কুমিল্লার চন্দিনায় একটি হাসপাতালে সদ্যজাত এক শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। দাফনের প্রস্তুতিও নেয় পরিবার। তবে এ ঘটনার আড়াই ঘণ্টা পর নড়েচড়ে ওঠে শিশুটি। পরে অবশ্য শিশুটি মারা গেছে। এ ঘটনায় চিকিৎসকের অবহেলাকে দায়ী করেছে পরিবার।
Advertisement
সোমবার (২৯ মে) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলা সদরের পল্লী বিদ্যুৎ রোড এলাকার ‘চান্দিনা সেন্ট্রাল হাসপাতালে’ সুমাইয়া (১৯) নামের এক গৃহবধূ শিশুটিকে জন্ম দেন। তিনি বুড়িচং উপজেলার আবিদপুর গ্রামের জালাল উদ্দিনের স্ত্রী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রসব বেদনা শুরু হলে সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে সুমাইয়াকে চান্দিনা সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনরা। সাড়ে ৮টার দিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তিনি একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। এরপর শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেন চিকিৎসকরা। পরে তারা শিশুটিকে আবিদপুরে নিয়ে আসেন দাফনের উদ্দেশ্যে। বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ শিশুটি নড়েচড়ে ওঠে। একপর্যায়ে চিৎকার করে মলত্যাগ করে। এ অবস্থায় তাকে দ্রুত ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে শিশুটির মা সুমাইয়ার বড় বোন জরিনা আক্তার বলেন, ‘আমার বোনকে হাসপাতালে আনার পর পরীক্ষা করে তারা বলেন, দ্রুত সিজার করতে হবে। আমরা কোনো কিছু না বুঝেই দ্রুত সিজার করতে রাজি হই। অপারেশনের পর ডাক্তার বাচ্চাটিকে কয়েকটি ঝাঁকি দিয়ে বলেন মারা গেছে। পরে হাসপাতালের স্টাফরা একটি ওষুধের কাটুনে বেঁধে দেন শিশুটিকে।’
Advertisement
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘শিশুটি জন্মের পর কাটা নাভি পর্যন্ত বাঁধ দেননি তারা। আমার বোনের সিজারের পর আরও একটি সিজার করানোর তাড়া ছিল তাদের। সম্পূর্ণ অবহেলা ও অনভিজ্ঞতার কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।’
সুমাইয়ার বাবা আব্দুল বারেক বলেন, ‘নাতির মৃত্যুর কথা শুনে আমি জানাজা দিতে আবিদপুর যাই। বেলা অনুমানিক ১১টার দিকে হঠাৎ শিশুটি নড়েচড়ে ওঠে। এ অবস্থা দেখে আমরা কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়ি। কিছুক্ষণ পর আবারও শিশুটি চিৎকার করে ওঠে এবং মলত্যাগ করে। পরে আমরা অটোরিকশায় করে কুমিল্লা ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
এ বিষয়ে চান্দিনা সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম বলেন, মূলত নবজাতক জন্মের এক মিনিটের মধ্যে নড়াচড়া বা চিৎকার না করলে ডাক্তারি ভাষায় তাকে ‘মৃত’ বলা হয়। ওই শিশুটির ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে। পরবর্তীতে কিছু ঘটে থাকলে তা চিকিৎসাবিদ্যা সমর্থন করে না।
ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক অনিক দত্ত বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে এক নবজাতককে হাসপাতালে আনা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায় শিশুটি মৃত। পরে তার স্বজনরা বাড়ি নিয়ে গেছেন।’
Advertisement
এ বিষয়ে চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস শীল বলেন, বিষয়টি জেনেছি। ঘটনার সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাহিদ পাটোয়ারী/এসআর/জেআইএম