ধর্ম

‘আল্লাহ ভীতি’ গুনাহমুক্ত থাকার উপায়

সত্য ও ন্যয়ের পথে চলতে যুবকদের জন্য আল্লাহকে ভয় করা বেশি জরুরি। এর জন্য প্রয়োজন জাহান্নামের আগুনকে ভয় করা। আর সঠিক পথে থাকার অন্যতম উপায় হলো আল্লাহকে ভয় করা। যুবকদের জন্য আল্লাহকে ভয় করার অনুপ্রেরণা হিসেবে একটি ঘটনা ‘আল্লাহর ভীতি’-শিরোনামে ওঠে এসেছে সোনালী পাতায়। কী সেই ঘটনা?

Advertisement

আল্লাহর ভয়

হজরত ইমাম ইবনে হাজেম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি একটি ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘তাকে এমন এক ব্যক্তি এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন, যিনি সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত। ঘটনাটি হলো-

‘কর্ডোভা (স্পেনের) শহরের অধিবাসী এক যুবক। সে অত্যন্ত সুন্দর ছিল। যে-ই তাকে দেখতো; সে-ই তাকে পছন্দ করতো। ওই যুবক সুন্দর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যথেষ্ট আল্লাহ ভিরু এবং পরহেজগারও ছিল।

Advertisement

তার একজন বন্ধু ছিল; যার সঙ্গে তার খুব মুহব্বত (অন্তরিক ভালোবাসা) ছিল। সে স্বপরিবারে অন্য এক এলাকায় বসবাস করতো। একদিন ওই পরহেজগার সুদর্শন যুবক তার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার জন্য তার বাড়িতে গেল। সে বাড়িতেই সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। তখন বন্ধু তাকে রাতে তার বাড়িতে রাত যাপনের প্রস্তাব দেয়। বন্ধুও এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।

ঘটনাক্রমে ঐ রাতে তার বন্ধুর পাশের এলাকা থেকে কোনো জরুরি কাজে তাকে ডাকা হলো। বাড়িওয়ালা বন্ধু মেহমান পরহেজগার বন্ধুকে বললো, যে তুমি আমার জন্য অপেক্ষা কর; আমি একটু পরেই ফিরে আসছি। ওই মুহূর্তে ঘরের মধ্যে সুন্দর ও পরহেজগার যুবক ও বন্ধুর স্ত্রী একাই ছিল।

সময়টি ছিল শীতকাল। আবার প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। সে অঞ্চলে ঠাণ্ডার সময় রাত লম্বা ও অন্ধকার হতো। ঘরের সুন্দর ও পরহেজগার যুবক মেহমান তার বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করতে লাগল কিন্তু সে আসছিল না। এদিকে রাত গভীর হওয়ায় বাড়ির গেট বন্ধেরও সময় হয়ে এলো। তার বন্ধুর জরুরি কোনো কাজ থাকায় সে আর রাতে বাড়ি ফিরে আসতে পারেনি।

এদিকে তার স্ত্রী দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে গেলো যে, তার স্বামী রাতে আর ফিরবে না। তাই সে সাজ-সজ্জা করে ঐ যুবকের কাছে চলে এলো এবং নিজেকে পেশ করলো; কিন্তু পরহেজগার যুবক তা প্রত্যাখ্যান করলো। নারী বারবার তাকে পাপে লিপ্ত হতে আহ্বান জানাতে থাকলো। যুবকটি একবার প্রলোভিত হয়ে সঙ্গে সঙ্গেই নিজেকে সংবরণ করে নিল।

Advertisement

ঘরে তখন লাইট জ্বলছিল। তখন যুবকটি তার হাত লাইটের উপর রেখে আবার সরিয়ে নিলো। সে তখন মনে মনে বলতে লাগলো, দুনিয়ার এ সামান্য আগুনের তাপ সহ্য করতে পারতেছি না, অথচ জাহান্নামের আগুনের তুলনায় এ আগুন কিছুই না।

নারী আবার তাকে পাপ কাজে লিপ্ত হওয়ার আহ্বান জানালো। যুবকটি আবার নিজেকে আগুনের কাছাকাছি করলো। এতে তার শরীরে একটু তাপ লাগার পর সে আবার দূরে সরে এলো। এভাবে যখনই তাকে পাপে লিপ্ত হতে বলা হয় তখনই সে নিজেকে আগুনের কাছাকাছি করে এবং কিছু তাপ লাগার পর আবার নিজেকে সরিয়ে নেয়।

সারা রাতই যুবকটি এভাবে আল্লাহর ভয়ে রাত জেগে তওবা-ইসতেগফারের মাধ্যমে কাটিয়ে দেয়। বার বার আগুনের তাপ নেওয়ার ফলে সকাল হতে হতে তার বৃদ্ধাঙ্গুলটি আগুনের তাপে কালো হয়ে গিয়েছিলো।

আল্লাহর ভয়ই পারে মানুষকে সঠিক পথে ফেরাতে। দুনিয়ায় সঠিক পথের ওপর থাকতে পারলেই পরকালের কঠিন আগুন থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হবে।

আল্লাহ তাআলা গোটা দুনিয়ার মুসলিম নর-নারীকে আল্লাহর ভয়ে ভীত হওয়ার তাওফিক দান করুন। অন্যায় পরিহার করে ন্যয়ের ওপর অটল ও অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম