ধর্ম

জুমার প্রথম খুতবা: হজের জরুরি মাসায়েল ও বদলি হজ

আজ শুক্রবার। বরকতময় হজের প্রস্তুতির মাস জিলকদের দ্বিতীয় জুমা আজ। ০২ জুন ২০২৩ ইংরেজি, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বাংলা, ১২ জিলকদ ১৪৪৪ হিজরি। আজকের জুমার আলোচ্য বিষয়- হজের জরুরি মাসায়েল ও বদলি হজ।

Advertisement

প্রিয় মুসল্লিগণ!

হজ ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি। প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন যে ব্যক্তির মালিকানায় নিত্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র এবং নিজের ও পরিবারের ভরণ-পোষণের খরচের অতিরিক্ত এমন পরিমাণ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ-রূপা বা জমিজমা রয়েছে, যা দ্বারা সে হজে যাওয়া-আসার ব্যয় এবং হজকালীন সময়ে সাংসারিক খরচ মেটাতে সক্ষম। তার ওপর হজ আদায় করা ফরজ। আর এ হজ জীবনে একবারই ফরজ। ফরজ হজ আদায়ের পর বার বার হজ করলে তা নফল হিসেবে গণ্য হবে।

সামথ্যবান মানুষের ওপর হজ করা ফরজ। কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তাআলা বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন-

Advertisement

وَ لِلّٰهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الۡبَیۡتِ مَنِ اسۡتَطَاعَ اِلَیۡهِ سَبِیۡلًا ؕ

‘আর সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বাইতুল্লাহর হজ করা ফরজ।’ (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ৯৭)

প্রিয় মুসল্লিগণ!

এ আয়াতে কারিমায় মহান আল্লাহ তাআলা সামথ্যবান মানুষকে তাঁর ইবাদত হজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে। সম্পূর্ণ রাহা-খরচ পূরণ হওয়ার মত যথেষ্ট পাথেয় যার কাছে আছে। অনুরূপ রাস্তার ও জান-মালের নিরাপত্তা এবং শারীরিক সুস্থতা ইত্যাদিও সামর্থ্যের অন্তর্ভুক্ত। নারীর জন্য মাহরাম (স্বামী অথবা যার সঙ্গে তার বিবাহ চিরতরে হারাম এমন কোন লোক) থাকাও জরুরি। (ফাতহুল কাদির) এই আয়াত প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর হজ ফরজ হওয়ার দলিল। হাদিস দ্বারা এ কথাও পরিষ্কার হয়ে যায় যে, হজ জীবনে একবারই ফরজ। (ইবনে কাসির)

Advertisement

প্রিয় মুসল্লিগণ!

হজ-ওমরার আমলের ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখলে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। এ নিয়ে কারো সঙ্গে বিতর্কে জড়ানোও উচিত নয়। বরং দেশের যে আলেমের ইলম ও তাকওয়ার প্রতি আপনার আস্থা রয়েছে তার সমাধান বা দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আমল করবেন। নিম্নে ভিন্নতার একটি দৃষ্টান্ত পেশ করা হল।

মিনা, মুজদালিফা কি মক্কার অংশ?

মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতে চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত পড়া হবে নাকি চার রাকাত? এ নিয়ে ভিন্নতা দেখা যায়। এক্ষেত্রে মাসআলা হলো-

‘যদি কেউ মিনা যাওয়ার আগে মক্কায় একনাগাড়ে ১৫ দিন থাকার নিয়তে অবস্থান করেন তাহলে তিনি নিশ্চিত মুকিম। তিনি মিনা, মুজদালিফা ও আরাফায় পূর্ণ নামাজ পড়বেন। কসর করবেন না।’ (বাদায়েউস সানায়ে ১/২৭০; আলবাহরুল আমীক ৩/১৪১৮; মানাসিক ১৯৬)

আর যে হাজির মক্কা ও মিনাসহ ১৫ দিন অবস্থান হয়ে যায়, তার ব্যাপারে পূর্ণ নামাজ পড়া বা না পড়া নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্যই আছে। অধিকাংশের মত হল, মিনা মক্কা শহরের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং আরাফার আগে মিনা-মক্কাসহ ১৫ দিন অবস্থান হলে মুকিমই গণ্য হবেন। এক্ষেত্রে মিনার তাঁবু মুযদালিফার অংশে পড়লেও মিনার তাঁবুর সাথে সংযুক্ত হওয়ার কারণে এক এলাকা এবং একই বসতি গণ্য করে মুকিম ধরা হবে।

