প্রস্তাবিত বাজেটে দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং সুশাসনের বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা নেই বলে দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এগুলোকে দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট ও রিজার্ভ কমার মূল কারণ উল্লেখ করে বাজেট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
Advertisement
শুক্রবার (২ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় ডলার সংকট মোকাবিলা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠনের জন্য আমদানিতে কঠোরতা, ঋণপত্রে নজরদারি অব্যাহত রাখা এবং একাধিক মুদ্রা বিনিময় হার থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের পাশাপাশি দেশের সার্বিক অর্থনীতির অন্তর্নিহিত মরণব্যাধি দুর্নীতি ও অব্যাহত মুদ্রাপাচারের বিষয়টিকে এড়িয়ে গেলেন।
আরও পড়ুন: জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নেই, ২০০০ টাকা ন্যূনতম কর ‘বৈষম্যমূলক’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, সরকারের অজানা নয় যে, বাংলাদেশে যদি মধ্যম মাত্রায় দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হতো, তাহলে জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি কমপক্ষে ২-৩ শতাংশ বেশি হতো। যা জনগণের জন্য হতো অর্থবহ। অন্যদিকে বছরে গড়ে বাংলাদেশ থেকে পাচার হচ্ছে কমপক্ষে ১২ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ। দুর্নীতি ও অর্থপাচারের বিশাল দুষ্টচক্রকে নিয়ন্ত্রণের দিকনির্দেশনাহীন এই বাজেট যে আরও দুর্নীতি ও অর্থপাচারে সহায়ক হবে তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।
Advertisement
পাচার করা অর্থ ফেরত আনার সুযোগ না দেওয়াকে সরকারের ‘শুভবুদ্ধির উদয়’ হিসেবে দেখছে টিআইবি। একই সঙ্গে প্লট ও ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ করে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত না রাখার আহ্বান জানায় সংস্থাটি।
আরও পড়ুন: বাস্তবতার সঙ্গে প্রস্তাবিত বাজেটের কোনো মিল নেই: জিএম কাদের
এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে, দেশের অর্থনীতিতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ করে দিয়ে কোনো সরকারই কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাজস্ব আদায় করতে পারেনি। বরং এর মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ কালো টাকার মালিকদেরই শুধু সুরক্ষা দেওয়া গেছে।
বিবৃতিতে টিআইবি বলছে, দুর্নীতির বৈষম্যমূলক প্রভাবে দেশে ক্রমবর্ধমান আয়-বৈষম্যের পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ ও সুবিধাভোগীর সংখ্যা এবং ভর্তুকি বরাদ্দের ব্যয় ব্যবস্থাপনার দিক থেকেও প্রস্তাবিত বাজেটে ন্যায্যতা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। আয়হীন ও নিম্ন আয়ের মানুষ যতটা চাপে রয়েছে, সে তুলনায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বা সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়েনি।
Advertisement
আরও পড়ুন: এখন ভিক্ষা করতে গেলেও টিন নম্বর লাগবে: ফখরুল
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভাতার পরিমাণও কোনো কোনো ক্ষেত্রে নামমাত্র বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও বাস্তবে তা কোনোভাবেই অর্থবহ হবে না। আবার সরকার বাজেটে সাড়ে ৮৪ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি ও প্রণোদনা ব্যয়ের যে প্রস্তাবনা রেখেছে, সেখানে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকাই রাখা হয়েছে জনপ্রশাসনের জন্য। সামাজিক নিরাপত্তায় ভর্তুকি ও প্রণোদনা মাত্র পাঁচ হাজার কোটি টাকা।
এতে বলা হয়, টিআইবি প্রত্যাশা করে বাজেট পাসের আগেই এসব ক্ষেত্রে সরকার ন্যায্যতা বিধান করবে। বিশেষ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিনির্ভর সুশাসন, এবং দুর্নীতি ও অর্থপাচার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পথরেখা বাজেটের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করবে।
এসএম/জেডএইচ/এএসএম