জাতীয়

গ্রামীণ টেলিকমের অর্থ আত্মসাৎ: ড. ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রামীণ টেলিকম থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

Advertisement

মঙ্গলবার (৩০ মে) দুদকের উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি করেন।

মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২)(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

ড. ইউনূস ছাড়া মামলার বাকি আসামিরা হলেন গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম, এস. এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান এবং সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম।

Advertisement

আরও পড়ুন: ড. ইউনূসকে শ্রমিকদের লভ্যাংশ দেওয়ার রায়ে ৬ মাসের স্থিতাবস্থা

মামলার এজাহারে বলা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও মো. নাজমুল ইসলামসহ গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ডের সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ মে গ্রামীণ টেলিকমের ১০৮তম বোর্ডের সভায় ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের গুলশান শাখায় একটা ব্যাংক হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত হয়।

তবে হিসাব খোলার এই সিদ্ধান্তের একদিন আগেই ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। এছাড়া ৮ মে খোলা ব্যাংক হিসাব দেখানো আছে সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টে, যা বাস্তবে অসম্ভব। এ রকম ভুয়া সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টের শর্ত অনুযায়ী ও বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গ্রামীণ টেলিকমের বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকটিতে ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা স্থানান্তর করে। কিন্তু কর্মচারীদের লভ্যাংশ বিতরণের আগেই তাদের প্রাপ্য অর্থ তাদের না জানিয়ে আসামিরা আত্মসাৎ করেন।

গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশ বিতরণের জন্য গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন এবং গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট চুক্তি হয় ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘চ্যাম্পিয়ন অব গ্লোবাল চেঞ্জ’ পুরস্কার পেলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস

এজাহারে আরও বলা হয়, রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, অ্যাডভোকেট ফি হিসাবে প্রকৃতপক্ষে হস্তান্তরিত হয়েছে মাত্র এক কোটি টাকা। বাকি ২৫ কোটি ২২ লাখ ছয় হাজার ৭৮০ টাকা গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বোর্ড সদস্যদের সহায়তায় গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা এবং অ্যাডভোকেটসহ সংশ্লিষ্টরা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন।

২০২২ সালের ২৮ জুলাই কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের চার অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

অভিযোগ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে তদারককারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় দুদকের তৎকালীন পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান, সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তার ও নূরে আলম সিদ্দিকী। অভিযোগ অনুসন্ধানে গত বছরের আগস্টের বিভিন্ন সময়ে এমডিসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

আরও পড়ুন: কাজী জাফর আমার বিশেষ বন্ধু ছিলেন : ড. মুহাম্মদ ইউনূস

গত বছরের ২৩ নভেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক প্রশ্নের জবাবে গ্রামীণ টেলিকমের এমডি নাজমুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগতভাবে কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

ইউনূসকে জিজ্ঞাসাবাদ না করে মামলা করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে দুদকের মহাপরিচালক মো. রেজানুর রহমান বলেন, অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা অত্যন্ত দক্ষ। আমাদের আইন বিধিতে যা আছে, সেই অনুসারে যাদের যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই রিপোর্ট দাখিল করেছি।

ইউনূসকে গোপনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা যারা দায়িত্ব প্রাপ্ত, যে কোনো বিষয়ের অনুসন্ধান তাদের যদি প্রয়োজন হয় প্রকাশ্যে করবেন, বা মনে হয় অন্যভাবে করবেন। তাদের সব ধরনের আইনি ক্ষমতা দেওয়া আছে। সেই আইনি ক্ষমতা বলে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই এই প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। আমাদের আইনে যা আছে সেভাবেই অনুসন্ধান করা হয়েছে। দুদকের কাজ হলো তফসিল ভুক্ত কোনো অভিযোগ এলে আমরা সেটা অনুসন্ধান করি। প্রয়োজন অনুসারে মামলার দিকে বা পরিসমাপ্তি করি।

এ ক্ষেত্রে দুদককে কী রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুদক স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। আইন অনুসারে আমরা অনুসন্ধান, তদন্ত করে থাকি, কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি। আপনার প্রসঙ্গটা দুদকের কার্যক্রমের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক নয়।

দুদককে ইউনূস কী বলেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এগুলো অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব। তারা সেগুলো দেখেই প্রতিবেদন দিয়েছেন।

ইউনূসসহ অন্য আসামিদের গ্রেফতার করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা পরবর্তী কাজ করবেন। এটা তদন্তকারী কর্মকর্তা নির্ধারণ করবেন উনাকে কী করতে হবে। এটা তার বিষয়, তিনিই নির্ধারণ করবেন।

এসএম/এমএএইচ/জেডএইচ/জিকেএস