অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত। চেয়ারম্যান, সুচিন্তা ফাউন্ডেশন। সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি। অধ্যাপনা করছেন বেসরকারি কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে।
Advertisement
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের নির্বাচন ছাড়াই সংসদের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব, আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গ নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। ঢাকা-১৭ আসনে উপ-নির্বাচন প্রসঙ্গেও আলোচনা করেন তিনি।
দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথমটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।
জাগো নিউজ: সম্প্রতি এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি এক শিক্ষক নির্বাচন ছাড়াই চলমান সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়ানোর দাবি করেন। তার এ দাবি কীভাবে দেখবেন?
Advertisement
মোহাম্মদ এ আরাফাত: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই অধ্যাপকের বক্তব্য নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। কেন এমন বক্তব্য দিলেন, তার ব্যাখ্যা তিনিই ভালো দিতে পারবেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় বিশ্বাস করে। আমরা গণতন্ত্র, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শাসনব্যবস্থায় বিশ্বাস করি। এর বাইরে অন্য কোনো ব্যবস্থা নিয়ে ভাবছি না।
জাগো নিউজ: নির্বাচন নিয়ে অনাস্থা তৈরি হয়েছে। অনেকটা একতরফা নির্বাচন হচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। ঢাবির ওই অধ্যাপক দাবি করেছেন আরও যৌক্তিক প্রসঙ্গ সামনে এনে…
মোহাম্মদ এ আরাফাত: তার চিন্তার সঙ্গে আমি একমত না। যুক্তরাষ্ট্রের সবশেষ নির্বাচন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা কারচুপির অভিযোগ এনেছে। এর আগে হিলারি ক্লিনটনকে ট্রাম্প হারিয়েছেন রাশিয়ার সহায়তায়- এমন অভিযোগ ডেমোক্রেটিক দলের সমর্থকদের। তাই বলে কি যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন বন্ধ করে দেবে?
জাগো নিউজ: আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ব্যবস্থা সংকুচিত করছে ক্রমাগতভাবে, এমন অভিযোগ বিরোধী মহলে। আওয়ামী লীগ ফের বাকশালে ফেরার চেষ্টা করছে বলে দাবিও তাদের?
Advertisement
মোহাম্মদ এ আরাফাত: সামরিক শক্তিতে যারা ভর করে ক্ষমতায় এসেছিল, তারাই অভিযোগ করছে। আওয়ামী লীগের হাত ধরেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আওয়ামী লীগই নির্বাচন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছে। আগে ব্যালট বাক্স ছিল লোহার। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স জননেত্রী শেখ হাসিনার দাবি ছিল। শেখ হাসিনার দাবি অনুযায়ীই ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরি করা হয়। নির্বাচন কমিশনকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আলাদা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচন কমিশন গঠন আইন তিনিই করেছেন।
আরও পড়ুন>>‘এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবো না, এটি চূড়ান্ত’
জাগো নিউজ: স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স অস্বচ্ছ করার অভিযোগ উঠলো এই সরকারের আমলেই? রাতের আঁধারে ভোট, মৃত মানুষের ভোট, শতভাগ ভোটও দেখলো মানুষ!
মোহাম্মদ এ আরাফাত: কয়টা মৃত মানুষের ভোট পড়েছে? ৪৪ হাজার কেন্দ্র রয়েছে। দুইশ কেন্দ্রে ত্রুটি হলেই গোটা প্রক্রিয়াকে অস্বচ্ছ বলা যাবে না। এমন ত্রুটি উন্নত দেশেও থাকে। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ছিল বলেই এই ত্রুটি ধরা পড়েছে। নির্বাচন কমিশন তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। আমরা বলিনি যে শতভাগ শুদ্ধ নির্বাচন হয়েছে। আমরা শুদ্ধ প্রক্রিয়ায় মধ্যে আছি। সংস্কারের মধ্যে আছি। লোহার বাক্সে শতভাগ ভোট জিয়াউর রহমান পেয়ে যেতেন। এখন তো এমন ঘটছে না।
জাগো নিউজ: ঘটছে না বলছেন কেন? ঘটছে তো?
মোহাম্মদ এ আরাফাত: কোথায় ঘটছে? এক শতাংশ ঘটলেও আমরা শুধরানোর চেষ্টা করছি। শতভাগ ভোট পড়েছে এটি নির্বাচন কমিশন বলেছে, তারপর আপনি জেনেছেন।
জাগো নিউজ: কিন্তু মানুষ তো ভোটবিমুখ হয়ে পড়ছে। অনাস্থা বাড়ছে।
মোহাম্মদ এ আরাফাত: মানুষ ভোটবিমুখ হয়ে পড়লে তো গাজীপুরে ৫০ শতাংশ ভোট পড়তো না।
জাগো নিউজ: গাজীপুরে সিটি নির্বাচনে ভোট নিয়ে উৎসব ছিল, নিরাপত্তা ছিল।
মোহাম্মদ এ আরাফাত: প্রধান বিরোধীদল এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এরপরেও ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে।
আরও পড়ুন>>‘সাধারণ মানুষের জন্য সাধারণ মানুষকেই জাগতে হবে’
জাগো নিউজ: ২০১৪, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে মানুষ ভোটবিমুখ হয়েছে…
মোহাম্মদ এ আরাফাত: ২০১৪ সালে কি নির্বাচন হয়েছে? বিএনপি তো ওই নির্বাচনে আসেনি। ভোটের আগে তাণ্ডব চালিয়েছে। ভোটের দিন শত শত স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছে। মানুষ হত্যা করেছে। মানুষ ভয়ে কেন্দ্রে আসেনি। এটি অন্য আলাপ। কিন্তু মানুষ ধারাবাহিকভাবে ভোটবিমুখ হয়ে পড়ছে, এটি ঠিক নয়। গাজীপুর সিটি নির্বাচন প্রমাণ করেছে মানুষের মধ্যে ভোট নিয়ে উৎসাহ আছে। আরও সিটি নির্বাচন হচ্ছে। দেখতে পারবেন।
জাগো নিউজ: এমন সিটি নির্বাচন ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেও হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সব কয়টিতে হেরেছিল। এবারেও জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকার সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু দেখাতে চাইছেন।
মোহাম্মদ এ আরাফাত: ২০১৪ সালের সিটি নির্বাচনগুলোয় আওয়ামী লীগের সবচেয়ে ভালো নেতারা হেরেছিলেন। হারার কারণগুলো আপনাকে জানতে হবে। ওই সময় হেফাজতকে নিয়ে ধর্মকে ব্যবহার করেছিল বিএনপি। ২০১৩ সালের ৫ মে’র ঘটনাকে পুঁজি করে মানুষকে বোকা বানিয়েছিল।
২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে নির্বাচনকালীন সরকারে আসার আহ্বান জানিয়েছিল। বিএনপি আসেনি। বিএনপি নির্বাচনকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। এর দায় তো আওয়ামী লীগের নয়। ওই নির্বাচনগুলোয় যা খারাপ হয়েছে, তা বিএনপির জন্য।
জাগো নিউজ: ২০১৪ ঘটনা আবারও ঘটবে কি না?
