মেহেরপুরের হিমসাগর আমের বিশ্বজুড়ে খ্যাতি রয়েছে। গত ২৫ মে শুরু হয়েছে এ জাতের আম সংগ্রহ। তবে কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে হতাশ বাগান মালিকরা। কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় এবার প্রায় ৪৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে, যার বাজার মূল্য প্রায় ১০৪ কোটি টাকা।
Advertisement
কথা বলে জানা গেলো, আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে প্রথমে সাতক্ষীরা এরপর পর্যায়ক্রমে মেহেরপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর আম বাজারে আসার কথা। কিন্তু এবার ঘটেছে ব্যতিক্রম ঘটনা। চলতি বছর একই সময়ে সব জেলার আমে বাজার সয়লাব। এতে কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। সেইসঙ্গে রয়েছে কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির ঘড়গ। এ অবস্থায় মেহেরপুরের আম চাষিরা লোকসানের ভয়ে রয়েছেন।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের আম বাগান মালিক ফয়জুল করিম বলেন, আমার পাঁচ বিঘা জমিতে হিমসাগর আমের বাগান আছে। মেহেরপুরের হিমসাগর আমের চাহিদা অন্য আমের চেয়ে বেশি। এবছর তেমন ঝড়-ঝাপটা না হওয়ায় আমের ফলন যেমন ভালো হয়েছে। এ আম দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয়। তবে চলতি বছর বিভিন্ন জেলার আম একই সময়ে বাজারজাত হওয়ায় দামে হতাশ আমরা।
একই গ্রামের আরেক আম বাগানি ইন্তাজ আলী বলেন, এবছর আমের ফলন ভালো হয়েছে। আম বাজারজাত করার জন্য প্রস্তুত। তবে আমের বাজার মূল্য ভালো না। আমের ন্যায্য মূল্য না পেলে লোকসান গুনতে হবে আমাদের মতো চাষিদের।
Advertisement
বিশ্ব বাজারে মেহেরপুরের আমের বাজার তৈরি করে চাষিদের আম চাষে উৎসাহী করার জন্য কৃষি বিভাগের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
আরেক আম চাষি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, মৌসুমের শুরুতেই রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা এ জেলায় ভিড় জমান। তবে এবছর সব জেলার আম একই সময়ে বাজারজাত হওয়ায় আম ব্যবসায়ীরা মেহেরপুরে কম এসেছেন। তাই লোকসানের মুখে আম চাষিরা।
ক্ষতি পোষাতে সরকারিভাবে আম রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
মাদারীপুর থেকে আম কিনতে আসা ব্যবসায়ী মকলেচুর রহমান বলেন, অনেকেই জানেন মেহেরপুরের আম মানেই বিষ ও কেমিক্যাল মুক্ত। মেহেরপুরের আমের কথা শুনলে অন্য জেলার আমের আগেই মেহেরপুরের আম আগে বিক্রি হয়ে যায়। আমি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আম পাঠিয়ে ব্যবসা করি।
Advertisement
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার বলেন, জেলায় অন্য বছরের তুলনায় এবছর আমের অনেক ভালো ফলন হয়েছে। জেলায় ২ হাজার ৩৪০ হেক্টর আম বাগানে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০৪ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, বিশেষ করে জেলার হিমসাগর আমের অনেক খ্যাতি রয়েছে। হিমসাগর আম ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশে এবারও রপ্তানির সম্ভাবনা আছে। সে লক্ষ্যে ইন্টারন্যাশনাল ভার্জিনিয়াটেক, গ্লোবাল ট্রেড লিংক, গ্রিনগ্লোবাল, বিএইচ ট্রেডার ও নাফিজা এন্টারপ্রাইজসহ বেশ কয়েকটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আম কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এরইমধ্যে বেশকয়েকটি আম বাগান তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছে। গতবছরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হিমসাগর আম রপ্তানি করেছিল।
এমআরআর/জিকেএস