১৪২৪ হিজরিতে আজিজিয়া থেকে একটি বসতি বৃদ্ধি হয়ে মুজদালিফার অংশে এসে গেছে। তাই মিনার মতো মুজদালিফাও মক্কার অংশ। সুতরাং কোনো ব্যক্তির মক্কা, মিনা ও মুজদালিফাসহ ১৫ দিন অবস্থান হয়ে গেলেও তিনি মুকিম গণ্য হবেন। (ইযাহুল মানাসিক, মুফতী শাব্বীর আহমদ, জামেয়া কাসেমিয়া, শাহী মুরাদাবাদ, ইন্ডিয়া)

মোটকথা, মিনা, মুজদালিফা মক্কার অন্তর্ভুক্ত হওয়া এবং সে হিসেবে ১৫ দিন হয়ে গেলে পূর্ণ নামাজ পড়া বা কসর পড়া উভয় মতের পক্ষে দলিল আছে। সুতরাং যে মতের উপরই আমল করা হোক নামাজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

তাই এক্ষেত্রে জরুরি হলো, এ নিয়ে বিচলিত না হওয়া এবং কারো সঙ্গে বিতর্কে জড়ানো যাবে না। কোনো পক্ষের আমলকে ভুল সাব্যস্ত করা যাবে না; বরং আপনি যাদের সঙ্গে আছেন তাদের সঙ্গে মিলে জামাতে নামাজ পড়ে নেবেন। মনে রাখবেন, হজ বড় ধরনের ঐক্যের প্রতীক। এতে বিভেদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও বর্জনীয়।

ইহরামের পর হজে যেতে না পারলে করণীয় কী?

ইহরাম করার পর শরীয়তসম্মত ওজরের কারণে মক্কায় যাওয়া সম্ভব না হলে যেমন, সরকারীভাবে বাধাগ্রস্ত হলে কিংবা ফ্লাইটের সমস্যার কারণে যাওয়া না হলে বা মারাত্মক অসুস্থতার কারণে যাওয়া সম্ভব না হলে, নারীর মাহরাম মারা যাওয়া বা মাহরামের সফর মুলতবি হওয়ার কারণে নারীর হজযাত্রা বিরতি করলে বা নারীর স্বামী মারা গেলে (যেহেতু ইদ্দতের কারণে সফর স্থগিত করা জরুরি) এসব ক্ষেত্রে হজ বা ওমরার ইহরাম থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য কারো মাধ্যমে হারামের এলাকায় একটি কোরবানি করতে হবে। কিরানকারীর জন্য দুটি কোরবানি করতে হবে। কোরবানি করার আগ পর্যন্ত ইহরামের নিষিদ্ধ কাজ থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। কোরবানি করার দ্বারা ঐ ব্যক্তি হালাল হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে হালাল হওয়ার জন্য মাথা মুণ্ডানো জরুরি নয়। তবে কোরবানির পর মাথা মুণ্ডিয়ে নেওয়া বা চুল কেটে নেওয়া মোস্তাহাব।

তবে পরবর্তীতে হজ কাজা করা ওয়াজিব। যদি ইফরাদ হজের ইহরাম করার পর বাধাগ্রস্ত হয়ে হালাল হয়ে থাকেন তাহলে পরবর্তীতে একটি হজ এবং একটি উমরা কাজা করতে হবে। অবশ্য যে বছর বাধাগ্রস্ত হয়েছেন সে বছরই যদি হজে যাওয়ার সুযোগ হয়ে যায় তবে কাজার নিয়ত করতে হবে না এবং আলাদা ওমরাও করতে হবে না; বরং শুধু ইফরাদ হজ করলেই হবে।

আর যদি কিরানের ইহরাম করার পর তা  ত্যাগ করে থাকেন তবে এক হজ এবং দুই ওমরা করতে হবে। এক্ষেত্রে কিরান করার পর আলাদা ওমরা আদায় করতে পারেন অথবা ইফরাদ হজ করে পৃথক দুটি ওমরাও করতে পারেন। অবশ্য এক্ষেত্রেও একই বছরে হজ করার সুযোগ পেলে শুধু কিরান হজ করলেই চলবে। কিংবা ইফরাদ হজ ও এক ওমরা করতে হবে।

