কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার মুজিবুর রহমান (৬০)। জমি জমা সংক্রান্ত বিরোধে ১৭ বছর আগে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন সৎ ভাইয়েরা। অভিমানে জঙ্গলের গহীনে খুপড়ি ঘর বানিয়ে থাকতে শুরু করেন তিনি। এরই মধ্যে বাম চোখটি নষ্ট হয়ে যায় তার। বয়স বাড়ায় এখন তাকে কেউ কাজে নিতে চায় না। ফলে অনাহারে-অর্ধাহার রোদ-বৃষ্টিতে খুপড়ি ঘরেই দিন কাটে মুজিবুরের। অভাব জয় করতে না পারায় বিয়ে না করে থেকে গেছেন চিরকুমার।
Advertisement
বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে ঘটনাস্থলে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা এবং দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ। তাৎক্ষণিক চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয় এবং বিরোধ মীমাংসার পর ন্যায্য ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ইউএনও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুজিবুর রহমান উপজেলার গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের মাশিকাড়া গ্রামের মৃত লাল মিয়ার ছেলে। লাল মিয়া প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন তার মাকে। ওই সংসারে একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। প্রথম সংসারে দুই ভাই ফরিদুল ইসলাম ও জহিরুল ইসলাম। বাবা রেলওয়েতে চাকরি করতেন। সৎভাই ফরিদুল আলম পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে চাকরি করতেন।
মুজিবুর চাকরি করতেন জুট মিলে। তার বেতনের টাকায় জহিরুল ইসলাম বিএ পাস করেন। কিন্তু পৈতৃক সম্পত্তির ১০৫ শতাংশ জমির মধ্যে ৮৫ শতাংশ লিখে নিয়েছেন জহির। এরপর ২০০৭ সালে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়।
Advertisement
মুজিবুর বলেন, স্থানীয়দের সহযোগিতায় বাড়ির পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে পলিথিনের ত্রিপল দিয়ে একটি খুপড়ি বানিয়ে বসবাস শুরু করি। পরবর্তীতে জুট মিলের চাকরি ছেড়ে এলাকায় ইলেকট্রিক কাজ করি। কখনো লাকড়ির চুলায় ভাত আর আলু সিদ্ধ করে লবণ মরিচ দিয়ে খাই। আবার কখনো শুকনা খাবার খেয়ে বেঁচে আছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জহিরের বড় ভাই ফরিদুল আলমের ছেলে আল-আমিন বলেন, ‘কাকা অভিমানি। আমরা এখনো দাদার জায়গা-জমি ভাগা-ভাগি করিনি। জহিরুল চাচা কিছু জমি নিজ নামে লিখে নিয়েছেন সত্য। তবে মুজিব চাচার পাওনা তাকে বুঝিয়ে দিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা (উত্তর) জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি দেখে দুঃখ পেয়েছি। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। প্রাথমিকভাবে চোখের চিকিৎসার জন্য মুজিবুর রহমানকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তার পারিবারিক বিভেদ সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা বলেন, মজিবুর রহমানকে তার পৈতৃক সম্পত্তির কাগজপত্র নিয়ে এসিল্যান্ডের সঙ্গে দেখা করতে বলা হয়েছে। কাগজপত্র ঠিক থাকলে তার পাওনা সম্পত্তি তাকে দখলমুক্ত করে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। আইনগতভাবে তিনি যদি সম্পত্তির ভাগ না পান তাহলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুজিবুর রহমানের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
Advertisement
জাহিদ পাটোয়ারী/এসজে/জেআইএম