ফিচার

৮২ বছরের জীবনে কোনো নারীকেই দেখেননি তিনি

মিহাইলো টোলোটো জীবনে কখনো কোনো নারীকে দেখেননি। অনেকেই এ কথায় অবাক হয়েছেন বটে। কিন্তু পৃথিবীতে থেকেও কখনো কোনো নারীর স্পর্শ তো দূরের কথা চোখের দেখাও দেখেননি তিনি। এমনকি অনেকেই দাবি করেন, মিহাইলো ছিলেন বিশ্বের একমাত্র ব্যক্তি যিনি জীবদ্দশায় কোনো নারীকে স্পর্শ করেননি, দেখেননি এবং কথাও বলেননি।

Advertisement

মিহাইলো টোলোটো ছিলেন একজন গ্রীক সন্ন্যাসী। যিনি তার পুরো ৮২ বছরের জীবন কাটিয়েছিলেন অ্যাথোস পর্বতে। মিহাইলোর জন্ম ১৮৫৬ সালে গ্রিসে। জন্মের মাত্র ৪ ঘণ্টা পরই তার মা মারা যায়। মিহাইলোর বাবার মৃত্যু হয় তার জন্মের আগেই। তাই তাকে লালন-পালন করার মতো কেউই ছিল না। এজন্য এলাকার মানুষ তাকে অর্থোডক্স সন্ন্যাসীদের কেন্দ্র মাউন্ট অ্যাথোসে অবস্থিত একটি মঠের সিঁড়িতে ফেলে রেখে আসে।

সেখানকার সন্ন্যাসীরা ছোট্ট মিহাইলোকে তাদের সঙ্গে নিয়ে যান। মঠটিই হয়ে ওঠে মিহাইলোর স্থায়ী ঠিকানা। এই মঠ থেকে তিনি কখনো কোথাও যাননি। এই মঠের বাইরে যে এত বড় পৃথিবী আছে তার কিছুই দেখেননি তিনি। উঁচু দেয়াল ঘেরা মঠের মধ্যে তার বেড়ে ওঠা। সেখানেই সন্ন্যাস জীবনের শিক্ষায় শিক্ষিত হন। হয়ে ওঠেন একজন সন্ন্যাসী।

মিহাইলো ১৯৩৮ সালে মারা যান। তবে কখনো নারীর সংস্পর্শে আসেননি তিনি। এর অন্যতম কারণ হলো মিহাইলো কখনো মঠ থেকে বাইরে যাননি এবং এই পর্বতে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। তাই মিয়াহিলো টোলোটো কোনো নারীকে কখনো চোখের দেখা দেখেননি।

Advertisement

আরও পড়ুন: টানা ১০০ ঘণ্টা রান্না করলেন তিনি 

গ্রীসের উত্তর পূর্ব অঞ্চলের শহর সালোনিকি থেকে চারশ কিলোমিটার পূর্বে এজিয়ান সাগরের বুকে রয়েছে ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ছয় কিলোমিটার প্রশস্ত দ্বীপ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উপদ্বীপ এটি। দ্বীপটির বুক জুড়ে রয়েছে বেশ কিছু উঁচু-নিচু পাহাড়। পাহাড়গুলো প্রকৃতপক্ষে ৩৩৫ বর্গ কিলোমিটার বা ১৩০ বর্গমাইল এলাকা বেষ্টিত। এই পাহাড়গুলোকে বলা হয় পবিত্র পাহাড়। নাম মাউন্ট অ্যাথোস। এই পর্বতেই নারী নিষিদ্ধ আর সেখানেই জীবন কাটিয়েছেন মিহাইলো। আশ্রমের সেবায় তার জীবন অতিবাহিত করেছেন।

১০৪৬ সালে বাইজেন্টাইন সম্রাট কনস্টানটাইন মনোমাচোস এই পাহাড়ের উপরে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। এই আইনটি স্থাপন করা হয়েছিল যাতে মঠে বসবাসকারী পুরুষরা শান্তিতে পরম ব্রহ্মচর্যে তাদের জীবন কাটাতে পারে। সেখানকার সন্ন্যাসীরা মনে করতেন যে নারীদের উপস্থিতি ব্রহ্মচর্যের দিকে তাদের পথ পরিবর্তন করতে পারে।

মিহাইলোর মৃত্যুর পর, তার সহযাত্রী সন্ন্যাসীরা তার জন্য একটি বিশেষ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন করেছিলেন। তারা বিশ্বাস করেন যে তিনিই বিশ্বের একমাত্র পুরুষ যিনি কখনো কোনো নারীর সঙ্গে দেখা, স্পর্শ বা কোনো যোগাযোগ না করেই মারা গেছেন।

Advertisement

একটি ইংরেজি পুরোনো সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রীক সন্ন্যাসীরা কখনো গাড়ি বা বিমান দেখেননি। কারণ অ্যাথোস পর্বতে কোনো গাড়ি বা বিমান যাওয়ার পথ নেই।

তবে অনেকে দাবি করেন, মিহাইলো নারীদের দেখেছিলেন। তবে তিনি তা জানতেন না। মূল কারণ হচ্ছে তারা ছিলেন ছদ্মবেশী। ১৯২০-এর দশকে, ফরাসি দার্শনিক এবং লেখক মেরিসে চয়েসি মাউন্ট অ্যাথোসে প্রবেশের জন্য একজন নাবিকের ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন এবং ১৯৩০-এর দশকে, মিস ইউরোপের মুকুট পাওয়া প্রথম গ্রীক নারী অ্যালিকি ডিপ্লারকোও পবিত্র মন্দিরে অনুপ্রবেশ করার জন্য ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন। অর্থোডক্স পর্বত যেহেতু ছিল নারীদের জন্য নিষিদ্ধ। তাই তারা এই ছদ্মবেশ ধারণ করে সেখানে গিয়েছিলেন।

অনেকেই মনে করেন, মিহাইলোর হয়তো একজন বা উভয় ছদ্মবেশী নারীদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। যদিও তিনি সম্ভবত তাদের ছদ্মবেশের কারণে এটি বুঝতে পারেননি। অথবা এমনো হতে পারে তার সঙ্গে এই দুজন নারীর কারও দেখা হয়নি। যদিও এর সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

সূত্র: অডিটি সেন্ট্রাল, বোল্ডস্কাই

কেএসকে/জিকেএস