আর যদি ওমরার ইহরাম থেকে হালাল হয়ে থাকেন চাই তা তামাত্তু হজের ওমরা হোক বা পৃথক ওমরা হোক; উভয় ক্ষেত্রে পরবর্তীতে একটি ওমরা করতে হবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, ১২৯৪৭, ১২৯৪৯, ১৩২৩৫, ১৩২৩৮, ১৩২৪১; কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদিনা ১/৪৫০. আলমাবসুত, সারাখসী ৪/১০৬-১১০, মুআল্লিমুল হুজ্জাজ ২৭৫-২৭৬; যুবদাতুল মানাসিক ৪২৯-৪৩২)

 তামাত্তু হজকারী ওমরা করার পর মদিনা থেকে কিসের ইহরাম করবে?

তামাত্তু হজ পালনকারী যদি প্রথমে ওমরা করতঃ হালাল হওয়ার পর মদিনা মোনাওয়ারা যান তাহলে তার জন্য মদিনা থেকে মক্কা ফিরে আসার সময় শুধু ওমরার ইহরাম করা কিংবা শুধু হজের ইহরাম করা উভয়টিই জায়েজ। তবে এক্ষেত্রে ওমরার ইহরাম করলে মিকাত থেকে একটি অতিরিক্ত ওমরাহ করার সওয়াব পাবে। কিন্তু এ অবস্থায় কিরান হজের নিয়তে হজ ও ওমরার একত্রে ইহরাম করা জায়েজ নয়।

কিরানের নিয়তে ইহরাম করলে ওমরার ইহরামটি বাতিল করে দেওয়া জরুরি। অর্থাৎ সে হজের আগে ওমরাহ আদায় করবে না; বরং ঐ ইহরামেই শুধু হজ পালন করবে। এতেই তার ওমরার ইহরামটি বাতিল হয়ে যাবে। আর ওমরার ইহরামটি বাতিল করার কারণে জরিমানা হিসেবে একটি দম দিতে হবে এবং ঐ ওমরাটি ১৩ জিলহজের পর নতুন ইহরাম করে কাজা করে নিতে হবে। অবশ্য এক্ষেত্রে তার হজটি তামাত্তু হজই হবে। তাই তাকে দমে শোকর তথা হজের কোরবানিও দিতে হবে।

আর যদি ওমরার ইহরাম বাতিল না করে অর্থাৎ কিরানের ইহরাম করার পর ওমরা করে নেয় তাহলে তা অন্যায় হবে এবং সে গুনাহগার হবে। এক্ষেত্রে কিরানের ইহরাম করে তা সম্পন্ন করার কারণে একটি জরিমানা দম আদায় করতে হবে এবং পূর্বের ন্যায় তাকে দমে শোকরও দিতে হবে। (গুনইয়াতুন নাসিক ২১৫; ২৩০)

মসজিদে আয়েশা থেকে একাধিক ওমরাহ

তামাত্তু হজ পালনকারীর জন্য মক্কায় অবস্থানকালে নফল ওমরাহ করা জায়েজ আছে। ওয়ালিদ বিন হিশাম বলেন, আমি হজের পরে ওমরা করার ব্যাপারে উম্মুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা ১৩০১৬)

মক্কাবাসী এবং যারা হজের জন্য মক্কায় এসেছেন সকলের জন্য ওমরার ইহরামের স্থান হল হিল। ‘তানয়িম’ হিলের অন্তর্ভুক্ত। যেখান থেকে হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু হজের পর ওমরার ইহরাম করেছিলেন। এজন্য ঐ মসজিদকে মসজিদে আয়েশা বলা হয়। (বুখারি ৩১৬, ১৫৫৬)

হজরত আবদুল্লাহ বিন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুও তানয়িম থেকে ওমরার ইহরাম করেছেন। (মুআত্তা মালেক ৮১৩)

হজরত ইবনে সিরিন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

بَلَغَنَا اَنَّ رَسُوْلَ اللّهِ صَلَّيْ اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَّتَ لِاَهْلِ مَكَّةَ التَّنْعِيْمَ

আমরা অবগত হয়েছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আহলে মক্কার জন্য তানয়িমকে মিকাত নির্ধারণ করেছেন। (ফাতহুল বারি ৩/৬০৬)

