দেশজুড়ে

দুর্ভোগ লাঘবের সাঁকোতে দ্বিগুণ টোল আদায়

এমনিতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে খাল পারাপার হতে হয়। তার ওপর আবার বাড়তি টোল আদায়। এতে বিপাকে পড়েছেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার চরকাশীপুরের আলাউদ্দিন হীরা গুদারাঘাট এলাকার বাসিন্দারা। প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে তিন হাজার এলাকাবাসীকে এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে খাল পারাপারে পাঁচ থেকে ১০ টাকা করে গুনতে হয়।

Advertisement

তাদের অভিযোগ, যারা ঘাট পরিচালনা করছেন তারা নিজেদের ইচ্ছামতো টাকা আদায় করছেন। একটি ব্রিজের প্রয়োজন হলেও এখানে সেটি হচ্ছে না। সেইসঙ্গে বাড়তি টাকা আদায়ের বিষয়েও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।

তবে স্থানীয় চেয়ারম্যান বলছেন, খাল পার হতে তিন টাকা করে নিতে ঘাটের ইজারাদারকে বলা হয়েছে। এর বেশি নেওয়া হলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার চর কাশীপুরের আলাউদ্দিন হীরা গুদারাঘাট এলাকায় একসময় কোনো বাসিন্দা ছিল না। ধীরে ধীরে অন্য এলাকা থেকে মানুষজন এসে বসতি স্থাপন করেন। এভাবে বর্তমানে এই এলাকার বাসিন্দা হয়েছেন প্রায় এক থেকে দুই হাজার। সেইসঙ্গে আশপাশের আরও কয়েকটি এলাকার লোকজনও ওই সাঁকো দিয়ে চলাচল করেন। সে হিসাবে প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে তিন হাজার মানুষকে ওই খালের ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে হয়।

Advertisement

পান্নুশীল নামে এক বাসিন্দা বলেন, এখানে আগে কোনো বাসিন্দা ছিল না। দিনদিন বসতি বাড়তে শুরু করেছে। যার কারণে এই সাঁকো নির্মাণের প্রয়োজন হয়েছে। এই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে তিন হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করে থাকে। সাঁকোর পরিবর্তে একটি ব্রিজ হলে আমাদের মানুষজনের অনেক উপকার হয়।

শহরের উজির আলী স্কুলের ছাত্র রাকিব বলেন, সাঁকো পার হয়েই আমাদের স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হয়। আমরা যারা স্কুলে আসা যাওয়া করি অনেক সময় আমাদের কাছ থেকেও টাকা নেয় ঘাটের লোকজন। ফলে বাসা থেকে যে টাকা টিফিন খরচের জন্য দেওয়া হয় সেখান থেকে তাদের ছয় থেকে আট টাকা করে দিয়ে দিতে হয়। আমরা এটার অবসান চাই।

জুলেখা নামে এক গৃহিণী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগে পাঁচ টাকা ছিল। এখন ছয় টাকা করে নেয়। এক টাকাও কম নেয় না। এক টাকা কম দিলে বলে ঘুরে যাওয়ার জন্য। অনেক সময় সঙ্গে টাকা থাকে না। টাকা না থাকলে যেতে দেয় না। তারপরে অনেক সময় আবার গালিগালাজ করে। তাদের ব্যবহার একদমই ভালো না। নারীদের সঙ্গে তারা নোংরা ভাষায় কথা বলে।

আহাদ নামে এক বাসিন্দা বলেন, যখন মন চায় ইজারাদার তখনই টোলের টাকা বাড়িয়ে দেয়। অনেক সময় সঙ্গে বাসার বাজার থাকলে নিয়ে আসতে দেয় না। বলে মালামাল আনা যাবে না। মালামাল থাকলে বেশি ভাড়া দিতে হয়। তারা মানুষের সঙ্গে যা তা ব্যবহার করে। নারীদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করে। আমরা এখনকার স্থায়ী বাসিন্দা না। যার কারণে আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে পার পেয়ে যায়।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, প্রায় প্রত্যেক মানুষের সঙ্গেই এরকম খারাপ ব্যবহার করে। দিনের কোনো সময় পাঁচ টাকা করে আসা-যাওয়ায় ১০ টাকা আবার কোনো সময় আট টাকা করে ১৬ টাকা নেয়। যখন যা মন চায় মানুষের কাছ থেকে সেভাবেই টাকা আদায় করে। একটা ব্রিজ নির্মাণ করা হলে আমরা এই অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতাম।

জামাল নামে এক পথচারী বলেন, এ ব্রিজটা হলে আমাদের অনেক উপকার হয়। সাঁকো দিয়ে মালামাল নিয়ে যেতে পারি না। মালামাল নিয়ে যেতে হলে অনেক দূর ঘুরে যেতে হয়। আমাদের জন্য একটি ব্রিজ খুব প্রয়োজন।

বাঁশের সাঁকোতে টোল আদায়কারী মহসিন বলেন, এই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন সাত থেকে আটশ লোক আসা-যাওয়া করে থাকে। আমরা চার থেকে পাঁচ বছর ধরে পরিচালনা করে আসছি। মানুষ সবাই সমান না। যে যেরকম তার সঙ্গে সেরকম ব্যবহার করতে হয়। আমরা অনেক টাকা খরচ করে সাঁকো বানিয়েছি। টোল কিছুদিন আগে পাঁচ টাকা করা হয়েছিল। এখন তিন টাকা করে আদায় করছি।

এ বিষয়ে কাশীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফ উল্লাহ বাদল জাগো নিউজকে বলেন, আগে দুই টাকা করে টোল আদায় করা হতো। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে ঘাটের ইজারাদারকে তিন টাকা করে টোল নিতে বলা হয়েছে। তবে এর চেয়েও বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে শুনেছি। আমি ভালোভাবে খোঁজ-খবর নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

ব্রিজের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে একটি ব্রিজ করে দেওয়ার জন্য স্থানীয়রা দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু এই সরকারের মেয়াদে ব্রিজ করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। কারণ, সামনে নির্বাচন। আবার নতুন করে সরকার আসলে তখন চেষ্টা করে দেখবো। আমরা এ বিষয়ে আবেদন করবো।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিফাত ফেরদৌস জাগো নিউজকে বলেন, আমি বাড়তি টাকা আদায়ের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখছি। যদি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে ব্যবস্থা নেবো।

মোবাশ্বির শ্রাবণ/এমআরআর/জিকেএস