ই-কমার্স খাতে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে অংশীজনের মতামত গ্রহণ শেষে বিগত ২০২১ সালের ৪ জুলাই ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা প্রকাশ করে সরকার। এই নির্দেশিকায় সে সময়ের সৃষ্ট সমস্যার সমাধানে তাৎক্ষণিক কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যা প্রতিপালনের মাধ্যমে এই খাতে পঞ্জি স্কিম তথা অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ মডেল রহিত করা সম্ভব হয়। ই-কমার্সের নামে যে এমএলএম শুরু হয়েছিল তার লাগাম টেনে ধরা হয়েছিল। এ সংক্রান্ত অপরাপর পক্ষসমূহের কাছে সরকারের অবস্থান বিষয়ক একটি বার্তা যায়। এটি কোনো আইন না হলেও এই প্রচেষ্টায় দেশে বিতর্কিত মডেল এর ই-কমার্স বন্ধ হয়ে গেছে বলা যায়।
Advertisement
সাময়িক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা গেলেও এই নির্দেশিকা স্থায়ী ও গভীর কোনো সমাধান নয়। কারণ এটা আইন বা বিধি নয়। এটা প্রতিপালন না করলে শাস্তি বা আইনের আওতায় আনার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে নিবর্তনমূলক ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাগ্রহণের একটা যুহাত বা অসিলা (অযুহাত নয়) তৈরি হয়েছে।
কী আছে এই নির্দেশিকায়?ই-কমার্স নির্দেশিকায় অধ্যায় ৩ এ আলোচনা করা হয়েছে মার্কেটপ্লেসে পণ্য পরিদর্শনের নিয়ম। এখানে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো আলোচনায় এসেছে এবং বাহুল্য নেই। এজন্য দুটো বিষয় এর সূত্র হিসেবে কাজ করেছে। একটি হলো ভোক্তা অধিকার আইনে প্রচলিত ব্যবসার ক্ষেত্রে পণ্যের গায়ে কী ধরনের তথ্য থাকবে এবং তা কীভাবে উপস্থাপন করতে হবে এ সংক্রান্ত বিধান। অপরদিকে যারা ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে এখানে মতামত দিয়েছেন তাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা।
আরও পড়ুন: আগ্রহের বিষয় নিয়েই আগাতে হবে: সুশান্ত পাল
Advertisement
অধ্যায় ৩ এর ৩ নং অনুচ্ছেদ পণ্য ডেলিভারি সংক্রান্ত বিধান আলোচনা করা হয়েছে। এটি খুব মুখ্য ও প্রভাবক সিদ্ধান্ত। এতে বলা হয়েছে, যদি পণ্যমূল্য পরিশোধ করা হয় এবং ফরমায়েশ বা অর্ডার দেওয়া হয়। তাহলে পণ্য ডেলিভারি দিতে হবে একই শহরের ক্ষেত্রে ৫ দিন এবং ভিন্ন ভিন্ন শহরের ক্ষেত্রে ১০ দিনের মধ্যে।
একই অধ্যায়ের অন্য একটি অনুচ্ছেদে অভিযোগ ও প্রতিকারের কথা বলা হয়েছে। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে। সেটা হলো- কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে ক্রেতা যদি অভিযোগ করেন তাহলে সেটা সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সমাধান করে ক্রেতাকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।
এই নির্দেশিকার গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি দিক যেটি কার্যকর করার মাধ্যমে পঞ্জিস্কিমকে রহিত করার পথ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে, সেটি হলো অগ্রিম মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে যদি ১০ দিনের মধ্যে ক্রেতাকে পণ্য বা মূল্যফেরত নিশ্চিত করতে হবে।
তবে শুধু নির্দেশিকায় কিন্তু কাজ হয়নি। এখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টেকনিক্যাল কমিটিকে কাজ করতে হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে কিছু রক্ষণশীল সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হয়েছে। জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে নির্দেশনার মাধ্যমে কিছু প্রতিষ্ঠানের টাকা গেটওয়েতে আটকে রাখার মাধ্যমে দুটো কাজ হয়েছে- প্রথমত, আটকে থাকা অর্থ পরে গ্রাহকদের ফেরত দেওয়ার পথ তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, অন্যদের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
আরও পড়ুন: রাফসান সাবাবের ‘হোয়াট এ শো’
কী নেই নির্দেশিকায়?এই নির্দেশিকায় বেশকিছু বিষয় অনুপস্থিতি রয়েছে। মজার ব্যাপার হলো এতে মার্কেটপ্লেসের সংজ্ঞা থাকলেও ই-কমার্স সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়নি। ধারণা করা হয়, ই-কমার্সের সংজ্ঞা পরবর্তী কোনো আইনে সংযুক্ত করার জন্য এখানে রাখা হয়নি। সাধারণত বিধি তৈরি করার সময় আইনের কাঠামোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। আইনের সঙ্গে সম্পর্ক ও সামঞ্জস্য রাখা হয়। ভবিষ্যতে কোনো বিষয়ে আইন হওয়ার কথা থাকলে তখন এ ধরনের মৌলিক বিষয় আইনের জন্য রেখে দেওয়া হয়। তাছাড়া তখন ই-কমার্স সংজ্ঞার চেয়ে মার্কেটপ্লেসের সংজ্ঞার সম্পর্কে নীতি নির্ধারকদের একটি বার্তা দেওয়া প্রয়োজন হয় যে, মার্কেটপ্লেস এবং ই-কমার্স শপের মধ্যে একটি অন্তত পার্থক্যরেখা রয়েছে।
এ অধ্যায়ের দুটি প্রধান ঘাটতি রয়েছে, এর একটি হলো- ক্রেতার অধিকার ব্যতিত বিক্রেতা বা সেলারদের সঙ্গে মার্কেটপ্লেসের কী ধরনের আচরণ থাকবে তা আলোচনায় আনা হয়নি। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে মার্কেটপ্লেসকে পণ্য সরবরাহকারীরা পণ্য বিক্রির বা পণ্য গ্রহণের ১৫ দিনের মধ্যে তাদের পাওনা নিশ্চিত করার বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে একটি নীতিগত সিদ্ধান্তের আশা করা হয়েছিল; সেটি এখানে আসেনি।
আরও পড়ুন: আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে সফট স্কিল ওয়ার্কশপ
আরেকটি বিষয় হলো ক্রস বর্ডার ই-কমার্স। আমাদের করোনা পূর্ববর্তী এই খাতে ৭৪% প্রবৃদ্ধি ছিল। এখন তা আরও বেড়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে আইসিটি খাতে ৫ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের যে লক্ষ্যমাত্রা সরকার ঠিক করেছে, তা অর্জন সহজতর হবে। এখানে ক্রস বর্ডার ই-কমার্সের দিকটা বাদ দেওয়া হয়েছে।
এ নির্দেশিকার গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- এটি পরে ভোক্তা অধিকার আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী এবং প্রস্তাবিত ডিজটাল কমার্স আইনের খসড়া তৈরিতে একটি মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করেছিল।
এসইউ/জেআইএম