আবারো দাম বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের। আমদানির ঘোষণা দেওয়ায় কেজিতে কমেছিল ৫ টাকা। কিন্তু আমদানি না হওয়ায় তা ২৫ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০ টাকায়। শুধু পেঁয়াজই নয়, খুলনায় সবজির দামও এখন আকাশছোঁয়া। কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা করে বেড়েছে সব সবজির দাম। সবজির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে প্রচণ্ড খরতাপের অজুহাত ছাড়া আর কিছু বলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
Advertisement
শনিবার (৩ জুন) খুলনার টুটপাড়া জোড়াকল বাজার, ময়লাপোতা বাজার, মিস্ত্রিপাড়া বাজর ঘুরে দেখা যায়, সব বাজারেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়েও পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৬৫ টাকা দরে।
খুলনার বড় বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা আসলাম জোয়ার্দ্দার বলেন, মোকামগুলোতে পেঁয়াজ কম আসছে। যা আসছে তা অধিক দামে কিনতে হচ্ছে। তার ওপর পরিবহন খরচতো রয়েছেই। সব মিলিয়ে একটা দাম নির্ধারণ করেই আমাদের বিক্রি করতে হচ্ছে।
অপর ব্যবসায়ী নাজিম মাস্তান বলেন, পেঁয়াজের দাম এমনিতেই বেড়েছিল। কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রী আমদানির ঘোষণা দেওয়ায় কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কমে যায় পেঁয়াজের দাম। কিন্তু চতুর ব্যবসায়ীরা যখন দেখলো আমদানি করা হচ্ছে না, তখন আবার দাম বাড়িয়ে দেওয়া হলো।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, এখন পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকায়। এই দামে পেঁয়াজ কিনে খুচরা বিক্রেতারা ৯০ টাকার নিচে বেচতে পারবেন না। কারণ তাদের পরিবহন খরচ, দোকান ভাড়া, ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করতে হয়।
নগরীর স্যার ইকবাল রোডের ভ্যানে পেঁয়াজ বিক্রেতা সুলতান আলী গাজী বলেন, প্রচণ্ড রোদের মধ্যে ঘুরে ঘুরে পেঁয়াজ বিক্রি করি। আমরা যে দামে বিক্রি করছি দোকানেও সেই দামে বিক্রি করছে। আমাদের শ্রমের দাম নেই।
এদিকে অনাবৃষ্টি আর দাবদাহের কারণে খুলনার বাজারগুলোতে সবজির সরবরাহ কমেছে। ফলে সবজির দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
নগরীর দোলখোলা বাজারের সবজি বিক্রেতা জাহিদুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় বাজারে সবজির দাম একটু বেশি। চলতি সপ্তাহে বাজারে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। গত সপ্তাহে এই বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকায় পাওয়া গেছে। এছাড়া ২০ টাকা বেড়ে কাকরোল এখন ৮০ টাকা, করোলা ১০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা, ঝিঙে ১০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা, কুশি ১০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা ও পটল ১০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকা। দাম বেড়েছে মিষ্টি কুমড়া, লাউ, বরবটি, কচু, ঢেঁড়সেরও। জোড়াকল বাজারের ব্যাবসায়ী মিরাজ বলেন, এই গরমে লাউ একটু বেশি বিক্রি হওয়ায় দামও অনেক বেড়েছে। গত মাসের শেষ দিকে একটা লাউ সর্বোচ্চ ৪০ টাকায় বিক্রি করা গেছে। কিন্তু আজ সেই সাইজের লাউ ৬০ টাকায় দিতে চাচ্ছেন না বিক্রেতারা।
Advertisement
বাজারের অপর ব্যবসায়ী রবিউল বলেন, মিষ্টি কুমড়ার দাম মোটামুটি নাগালের মধ্যে ছিল। কিন্তু কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতীক কুমড়া হওয়ার পর থেকে এই সবজিটির দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এখন বাজারে ৪০ টাকার নিচে কোনো কুমড়া নেই।
এছাড়া পেঁপে ৪০ টাকা, কাঁচকলার হালি ৩০ টাকা, কচু ৭০-৮০ টাকা, লাল শাক ৫০ টাকা, ডাটা শাক ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কাঁচা মরিচের দাম আবারো কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ১২০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জোড়াকল বাজারে সবজি কিনতে আসা মতিউর মল্লিক বলেন, এখন বাজারে আসতে হলে কোনো বাজেট করে আসা মুশকিল। কখন কোন সবজির দাম বেড়ে যাবে তা কেউ জানে না।
তিনি বলেন, প্রতিদিন বাজারে এসে দেখি ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। একটাই কারণ দাম কাল যা ছিল আজ তার চেয়ে বেশি কেন?
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম হোসেন বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিং করছি, অভিযানও অব্যাহত রয়েছে। বাজারে বেশ কিছু পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে আদা পেঁয়াজ ও মশলার দাম বোড়েছে।
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা খুলনার দুটি পাইকারি বাজার ট্রাকস্ট্যান্ড ও খুলনার বড় বাজারে খোঁজ নিয়েছি। এই দুটি বাজারে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এখানকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, এলসি কম হওয়ায় দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। বিষয়টি আমরা হেড অফিসে জানিয়েছি। আজকালের মধ্যে হেড অফিস থেকে নির্দেশনা পাবো। সেই অনুযায়ী আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
আলমগীর হান্নান/এফএ/আরএইচ/এমএস