দেশের স্পিনিং মিলগুলোর গত ১৫ মাসে (জানুয়ারি ২০২২-মার্চ ২০২৩) প্রায় চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি) আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। উৎপাদিত সুতা কম দামে বিক্রি এবং অতিরিক্ত গ্যাস বিল পরিশোধের কারণে এ ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে মিলগুলোকে।
Advertisement
মঙ্গলবার (৩০ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।
তিনি বলেছেন, স্পিনিং মিলগুলো তাদের উৎপাদন অব্যাহত রেখে শ্রমিকদের নিয়মিতভাবে বেতন-ভাতাদি পরিশোধসহ ইউটিলিটি বিল নিয়মিত দিতে উৎপাদন খরচ অপেক্ষা ১৮ থেকে ২০ শতাংশ কম দামে সুতা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে গড়ে প্রতিটি মিলকে গ্যাস ব্যবহার না করেও বর্ণিত গ্যাস ট্যারিফে গ্যাস বিল দেওয়ায় বছরে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত বিল দিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অস্থিতিশীল দামে তুলা আমদানি, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ না থাকায় সৃষ্ট প্রোডাকশন লস, গ্যাস ব্যবহার না করে অতিরিক্ত গ্যাস বিল ও অতিরিক্ত নিরাপত্তা জামানত দেওয়ায় স্পিনিং মিলগুলোর এ আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।
‘টেক্সটাইল খাতে বিরাজমান সমস্যা ও উত্তরণ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বিটিএমএ পর্ষদের সদস্য ছাড়াও এ খাতের উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) অনিয়মিত বরাদ্দ, ইডিএফ ঋণের পরিমাণ হ্রাসসহ প্রয়োজনীয় ডলারের অভাবে কাঁচা তুলা আমদানির জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃক এলসি ওপেন না করায় সমস্যা হচ্ছে। গত প্রায় এক বছর ধরে এ তহবিল থেকে সংশ্লিষ্ট মিলের অনুকূলে ঋণ বরাদ্দ অনিয়মিত এবং পর্যায়ক্রমে এ তহবিলের আকার প্রতিটি স্পিনিং মিলের ক্ষেত্রে ৩০ মিলিয়ন ডলার থেকে ২০ মিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে।
Advertisement
তিনি বলেন, ঋণের পরিমাণ হ্রাস পাওয়ায় মিলগুলো তার পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহারের জন্য যে পরিমাণ কাঁচামাল তথা তুলা আমদানির প্রয়োজন হয় তা করতে পারছে না। অর্থাৎ মিলগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ শুধু কাঁচামালের অভাবে উৎপাদন ক্ষমতার বাইরে থেকে যাচ্ছে, যা উৎপাদন খরচ বাড়াচ্ছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি গভীর চক্রান্তের সম্মুখীন। বর্তমানে ঘরে ঘরে পাকিস্তানি কাপড়। সরকার ২০৩০ সালে টেক্সটাইল ও ক্লথিং থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে খাতটির এ নাজুক অবস্থা চলতে থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না।
খোরশেদ আলম নামে এক উদ্যোক্তা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে শ্রমিকদের বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে। আমার ৩৭ বছরের শিল্পজীবনে এমন গ্যাসের সংকট দেখা যায়নি। ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকে না, এ কারণে আমার একটি ইউনিট বন্ধ, অন্য ইউনিটের ৩৫ শতাংশ কাজ চলছে। বিদ্যুতের সমস্যাও ভয়াবহ।
ইএআর/এমকেআর/এএসএম
Advertisement