কুষ্টিয়ায় ১০০ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প কিনতে হচ্ছে ২০ টাকা বেশি দিয়ে। কেউ তো আবার নিচ্ছেন ৩০ টাকা বেশি। আর ৫০ টাকার স্ট্যাম্পের জন্য গুণতে হচ্ছে ৭০ টাকা। এভাবে সব ধরনের নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প কিনতে বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে। এটা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
Advertisement
অভিযোগ রয়েছে, কুষ্টিয়া আদালত চত্বরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে কিছু অসাধু স্ট্যাম্প ভেন্ডার এমন সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। এতে করে বছরে জেলায় সেবাগ্রহীতাদের পকেট থেকে প্রায় দুই কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিচ্ছে এই সিন্ডিকেট। প্রকাশ্যে বছরের পর বছর এমন নৈরাজ্য চললেও এটি দেখার যেন কেউ নেই। কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও আদালত চত্বরে ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
আরও পড়ুন: জাল স্ট্যাম্পে ৩ বছরে কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেন তারা
সেবাগ্রহীতারা জানান, দলিল নিবন্ধন, চুক্তিপত্র, নোটারি পাবলিক কার্যালয়ে এফিডেভিট, হলফনামা, বন্ধকনামার চুক্তিপত্র, মালামাল খালাস আদেশ, শুল্ক বন্ড, শেয়ার বরাদ্দ, মামলা মোকদ্দমাসহ বিভিন্ন কাজে স্ট্যাম্প ব্যবহার বাধ্যতামূলক। ফলে এসব ক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতারা স্ট্যাম্প কিনে থাকেন।
Advertisement
আর এই সুযোগে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে স্ট্যাম্প বিক্রি করছেন কিছু অসাধু স্ট্যাম্প ভেন্ডার। অভিযোগ রয়েছে, স্ট্যাম্প ভেন্ডারদের সঙ্গে এই কারসাজিতে জড়িত স্ট্যাম্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।
গণমাধ্যমকর্মী বেলাল জানান, তিনি সম্প্রতি একটি মোটরসাইকেল কিনেছেন। এটার মালিকানা লিখে নিতে তার ২০০ টাকার স্ট্যাম্প দরকার। কুষ্টিয়া ডিসি কোর্ট চত্বর থেকে ১০০ টাকার দুটি স্ট্যাম্প ২৫০ টাকা দিয়ে কিনতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: হলফনামার স্মারক নম্বর পেতেও গুনতে হয় টাকা
সদর উপজেলার জিয়ারখী এলাকার বাসিন্দা কৃষক মানিক বলেন, দলিল নিবন্ধনের জন্য ১০০ টাকার দুটি স্ট্যাম্পের দাম নেওয়া হয় ২৪০ টাকা। কারো কারো কাছ থেকে এক একটির স্ট্যাম্পের দাম ১৩০ টাকাও নেওয়া হচ্ছে।
Advertisement
তিনি জানান, এই বাড়তি ৩০ টাকা তার মতো গরিব কৃষকের কাছে একবেলা ভাতের দাম।
আদালত চত্বরের স্ট্যাম্প ব্যবসায়ী হাবিব বলেন, একটি ১০০ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্প আমাদেরই কিনতে হচ্ছে ১১০ টাকায়। ৫০ টাকার মূল্যের স্ট্যাম্প কিনতে হচ্ছে ৬০ টাকা। ওপরের সাহেবদের ও ভ্যাট-ট্যাক্সের ফলে গড় হিসাবেই স্ট্যাম্প কিনতে হয়। ফলে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দামে স্ট্যাম্প বিক্রি করছি।
তবে দামবৃদ্ধিতে স্ট্যাম্প ভেন্ডারদের কোনো সিন্ডিকেট জড়িত নয় বলে দাবি তার।
আরও পড়ুন: প্রার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন ১৩-১৬ লাখ
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা স্ট্যাম্প ভেন্ডার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম বলেন, স্ট্যাম্প ভেন্ডার সিন্ডিকেট হয়নি। যার ব্যবসা তার। অন্যরা বেশি দামে বিক্রি করলে এতে আমার কী করার আছে? আমি নিজেই সর্বোচ্চ ৩৩০ টাকায় স্ট্যাম্প বিক্রি করি। স্ট্যাম্পগুলো আনতে খরচ হয়। ওপরের কর্মকর্তারা আছেন, সেখানে কিছু খরচ হয়। সবই তো বোঝেন আপনারা।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার ট্রেজারি ও স্ট্যাম্প শাখার সহকারী কমিশনার শাহেদ আরমান বলেন, স্ট্যাম্পের দাম বেশি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ ধরনের অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। অভিযোগ পেলেই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আমাদের জড়িয়ে যে কথা বলা হচ্ছে এগুলো মিথ্যা।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমিন আখতার বলেন, সংকট থাকলেও দাম বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি করতে হবে স্ট্যাম্প। বাড়তি দামে স্ট্যাম্প বিক্রির বিষয়টি আমাদের কেউ জানায়নি। লিখিত অভিযোগ পেলেই জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এএমএস/জেডএইচ/এমএস