গ্রামের অধিকাংশ মানুষই জড়িত কলা চাষে। এ কলা চাষই তাদের জীবিকা নির্বাহের প্রধান মাধ্যম। বছরের পুরো সময়েই কোনো না কোনো জাতের কলা উৎপাদন হয়। কলা চাষকে কেন্দ্র করেই ঘোরে এলাকার অর্থনীতির চাকা। যেদিকে চোখ যায় শুধু কলার বাগান। বাগানে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে ঝুলন্ত কলার কাদি। এ চিত্র পিরোজপুরের বলেশ্বর নদীর দু’পাশের গ্রামগুলোর।
Advertisement
দক্ষিণাঞ্চলের জেলা পিরোজপুরের প্রধান ফসল ধান। তবে জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বলেশ্বর নদীর দু’পাড়ে ধানের জমিতে গড়ে উঠেছে কলার বাগান। সময়ের বিবর্তনে ধানের জমি বিলুপ্ত হয়ে সেখানে চাষ হচ্ছে কলা। এতে কয়েক হাজার মানুষের ভাগ্য বদলে গেছে। মাটি ও আবহাওয়া কলা চাষের উপযুক্ত। কলা চাষ, ব্যবসা ও পরিবহনের সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ। দেশব্যাপী পিরোজপুরের কলার চাহিদা থাকায়, নদীর পানি কলা চাষের উপযোগী হওয়ায় সারাবছর সাগর, সবরি, কবরি, কাঁচা, চম্পা ও কাঠালিসহ বিভিন্ন প্রজাতির কলা চাষ হয়। এলাকার শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি মানুষ কলা চাষের সঙ্গে জড়িত। তাই দিন দিন কলার আবাদ বাড়ছে।
আরও পড়ুন: খাগড়াছড়ির বাজারে লিচুর সমাহার
কলা চাষি মনির হোসেন জানান, বর্তমানে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় ট্রাক, লঞ্চ কিংবা বড় ট্রলারে করে সরাসরি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হচ্ছে পিরোজপুরের কলা। এছাড়া আলাদা স্বাদের জন্য পিরোজপুরের কলার সুনাম রয়েছে সারাদেশে।
Advertisement
কলা চাষি মো. জামাল খান জানান, চলতি মৌসুমে পুরোদমে চলছে সবরি, সাগর ও কাঁচকলা সংগ্রহের কাজ। প্রায় এক মাস আগ থেকে শুরু হওয়া কলার এ মৌসুম চলবে আরও আড়াই থেকে তিন মাস। একটি গাছ থেকে কলা পেতে প্রজাতি ভেদে ১৫০-২৩০ টাকা খরচ হয়। এ থেকে আয় হয় ৩০০-৬০০ টাকা।
বিগত বছরে কলা সংগ্রহের আগে ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে কলা গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ বছর এ ধরনের দুর্যোগ না আসায় খুশি চাষিরা। বর্তমানে প্রচণ্ড গরমের কারণে কলার চাহিদাও বেশি। এজন্য ভালো দামও পাচ্ছেন কৃষকেরা।
আরও পড়ুন: জ্যৈষ্ঠ মাসকে মধুমাস বলা হয় কেন?
পিরোজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম সিকদার জানান, অন্য ফসলের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় পিরোজপুরের চাষিরা কলা চাষের প্রতি ঝুঁকছেন। অনেক কৃষকই বাজার থেকে ক্ষতিকর কীটনাশক ও হরমোন কিনে গাছে ব্যবহার করেন। এগুলো ব্যবহারের আগে কৃষি বিভাগের সঙ্গে পরামর্শের আহ্বান জানান তিনি।
Advertisement
দক্ষিণাঞ্চলে ধানের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লাভ হওয়ায় চাষিরা এখন কলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। অনেকেই কলা চাষ কিংবা কলার ব্যবসা করে ঘুরিয়েছেন ভাগ্যের চাকা। প্রতি বছর এ এলাকা থেকে কোটি কোটি টাকার কলা বিক্রি হয়। এ বছর পিরোজপুরের ৭টি উপজেলায় ১ হাজার ২৯৩ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন হয়েছে ১৪.৮৬ টন।
ইমাম হোসেন মাসুদ/এসইউ/জিকেএস