আর তানয়িম তথা মসজিদে আয়েশা বা হিলের অন্য যে কোনো স্থান যেমন- মসজিদে জির্য়িরানাহ বা মসজিদে হুদাইবিয়া থেকেও ওমরার ইহরাম করা যাবে। তবে নফল ওমরার জন্য যে সময় ব্যয় করা হয় এ পরিমাণ সময় ধরে নফল তওয়াফ করা উত্তম। তদ্রুপ এক ওমরার চেয়ে একাধিক তওয়াফ করাও উত্তম। তাই এক মাসে একাধিক ওমরা না করে তওয়াফে বেশি বেশি সময় কাটানো উচিত। (বুখারি ১/২১১; ফাতহুল বারি ৩/৭১০, মাবসুত সারাখসী ৪/১৭০, মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা ১৬০৮৭, গুনইয়াতুন নাসিক ১৩৮, রদ্দুল মুহতার ২/৫০২; আলবাহরুল আমিক ৩/১৩১৯)

 হজের ইহরাম অবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস

হজের ইহরামের পর আরাফায় অবস্থানের আগেই কারও যদি স্ত্রীর সঙ্গে মিলন হয়ে যায় তাহলে তার হজ নষ্ট হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে তার করণীয় হল, সে যথা নিয়মে হজের কার্যাদি সম্পন্ন করে হালাল হবে। এবং হজটি নষ্ট করার জন্য তাকে জরিমানা স্বরূপ একটি দম দিতে হবে। এবং পরবর্তীতে ঐ হজটি কাজা করতে হবে।

আর আরাফায় অবস্থানের পর তওয়াফে যিয়ারত ও মাথা মুণ্ডানোর আগে যদি স্ত্রীর সঙ্গে মিলন হয় তাহলে তাকে জরিমানা স্বরূপ একটি ‘বাদানা’ দিতে হবে। তবে তার হজটি নষ্ট হবে না। তাই পরবর্তীতে তা আর কাজা করতে হবে না। (আলবাহরুর রায়েক ৩/১৬, মানাসিক ৩৩৯)

মাতাফ ও মসজিদে হারামে নামাজির সামনে দিয়ে আসা-যাওয়া

মাতাফে নামাজির সামনে দিয়ে তওয়াফকারী এবং অন্যান্যদের চলাচল করা জায়েজ। আর মসজিদুল হারামেও নামাজির সামনে দিয়ে তওয়াফকারীদের চলাচল করা জায়েজ। তবে মসজিদে হারামে তওয়াফকারী ছাড়া অন্যদের চলাচলের ব্যাপারে দ্বিমত আছে। অনেকেই এটিতে ব্যাপকভাবে জায়েজ বলেছেন। যেমন- ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, ইমাম তহাবী প্রমুখ ইমামগণ। আর তাদের এ মতকে গ্রহণ করেছেন ইবনে আবেদীন শামী, ইউসুফ বিন্নুরী, যফর আহমদ উসমানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। কেননা এ সম্পর্কে সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে আমল প্রমাণিত আছে। যেমন-

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু, আতা, মুজাহিদ, ইবনে আবী মুলাইকা রাহিমাহুল্লাহ প্রমুখ সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল। অবশ্য ভিড় না হলে মসজিদে হারামে যথাসম্ভব নামাজির সেজদার জায়গা এড়িয়ে আরও সামনে দিয়ে চলাচল করা অধিক সতর্ক হতে হবে। (আলমুগনী ৩/৮৯, ইবনে হিব্বান ৬/১২৮, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/৩৫, মুসনাদে আহমাদ ২৭২৪১, তাহজিবুল আসার ৫২৬, আলআওসাত ৫/৯৩, শরহু মুশকিলিল আছার ৭/২৮, ইলাউস সুনান ৫/৮৪, মাআরিফুস সুনান ৩/৩৫৩, রদ্দুল মুহতার ২/৫০১)

ইহরামের পর মিকাতের বাইরে যাওয়া যাবে কি?

