দেশজুড়ে

পায়রার আকাশে কালো মেঘ!

পটুয়াখালীসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বর্তমান সরকার বেশকিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর। তবে সম্প্রতি কয়লা সংকটের কারণে প্রায় এক মাসের জন্য পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ থাকার খবরে পায়রা সমুদ্রবন্দর সংশ্লিষ্টরাও কিছুটা চিন্তিত। বর্তমানে পায়রা সমুদ্রবন্দরের প্রধান ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।

Advertisement

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল), যা পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নামেই পরিচিতি। এই কেন্দ্রটির দুটি ইউনিটে মোট ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। তবে সঞ্চালন লাইন তৈরি না হওয়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হওয়ার পরও দীর্ঘদিন একটি ইউনিট বন্ধ রাখতে হয়। এরপর কিছুদিন দুটি ইউনিট স্বাভাবিকভাবে চললেও এবার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নতুন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।

পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্র বলছে, কয়লা না থাকায় ২৫ মে একটি ইউনিট বন্ধ করা হয়েছে। এখন ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বাকি একটি ইউনিট থেকে দিনে ৪৫০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এভাবে ২ জুন পর্যন্ত চলতে পারবে, ফলে আগামী ৩ জুন থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: তিন প্রকল্পে বদলে যাবে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি

Advertisement

পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আব্দুল মাওলা জাগো নিউজকে বলেন, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে পাওনা প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কিছু টাকা পরিশোধ করছে যা দিয়ে প্ল্যান্ট চালিয়ে নেওয়া যাচ্ছে। তবে সমস্যা হচ্ছে বৈশ্বিক কারণে ডলার সংকট থাকায় আমরা টাকাকে ডলারে কনভার্ট করতে পারছি না, এ কারণে এলসি করা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, সংকট কাটিয়ে দ্রুত কয়লা সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কয়লা আসতে অন্তত ২৫ দিন সময় লাগতে পারে। সে কারণে জুনের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ রাখতে হতে পারে।

আরও পড়ুন: যেখানে এক বিদ্যুৎকেন্দ্রই ‘ভুলিয়ে দেবে’ লোডশেডিং, সেখানে আরও দুটি

এদিকে, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধের খবরে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের কপালেও চিন্তার ভাজ। এ পর্যন্ত পায়রা সমুদ্রবন্দরে মোট ৩১৬টি বিদেশি জাহাজ ভিড়েছে। যার মধ্যে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা নিয়েই এসেছে ২৪২টি জাহাজ এবং অন্য পণ্য নিয়ে এসেছে ৭৪টি জাহাজ। মোটকথা পায়রা সমুদ্রবন্দরের প্রধান গ্রাহক হচ্ছে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। আর দীর্ঘ এক মাস তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা আমদানি না করায় পায়রা বন্দরও অনেকটা অব্যবহৃত অবস্থায় থাকবে।

Advertisement

পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ সাড়ে ১০ মিটার গভীরতার ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি চ্যানেল খনন করে তা গত ২৫ মার্চ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে। বাংলাদেশ সরকারের রিজার্ভ ফান্ডের সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই চ্যানেলটি তৈরি করা হয়। বেলজিয়ামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জান ডে নুল এই ড্রেজিং কাজ সম্পন্ন করে। তবে বন্দরটি পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ব্যবহার না করলে এবং দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করতে না পারলে বন্দরের আয়-ব্যয়ের হিসাবেও বড় ধরনের ব্যবধান তৈরি হবে।

এদিকে, বন্দরের সার্ভিস এরিয়ার জেটি নির্মাণ করা হলেও রামনাবাদ চ্যানেলের মূল বন্দরে টার্মিনালের নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। এছাড়া টার্মিনাল থেকে মূল সড়ক পর্যন্ত নির্মাণকাজ চললেও সেতু নির্মাণকাজ এখনো শুরু হয়নি। ফলে কতদিনে পায়রা বন্দর কনটেইনার পরিবহন শুরু করতে পারবে সে বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত।

আরও পড়ুন: পায়রা বন্দর নিয়ে যে দুর্ভোগে পড়তে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলবাসী

পায়রা সমুদ্র বন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) আজিজুর রহমান বলেন, পায়রা সমুদ্রবন্দরে একইসঙ্গে যেমন উন্নয়ন কাজ করা হচ্ছে তেমনি বন্দর থেকে নিয়মিত আয়ও হচ্ছে। তবে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংকটের বিষয়টি নিয়ে আমরাও কিছুটা চিন্তিত। আশা করছি, দ্রুত এ সংকটের সমাধান মিলবে।

এমআরআর/এমএস