মোহাম্মদ এ আরাফাত: আওয়ামী লীগ অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনে বিশ্বাসী। সামনের নির্বাচন অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।
আরও পড়ুন>>পাকিস্তানে এখন নির্বাচন হলে ইমরান খানের দলই জিতবে
বিএনপি যদি ঠিকমতো ইনভেস্ট তথা অংশগ্রহণ, পোস্টার লাগানো, প্রচারণায় থাকে তাহলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি নির্বাচন হবে।
জাগো নিউজ: আওয়ামী লীগ বিএনপিকে সেই সুযোগ দেবে?
মোহাম্মদ এ আরাফাত: অবশ্যই দেবে। কিন্তু বিএনপি তাণ্ডব চালালে ফের ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন হবে। নির্বাচনের নামে মনোনয়ন বাণিজ্য, নির্বাচনের দিন দুই ঘণ্টার মধ্যে বয়কট করা, পোলিং এজেন্ট না থাকলে তো একই ধাঁচের নির্বাচন হবে। এর দায় তো আওয়ামী লীগকে দিতে পারেন না।
জাগো নিউজ: আপনি বিএনপিকে দায় দিচ্ছেন। অথচ হাজার হাজার মামলা, লাখ লাখ আসামি করে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানির অভিযোগও আছে।
মোহাম্মদ এ আরাফাত: বিএনপির অভিযোগ ধরে আপনি সত্য বের করতে পারবেন না। বিএনপি প্রতিদিন মিথ্যা কথা বলে।
বিএনপির বিরুদ্ধে মামলা আছে, এটা ঠিক। কিন্তু অপরাধ করলে তো মামলা হবে। বিএনপি কী করেছে সবাই জানে। পানির বোতল ছোড়ার অপরাধে ওয়াশিংটনে বিএনপির এক কর্মীকে আটক করে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ। আমার সামনে এ ঘটনা। যদিও পরে ছেড়ে দেয়।
জাগো নিউজ: সারাবছর এসব মামলার খবর থাকে না। নির্বাচন এলে এসব মামলা তাজা হয়, আসামি ধরপাকড় হয়।
মোহাম্মদ এ আরাফাত: খবর সারাবছরই থাকে। আপনারা খবর রাখেন না। আপনারা নির্বাচনের এই সময় হাইলাইট করেন। সারা বছর অন্য বিষয় নিয়ে আপনারা ব্যস্ত থাকেন। আর বিএনপির সন্ত্রাসীরা নির্বাচনের আগেই বের হয়। অন্য সময় পালিয়ে থাকে।
এই মুহূর্তে ছাত্রলীগের ৭২৩ জন বিভিন্ন অপরাধে কারাগারে। আমরা তো এটি নিয়ে কথা বলছি না। বিএনপির হলে আপনারা প্রশ্ন তোলেন। অপরাধ করলে মামলা, জেল হবেই। গতকালও কেরানীগঞ্জে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা করলো। আওয়ামী লীগের ১৬ জন কাতরাচ্ছে। আওয়ামী লীগ তো বসে বসে মার খাবে না।
জাগো নিউজ: আপনার কি তাই মনে হচ্ছে? আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখন বসে বসে মার খাচ্ছে?
মোহাম্মদ এ আরাফাত: আমি তা বলিনি। বিএনপি সেখানে কীভাবে আক্রমণ করছে, তা সিসিটিভি ফুটেজে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।
জাগো নিউজ: আপনি কি মনে করেন সামনে বিএনপির আক্রমণ আরও বাড়তে পারে?
মোহাম্মদ এ আরাফাত: সেটা আমি জানি না। তবে শক্ত হাতে দমন করতে সরকার প্রস্তুত। বাংলাদেশে আইন পরিপন্থি আর কোনো কিছু বরদাস্ত করা হবে না।
জাগো নিউজ: বিএনপির এমন অপরাধ দমন করতে সরকার আর কী কৌশল নিতে পারে?
মোহাম্মদ এ আরাফাত: সরকার কোনো কৌশল নিচ্ছে না। যা হচ্ছে, সব আইন অনুযায়ী হচ্ছে।
এএসএস/এএসএ/এএসএম