উড়িষ্যায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাথমিক উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ। আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্তত ৬৫০ জন। শনিবার (৩ জুন) ভারতের দক্ষিণপূর্ব রেলওয়ের মুখপাত্র আদিত্য চৌধুরী টাইমস অব ইন্ডিয়াকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
Advertisement
যদিও উদ্ধারকাজ চলাকালীন রাজ্য সরকারের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেছিলেন, দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৮৮ জনে পৌঁছেছে। একই তথ্য দিয়েছিল বার্তা সংস্থা রয়টার্সও। তবে উদ্ধার অভিযান শেষে ভারতীয় দক্ষিণ পূর্ব রেলের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা কে এস আনন্দ বলেছেন, মৃতের সংখ্যা ২৬১ জন।
আরও পড়ুন>> ভারতে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনে ছিলেন বাংলাদেশিরাও
এছাড়া ভারতীয় রেলওয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা বার্তা সংস্থা পিটিআই’কে বলেছেন, উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে। এখন আমরা যোগাযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করবো।
Advertisement
তবে এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে মানুষ থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুপুর সোয়া ৩টা নাগাদ হাওড়ার অদূরে শালিমার স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করেছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। প্রায় চার ঘণ্টা পরে উড়িষ্যার বালেশ্বরের বাহানগা বাজারের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ২৩ বগির ট্রেনটি।
আরও পড়ুন>> ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনা: বাংলাদেশিদের জন্য হটলাইন নম্বর চালু
স্থানীয় সূত্র বলছে, প্রথমে করমণ্ডল এক্সপ্রেসই তীব্র গতিতে গিয়ে ধাক্কা মারে একই লাইনে আগে থেকে চলতে থাকা একটি মালগাড়ির পেছনে। আঘাতে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন মালগাড়ির ওপরে উঠে যায়। ২৩টি বগির মধ্যে ১৫টি বগি লাইন থেকে ছিটকে পাশের ডাউন লাইনে ও নর্দমার মধ্যে গিয়ে পড়ে। তখন পাশের সেই লাইন দিয়ে আসছিল বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস।
Advertisement
করমণ্ডল এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত যেসব বগি ডাউন লাইনের ওপর পড়েছিল, সেগুলোতে গিয়ে ধাক্কা মারে সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। এতে হাওড়াগামী সেই ট্রেনটিরও দু’টি বগি লাইনচ্যুত হয়।
আরও পড়ুন>> ভারতের ইতিহাসে যত ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা
জানা গেছে, দুর্ঘটনাকবলিত করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে বাংলাদেশিরাও ছিলেন। তাদের সংখ্যা ঠিক কত, তা জানা না গেলেও অন্তত ১৫ বাংলাদেশি যাত্রীকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাংলাদেশি যাত্রীদের খোঁজ নিতে এরই মধ্যে কলকাতাস্থ বাংলাদেশের উপ-দূতাবাসের তিন সদস্যের একটি দল রওয়ানা হয়েছে উড়িষ্যার পথে।
উড়িষ্যার মুখ্য সচিব প্রদীপ জেনা টুইটারে বলেছেন, দুই শতাধিক অ্যাম্বুলেন্স ও ১০০’র বেশি চিকিৎসককে দুর্ঘটনাস্থলে ডাকা হয়েছে। এরই মধ্যে সেখানে ৮০ জনের বেশি চিকিৎসক ঘটনাস্থলে কাজ করছেন।
ভারতীয় রেলমন্ত্রী বলেছেন, ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা কেন ঘটলো তা কেবল তদন্তের পরেই নিশ্চিতভাবে বলা যাবে। এর জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন>> চিকিৎসা করাতে বাংলাদেশ থেকে এসেছি, বিপদে পড়ে গেলাম
দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে এককালীন ১০ লাখ রুপি, গুরুতর আহতদের দুই লাখ এবং অল্প আহতদের ৫০ হাজার রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ক্ষয়ক্ষতি দেখতে দুর্ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।
ভারতে গত দু’দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এ রেল দুর্ঘটনায় একদিনের শোক ঘোষণা করেছে উড়িষ্যা সরকার।
কেএএ/