেন।
আমি সরকারের পক্ষে কথা বললে মানুষ খারাপ মন্তব্য করেন। বলেন, আমি নাকি সরকারের দালালি করছি। ১৪ বছরে আমি ১৪ টাকার সুবিধাও নেইনি সরকারের কাছ থেকে।
জাগো নিউজ: জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ কী?
বিদিশা এরশাদ: অনেকগুলো ভাগ হয়ে গেছে জাতীয় পার্টি। যদি এক হয়ে কাজ করতে পারে তাহলে ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।
জাগো নিউজ: মহাজোটে যোগ দিতে আপনি ভূমিকা রেখেছেন বললেন। তাহলে এখন জাতীয় পার্টিকে এক করতে পারছেন না কেন?
বিদিশা এরশাদ: পার্টির সিনিয়র নেতারা চান না তারা এক হোক। আমি জাতীয় পার্টির পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার কার্যক্রম শুরু করার আগে বলেছিলাম চেয়ারম্যান হবেন ম্যাডাম রওশন এরশাদ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। আমি তাকে দেখতেও গিয়েছিলাম। আমি ছোট মানুষ। লন্ডন, প্যারিস, সিঙ্গাপুরে আমি বহু সময় কাটিয়েছি। হিংসা আমার মনে নেই।
সতিনকে আমি সতিন ভাবি না। যেখানে হাসবেন্ডই নেই, সেখানে সতিন দিয়ে কী করবো?
জাগো নিউজ: রওশান এরশাদ কি আপনাকে সতিন ভাবেন?
বিদিশা এরশাদ: অবশ্যই সতিন ভাবেন তিনি। আমি ভাবি না। দেখেন তার ছবিগুলো এখনো এ বাসায় টাঙানো আছে।
জাগো নিউজ: অনেকে ‘আই ওয়াশ’ করার জন্যও রাখেন?
বিদিশা এরশাদ: অনেকেই আই ওয়াশ করেন। আমি করিনি। এ ছবিগুলো সব সময়ই ছিল। এখনো আছে। আমি ও এরশাদ সাহেব মিলে রেখেছি। সম্মান দিয়ে রেখেছি। আমি তো এসে সরাতে পারতাম। সরাইনি।
জাগো নিউজ: এখন তো দুই সতিন মিলে শক্ত অবস্থান নেওয়ার কথা ছিল?
বিদিশা এরশাদ: তার বয়স সম্ভবত ৮৭ বছর। লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। অক্সিজেনও দেওয়া হয়। শারীরিকভাবে তো অনেক অসুস্থ তিনি। তার তো এখন অবসরে যাওয়ার সময়। দেশকে তিনি আর কী দেবেন? অনেক দিয়েছেন। এভাবে বলার জন্য দুঃখপ্রকাশ করছি।
জাগো নিউজ: রওশন এরশাদের সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কখনও বোঝাপড়া হয়েছে?
বিদিশা এরশাদ: আমরা দু’জনই চাই এরশাদ সাহেবের জাতীয় পার্টি শক্তিশালী হোক। সুন্দরভাবে পার্টি পরিচালিত হোক।
জাগো নিউজ: জিএম কাদের কী চান?
বিদিশা এরশাদ: তিনিও ভালো চান। আমরা তো বলিনি জিএম কাদেরের সঙ্গে এক হবো না। আগামীকালও সব সমস্যার সমাধান হতে পারে। রাজনীতিতে শেষ বলতে কিছু নেই। কাল একসঙ্গে বসে চা খেতে পারি।
জাগো নিউজ: রাজনীতিতে শেষ বলতে কিছু নেই, এটি জাতীয় পার্টির জন্য অধিক প্রযোজ্য। ঠিক এখনো!
বিদিশা এরশাদ: জনগণের স্বার্থে অনেক কিছুই পরিবর্তন করতে হয়। অহংকার দিয়ে রাজনীতি হয় না। আমি জেদ নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না।
জাগো নিউজ: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে জাতীয় পার্টির অবস্থান কী?
বিদিশা এরশাদ: তিন ভাগে বিভক্ত জাতীয় পার্টি। এখনই সব বিষয়ে অবস্থান জানানোর সময় আসেনি। দেখা যাক।
জাগো নিউজ: আপনি কী চান?
বিদিশা এরশাদ: আমি নির্বাচন চাই। সোজা কথা, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। সবার ভোটের অধিকার চাই। অতীতে কী হয়েছে, তা যেন আর গুরুত্ব না পায়। নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক থাকলেও দেশের তো উন্নয়ন হয়েছে। সবাই এই উন্নয়নের কথা বলে। চাপ থাকলেও শেখ হাসিনা কৌশলে বেরিয়ে আসবেন।
জাগো নিউজ: নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে ভাবনা?
বিদিশা এরশাদ: জনগণের জন্য কাজ করতে হলে তো নির্বাচনে অংশ নিতেই হবে। সংসদ সদস্য হওয়াও জরুরি। গুলশানের এ আসন আমার স্বামী এরশাদ সাহেবের। আমি দীর্ঘদিন এখানেই অবস্থান করছি। করোনার মধ্যে এখানে প্রচুর কাজ করেছি সাধারণ মানুষের জন্য। এমনকি গুলশান এলাকার কুকুর-বিড়ালকেও খাইয়েছি করোনার দুঃসময়ে।
সারাদেশের মানুষই আমাকে বিশেষভাবে চেনেন। গুলশান এলাকার মানুষ যদি চায় তাহলে ইতিবাচকভাবেই সাড়া দেবো।
জাগো নিউজ: এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ আছে কি না?
বিদিশা এরশাদ: নির্বাচন তো একা করা যায় না। সবার সহযোগিতা তো লাগবেই। সরকারের গোয়েন্দারা আছেন। তারা হয়তো খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। দেখা যাক কী হয়।
এএসএস/এএসএ/জিকেএস