অর্থনীতি

‘নানা করারোপে ভয়ংকর সংকটে পড়বে আবাসন শিল্প’

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জমি ও অ্যাপার্টমেন্টের রেজিস্ট্রেশনের সময় উৎসে আয়কর বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। এছাড়া সিমেন্ট, পাথর, টাইলস, লিফট, সিরামিক, গ্লাস, সুইচ-সকেট, কিচেনওয়্যারসহ ১০-১২টি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে নির্মাণখাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নিবন্ধন ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানাবিধ করারোপের ফলে ভয়ংকর সংকটের মুখে পড়বে আবাসন শিল্প।

Advertisement

শনিবার (৩ জুন) আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) প্রথম সহ-সভাপতি কামাল মাহমুুদ জাগো নিউজকে এ কথা জানান।

তিনি বলেন, “সব মানুষের স্বপ্ন থাকে সুন্দর একটা বাড়ি করার। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে ঘরে ফিরে সবাই চায় একটু স্বস্তির নিশ্বাস। নিজের একটা বাসস্থান মানুষের স্থিতিশীলতা, আত্মমর্যাদা এবং ব্যক্তিত্ব অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত- সবারই ন্যূনতম চাওয়া একটা সুন্দর ফ্ল্যাট তথা নিজস্ব ঠিকানা। কিন্তু এবার বাজেট প্রস্তাবের পর অসংখ্য নাগরিকের ফ্ল্যাটের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। আমাদের বেসরকারি ডেভেলপারদের একান্ত চেষ্টায় অনেক স্বল্পবিত্ত নাগরিকও ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন। আবাসন ব্যবসায়ীদের কাছে মনে হচ্ছে ফ্ল্যাট আবার উচ্চবিত্তের পণ্য হয়ে যাবে। ‘সবার জন্য আবাসন’ স্লোগান এখন স্লোগানই থেকে যাবে।”

আরও পড়ুন>> প্রস্তাবিত বাজেট পুনর্বিবেচনা চায় রিহ্যাব

Advertisement

কামাল মাহমুুদ বলেন, এবার বাজেটে অনেক এলাকায় ২০ লাখ টাকা প্রতি কাঠা সরকারি ট্যাক্স ধরা হয়েছে, অথবা চুক্তি মূল্যের ৮ শতাংশ। এটা আগে ৪ শতাংশ ছিল। আবার শর্ত আছে, যেটা বেশি হবে সেটা দিতে হবে। তার মানে কমপক্ষে কাঠাপ্রতি ২০ লাখ টাকা ট্যাক্স দিতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষ এটা আরও বেশি দিতে হবে। এটা গেলো জমির ক্ষেত্রে। ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে আগে ১০-১২.৫ শতাংশ ট্যাক্স ছিল, এটা এবার হবে ১৪-১৬.৫ শতাংশ। আবাসন খাতে কী অবস্থা দাঁড়াবে চিন্তা করা যায়?

তিনি বলেন, আমরা আবাসন ব্যবসায়ীরা রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) থেকে এ ট্যাক্স ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। দীর্ঘদিন ধরে গণমাধ্যম এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলাম। একটা সময় ১৫ শতাংশ ট্যাক্স ছিল, তখন জমি-ফ্ল্যাট বিক্রি অনেক হ্রাস পেয়েছিল। চার বছর আগে কিছুটা হ্রাস করার পর এ ট্যাক্স ছিল ১০-১২.৫ শতাংশ পর্যন্ত। নতুন করে ৪ শতাংশ ট্যাক্স বৃদ্ধিতে এ খাতে স্থবিরতা নেমে আসবে। অধিক ট্যাক্স কালেকশন করতে গিয়ে উল্টো ট্যাক্স কমবে বলে আমাদের শঙ্কা।’

‘ঢাকা মহানগরের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) ফার হ্রাস, নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধিসহ নানাবিধ কারণে ব্যবসা সংকটে রয়েছে, এ অবস্থায় স্বস্তির কোনো উদ্যোগ নেই বাজেটে। উল্টো জমি-ফ্ল্যাট নিবন্ধন ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে।’ যোগ করেন তিনি।

আরও পড়ুন>> এটা গরিব মারার বাজেট: ফখরুল

Advertisement

এ রিহ্যাব নেতা বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে রেজিস্ট্রেশন ব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি সিমেন্ট, পাথর, টাইলস, লিফট, সিরামিক, গ্লাস, সুইচ-সকেট, ক্যাবল, কিচেনওয়্যারসহ কমপক্ষে ১২-১৩টি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যেসব পণ্যের দাম বাড়বে তার ক্রেতা হচ্ছি আমরা যারা ফ্ল্যাট তৈরি করি। আর সব শেষ এ পণ্যের দাম গিয়ে পড়বে ফ্ল্যাট ক্রেতার ওপর। ফ্ল্যাটের দাম আরেক দফা বাড়বে। সবমিলিয়ে সামনের দিনগুলোতে অনেকেই ফ্ল্যাট কেনার সক্ষমতা হারাবেন এবং আবাসন ব্যবসায়ীরা ক্রেতা হারাবেন। নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা আরও কঠিন হয়ে যাবে। মৌলিক চাহিদার অন্যতম আবাসন অনেকেই সঠিকভাবে পাবেন না। এমনিতেই ফ্ল্যাট তৈরি কমে গেছে, ফলে আগামীতে ফ্ল্যাটের সংকট তৈরি হবে। যার প্রভাব পড়বে বাড়িভাড়ায়। বাড়িভাড়া বৃদ্ধি পাবে। ফলে ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে স্বল্পআয়ের কর্মজীবীদের কষ্ট আরও বাড়বে।’

তিনি বলেন, ‘রিহ্যাব জাতীয় বাজেট উপলক্ষে আবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে বিভিন্ন সংস্থায় যোগাযোগ করেছে কয়েক বছর ধরে। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে তার কোনোটার প্রতিফলন হয়নি। নীতি সহায়তার অভাবে ক্রমে দেশের আবাসন খাত মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পতিত হয়েছে। অতিরিক্ত করারোপ আবাসন খাতকে ভয়ংকর সংকটের দিকে ঠেলে দেবে।’

আরও পড়ুন>> বাজেটে টেক্সটাইল-রপ্তানি খাতের জন্য তেমন কিছু নেই: এফবিসিসিআই

আবাসন খাতের সংকট সমাধানের বিষয়ে কামাল মাহমুুদ বলেন, ‘এ অবস্থায় আশু পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ সংকট উত্তরণ অসম্ভব। এ মুহূর্তে নতুন করে নানা পণ্যের কর বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে এর একটা বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমাদের শঙ্কা। আবাসন খাত মানে শুধু আবাসন খাত নয়। এর সঙ্গে ৪ শতাধিক লিংকেজ শিল্প জড়িত। আবাসন খাতে সংকট মানে এসব উপখাতে সংকট। আবাসন খাতে ৪০ লাখ নাগরিকের কর্মস্থান। এ খাতের সংকট অর্থনীতিতে সংকট তৈরি করবে আমাদের শঙ্কা। কাজেই বাজেট পাশের আগে এদিকে অবশ্যই সুনজর দেওয়ার আহ্বান জানাই।’

ইএআর/ইএ/জেআইএম