দেশজুড়ে

চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর ৬২ শতাংশ কাজ শেষ

দেশি-বিদেশি প্রায় সাড়ে চার হাজার শ্রমিকের নিরলস শ্রম ও ঘামে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ রেলসেতু ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’। বর্তমানে সেতুটির ৬২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

Advertisement

যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সড়ক সেতুর ৩০০ মিটার উত্তরে নির্মিত হচ্ছে এই রেলসেতু। ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এ রেলসেতুর দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার।

বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশাল এই কর্মযজ্ঞ শেষ হওয়ার কথা ২০২৪ সালের আগস্টে। তবে আরও তিন থেকে চার মাস অতিরিক্ত মেয়াদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতুটি হবে সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকে। দুইপাশে নির্মাণ করা হবে শূন্য দশমিক শূন্য পাঁচ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট। ৭ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ, সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার সংযোগ রেললাইন।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জাপানের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ অংশের ১ থেকে ২৩ নম্বর পিলার পর্যন্ত কাজ করছে জাপানি আইএইচআই, এসএমসিসি নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর অংশে ২৪ থেকে ৫০ নম্বর পিলার পর্যন্ত রেলসেতু নির্মাণ করছে আরেক জাপানি প্রতিষ্ঠান ওবায়শি, জেএফই ও টোআ করপোরেশন। এরইমধ্যে টাঙ্গাইল অংশে দেড় কিলোমিটারের ওপরে সেতু দৃশ্যমান হয়েছে।

Advertisement

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একাধিক প্রকৌশলীর জানান, সেতুটি নির্মাণে জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের কর্মীরা নিয়োজিত আছেন। ১০৩ জন বিদেশি প্রকৌশলীসহ দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ৭০০ জনের বেশি প্রকৌশলী কাজ করছেন।

নির্মাণ শ্রমিকরা জানান, দেশের এতবড় একটি প্রকল্পে কাজ করতে পেরে তারা নিজেদের গর্বিত মনে করছেন। এছাড়া সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাও পাচ্ছেন।

দেখা গেছে, দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী ও নির্মাণ শ্রমিকরা সেফটি ফাস্টের আওতায় ২৪ ঘণ্টা কাজ করছেন। এরমধ্যে কেউ বালু দিয়ে জিও ব্যাগ ভর্তি করছেন, কেউ ক্রেন দিয়ে সেতুর নির্মাণ সামগ্রী তোলানামা করছেন, কেউ রেললাইনে পাথর ফেলে সমান করছেন, কেউ নাট-বল্টু টাইট দিচ্ছেন, কেউ স্পিডবোট দিয়ে নির্মাণ শ্রমিকদের স্থলভাগ থেকে আনা-নেওয়া করছেন। সবমিলিয়ে রেলসেতু নির্মাণে বিশাল এক কর্মযজ্ঞ চলছে।

নেপালি প্রকৌশলী অমৃত বলেন, তিনি কাতার, ওমান, নেপালসহ বিভিন্ন দেশে কাজ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের এই বৃহৎ রেলসেতু নির্মাণ কাজ করে ইতিহাসের অংশ হতে চলেছেন। এছাড়া এ দেশের মানুষের সঙ্গে কাজ করে তিনি খুশি ও আনন্দিত। এরইমধ্যে টাঙ্গাইল অংশে ৫০ থেকে ৩৪ নম্বর পিলার পর্যন্ত স্পেন বসানো শেষ। ৩৪ থেকে ২৪ নম্বর পিলারের দিকে স্প্যান বসানোর কার্যক্রমও চলছে।

Advertisement

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা আরও জানান, এ সেতু নির্মিত হলে উত্তরাঞ্চলের ট্রেন চলাচল ও পণ্য পরিবহন সহজ হবে। এর ওপর দিয়ে চলবে ৮৮টি ট্রেন। সাধারণ ছাড়াও দ্রুতগতির (হাইস্পিড) ট্রেন চলাচলে সক্ষম করে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে সেতুতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো যাবে। তবে শুরুতে (উদ্বোধনের পর এক বছর) ঘণ্টায় ১০০-১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্প পরিচালক ফাত্তাহ আল মো. মাসুদুর রহমান বলেন, দেশি-বিদেশি প্রায় সাড়ে চার হাজার শ্রমিকের নিরলস পরিশ্রমে প্রকল্পটি দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। সেতুর টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের পূর্ব অংশের সংযোগ রেললাইন নির্মাণের কাজও প্রায় শেষের দিকে। পশ্চিম অংশেও সংযোগ রেললাইনের কাজ দ্রুত গতিতে হচ্ছে। শত বছর পরও এই রেল সেতুর তেমন ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। এ পর্যন্ত ৬২ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাকি কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এমআরআর/এএসএম