হজ বা ওমরার ইহরাম করার পর তা থেকে হালাল হওয়ার আগে কেউ যদি মিকাতের বাইরে চলে যায়, যেমন- ইফরাদ বা কিরান হজের ইহরাম করার পর হজ বা ওমরার আগে তায়েফ বা মদিনা মোনাওয়ারা যায় তাহলে তার ইহরাম নষ্ট হবে না এবং এ কারণে তার উপর কোনো জরিমানাও আসবে না। আর এক্ষেত্রে যেহেতু ইহরাম অবস্থায়ই আছে তাই ফেরার সময় মিকাত অতিক্রমকালে পুনরায় ইহরাম করা লাগবে না। (মানাসিক ৯২, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১০/৩৮৪)

বদলি হজ

বদলি হজে করণীয় কী? কাদের জন্য বদলি হজ করানো জায়েয? তাহলো-

১. যিনি হজ করার মতো শারীরিক শক্তি একেবারেই হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি বদলি হজ করাবেন।

২. কারও সহায়তা নিয়েও চলাফেরা কিংবা যানবাহনে উঠা-নামা করতে যিনি একেবারেই অক্ষম হয়ে পড়েছেন। তিনি বদলি হজ করাবেন।

৩. হজের সফরে সঙ্গী হওয়ার জন্য কোনো মাহরাম পাননি এমন নারী শারীরিক শক্তি একেবারেই হারিয়ে ফেললে। তিনি বদলি হজ করাবেন।

৪. ফরজ হজ না করে মৃত্যুবরণ করলে তার উত্তরাধিকারীর ওপর বদলি হজ করানো জায়েজ। (মুআত্তা মুহাম্মাদ ৪৮০-৪৮২, মানাসিক ৪৩৫-৪৩৬)

বদলি হজের জন্য প্রেরণকারী অনুমতি দিলে তামাত্তু বা কিরান হজও করা জায়েয। তদ্রুপ বিশেষভাবে ইফরাদ হজ করার নির্দেশ না দিলে সেক্ষেত্রেও কিরান ও তামাত্তু যেকোনোটি করা জায়েজ। (আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৫২৩, হজ ওয়া ওমরা কে জাদিদ মাসাইল আওর উনকা হল ৬০০)

বদলি হজ এমন ব্যক্তিকে দিয়ে করানো উচিত যিনি আগে হজ করেছেন এবং হজের মাসায়েল সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখেন। অনেকে মনে করেন, বাবা-মায়ের বদলি হজ সন্তানেরই করা উচিত। তাই মাসায়িলের জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও ছেলে নিজেই বদলি করে থাকেন। এক্ষেত্রে মুত্তাকী, বিজ্ঞ আলেম দ্বারা বদলি করানোই শ্রেয়। (মানাসিক ৪৫২, ৪৫৪; গুনইয়াতুন নাসিক ৩৩৭)

যে ব্যক্তি সরকারি খরচে কিংবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির খরচে হজে যাচ্ছেন (যেমন হজের মুআল্লিমগণ) তাকে দিয়ে বদলি হজ করানো যাবে না। কেননা, যার বদলি করা হচ্ছে তার ব্যয়েই হজ করা জরুরি। অন্যথায় বদলি হজ আদায় হবে না। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা ৮/৫৯৯, মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ৪৩৮, গুনইয়াতুন নাসিক ৩২৩)

বদলি হজের ইহরাম ও নিয়ত

বদলি হজকারী তামাত্তু হজ করুক বা অন্য কোনো প্রকার হজ, যার পক্ষ থেকে বদলি করছে তার পক্ষ থেকে ইহরামের নিয়ত করবেন। এভাবে যে, আমি অমুকের পক্ষ থেকে ওমরার ইহরাম করছি। এরপর হজের ইহরাম বাঁধার সময় এভাবে নিয়ত করবেন, আমি অমুকের পক্ষ থেকে হজের ইহরাম করছি।

কিরানকারী নিয়ত করবেন, আমি অমুকের পক্ষ থেকে একত্রে ওমরাহ ও হজের ইহরাম করছি। এরপর তালবিয়া পড়বেন।

উল্লেখিত নিয়মেই প্রেরকের পক্ষ থেকে ইহরাম করা যথেষ্ট। তাই তওয়াফ, সাঈ, কোরবানি ইত্যাদি কোনো আমলের সময় প্রেরকের পক্ষ থেকে করার নিয়ত করতে হবে না। সেখানে স্বাভাবিকভাবে আমলগুলোর নিয়ত করাই যথেষ্ট। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা ১৩৭২৫)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব হজ পালনকারীকে হজের সফরে এ বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস