ফিচার

আধুনিকতার ছোঁয়ায় কদরহীন কুপি বাতি ও হারিকেন

নিয়ামুর রশিদ শিহাব

Advertisement

প্রযুক্তির ক্রমবিকাশে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কুপি বাতি ও হারিকেন। পল্লী বিদ্যুৎ ও সৌর বিদ্যুতের যুগে গ্রামীণ ঐতিহ্য কুপি বাতি ও হারিকেন এখন শুধুই স্মৃতি। গ্রাম-বাংলার প্রতিটি ঘরের অতি প্রয়োজনীয় এই জিনিসগুলো আজ প্রায় বিলুপ্ত। আগেকার দিনে গ্রাম কিংবা শহরের প্রতিটি ঘরেই ছিল কুপি বাতি ও হারিকেন। এই দুইটি জিনিস ছিল না, এমন কোনো ঘর খুঁজে পাওয়া ছিল দুষ্কর।

সেসময়ের কুপি বাতি ও হারিকেনগুলো ছিল বাহারি নকশার। নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী কিনে সেগুলো ব্যবহার করতেন। মাত্র দুই দশক আগেও বেশিরভাগ ঘরেই ব্যবহার হতো হারিকেন। সারাদিনের কর্মব্যস্ততা সেরে সাঁঝের বেলায় নারীরা ঘরের আলো জ্বালানো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। প্রতি সন্ধ্যায় হারিকেনের চিমনি খুলে, ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করতেন তারা। তারপর ছিপি খুলে কেরোসিন তেল ঢেলে আবার ছিপি লাগানো। এবার রেশার মধ্যে দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে তা নির্দিষ্ট সীমারেখায় রাখা হতো। ৫-৬ ইঞ্চি লম্বা ও কিছুটা ছড়াকারের মত এক ধরনের কাপড় রেশা হিসেবে ব্যবহার করা হতো।

হারিকেনের আলো কমানো ও বাড়ানোর জন্য ছিল নির্দিষ্ট একটি গিয়ার। হাতের সাহায্যে তা ঘুরিয়ে আলোর গতিবেগ কমানো ও বাড়ানো যেতো। রাতে ঘুমানোর সময় আলো কমিয়ে সারারাত হারিকেন জ্বালিয়ে রাখতেন অনেকে। যেন গভীর রাতে জরুরি প্রয়োজনে আবার হারিকেন জ্বালাতে না হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: ঠেলাগাড়ি এখন ঠেলবে কে?

কুপি বাতি ছিল কয়েক প্রকার। মাটি, সিলভার, টিন, লোহা, কাঁচের বোতল আবার পিতলের তৈরি কুপিও ছিল। তবে সিলভার, টিন এবং মাটির তৈরি বাতির ব্যবহার ছিল খুব বেশি। একনলা, দুইনলা, একতাক, দুই তাকসহ নানা প্রকার। বাতির নলে আগুন জ্বালানোর জন্য রেশা হিসেবে ব্যবহার করা হতো পুরোনো কাপড়ের টুকরা কিংবা পাটের সুতলি। চিকন ও ৫-৬ ইঞ্চির দৈর্ঘ্যের ওই রেশা, বাতির নল দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হতো। প্রতিদিন এর কিছু অংশ জ্বলে পুড়ে যেতো। ফের পরের দিন আবার একটু উপরের দিকে তুলে দিতে হতো সেটি। এক পর্যায়ে তা পুড়ে গেলে আবার নতুন করে লাগানো হতো। ২-৫ টাকায় ওই বাতির নলগুলো কিনতে পাওয়া যেতো যে কোনো মুদি দোকানে। যেহেতু কুপিও নেই, তাই নলগুলোর উৎপাদনও খুবই কম।

কুপি বাতি বা হারিকেন দিয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতো সেসময়। সন্ধ্যা হলেই ঘরে ঘরে কুপি বাতি বা হারিকেন জ্বালিয়ে পড়তে বসে যেতো শিশু-কিশোররা। এছাড়াও রাতের সব কাজ যেমন- রান্না, কুটির শিল্প, হস্তশিল্প, ধান মাড়ানো, যাতায়াতসহ সব কাজে আলোর চাহিদা মেটানো হতো এই কুপি বা হারিকেন দিয়ে।

বর্তমানে প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি ঘরও বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়েছে। সর্বত্র বিদ্যুতায়নের ফলে গ্রামীণ বাসিন্দাদের কাছে কুপি বাতি ও হারিকেনের কদর কমেছে। এখনো গ্রামীণ কিছু বাড়িতে কুপি বাতি বা হারিকেন থাকলেও তা অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে আছে ঘরের কোনায়। তবে শহরের অনেক ফ্ল্যাট বাসায় হারিকেন দেখা যায়। ঘরের গিন্নী গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী হারিকেন শোপিস হিসেবে সাজিয়ে রেখেছেন ড্রয়িং রুমে। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো প্রাচীনকালের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় দ্রব্যটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

Advertisement

লেখক: শিক্ষার্থী, বরিশাল পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট।

কেএসকে/এমএস