ভ্রমণ

কালের সাক্ষী ৬০০ বছর পুরোনো ‘ডিভোর্স মন্দির’

কালের সাক্ষী ৬০০ বছর পুরোনো ‘ডিভোর্স মন্দির’

ডিভোর্স টেম্পল বা বিচ্ছেদের মন্দির, নামটি অদ্ভুত শোনালেও এমনই এক ঐতিহাসিক স্থাপনা আছে জাপানে। যার বয়স ৬০০ বছরেরও বেশি। এটি মাতসুগাওকা টোকেইজি মন্দির নামেও পরিচিত।

Advertisement

অনেকেই হয়তো ভাববেন, এই মন্দিরে গিয়ে বোধ হয় দাম্পত্যের অবসান ঘটে অর্থাৎ ডিভোর্স বা বিচ্ছেদ হয়। বিষয়টি কিছুটা এমন হলেও, এই মন্দিরের ইতিহাস অনেক মর্যাদাপূর্ণ।

আরও পড়ুন: ভারত গিয়ে ঘুরে আসুন ছোট্ট ‘বাংলাদেশে’ 

আসলে এই মন্দির প্রতিষ্ঠার পেছনের উদ্দেশ্য ভিন্ন। জাপানের কানাগাওয়া প্রিফেকচারের কামাকুরা শহরের মাতসুগাওকা টোকেইজি নামক মন্দিরে অতীতে অসংখ্য নারী আশ্রয় নিত।

Advertisement

যারা মূলত পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে, তারাই স্বামীর কাছ থেকে বাঁচতে এই নিরাপদ মন্দিরে গিয়ে আশ্রয় নিতেন। যা সত্যিই দুঃখজনক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা।

এরপর থেকেই এই বৌদ্ধ মন্দির ঐতিহাসিক হয়ে ওঠে যুগে যুগে। জানা যায়, তখনকার সময় নারীদের কোনো অধিকার ছিল না ও জাপানে বিচ্ছেদেরও কোনো বিধান ছিল না। সেই যুগে নারীরা তাদের নিপীড়নকারী স্বামীর কাছ থেকে পালিয়ে আশ্রয় খুঁজতেন এই মন্দিরে।

আরও পড়ুন: অবিশ্বাস্য ‘লাল নদী’ দেখলেই জুড়াবে চোখ 

মন্দিরের ইতিহাস

Advertisement

মন্দিরটি ১২৮৫ সালে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী কাকুসান শিডো-নি প্রতিষ্ঠা করেন। তখন (১১৮৫-১৩৩৩ সালের মধ্যে), জাপানে নারীদের সীমিত আইনি অধিকার ও অনেকগুলো সামাজিক বিধিনিষেধ ছিল। ফলে অনেক নারীই পারিবারিক নির্যাতন থেকে বাঁচতে মন্দিরে আশ্রয় নিতেন।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরটি একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল ও একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে জনপ্রিয় হতে শুরু করে। যেখানে অসুখী নারীরা সুরক্ষা পেতে পারে ও যন্ত্রণাদায়ক সম্পর্ক থেকে তাদের মুক্তি পেতে পারে।

পরবর্তী সময়ে টোকেইজি মন্দির কর্তৃক ‘সুইফুকুজি’ নামে পরিচিত এ ধরনের নারীদেরকে আনুষ্ঠানিক বিবাহবিচ্ছেদের শংসাপত্র প্রদান করা শুরু করে।

আরও পড়ুন: সঙ্গীকে নিয়ে দুবাই ভ্রমণে যে ভুল করলে হতে পারে জেল 

এই সার্টিফিকেট তাদের বিবাহ থেকে আইনি স্বাধীনতা প্রদান করেছে। এরপর থেকেই মন্দিরটির নাম দেওয়া হয় ‘কাকেকোমি-ডেরা’ অর্থাৎ সম্পর্ক ছিন্ন করার মন্দির।

এই মন্দিরের সৌন্দর্য দেখেও আপনিও মুগ্ধ হয়ে যাবেন। মন্দিরের আশপাশের, সুন্দর বাগান ও ৬০০ পুরোনো ও সংরক্ষিত মন্দিরের প্রেমে পড়ে যাবেন।

আরও পড়ুন: প্রিয়জনকে নিয়ে থাইল্যান্ড ভ্রমণে ঘুরে দেখবেন যেসব স্পট 

যদিও মন্দিরটি বর্তমানে বিবাহবিচ্ছেদ সম্পর্কিত কোনো সেবা এখন প্রদান করে না। তবে প্রাচীন নারীদের করুণ অবস্থার সুন্দর এক অনুস্মারক মন্দিরটি।

আজও মন্দিরটি জাপানের ইতিহাসে নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বাধীনতার একটি উল্লেখযোগ্য প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। চাইলে জাপান ভ্রমণে ঘুরে আসতে পারেন ঐতিহাসিক এই ডিভোর্স মন্দিরে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

জেএমএস/জিকেএস