আইন-আদালত

উপজেলা পরিষদ নিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি প্রকাশ

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারার- এমন বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে।

Advertisement

উপজেলা চেয়ারম্যানদের পৃথক তিনটি রিটে জারি করা রুল আংশিক মঞ্জুর করে গত ২৯ মার্চ হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে দেওয়া রায়ের ২৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি ২৫ মে প্রকাশ করা হয়।

তবে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৫ জুন পর্যন্ত এই রায় স্থগিত করে দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত।

আইনের ৩৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন এবং তিনি পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা দেবেন। (২) পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিপালন এবং বিধি মোতাবেক নির্ধারিত অন্যান্য কার্যাবলী পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সম্পাদন করবেন।

Advertisement

আইনের এই বিধানসহ কিছু বিষয় নিয়ে উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও দুমকী উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ ও অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মনোহরদী উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান, গাজীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রিনা পারভীন, কালিয়াকৈর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আহম্মেদ ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদা আক্তার ২০২০ সালে ৭ ডিসেম্বরে রিট করেন।

ওই বছরই আগস্টে উপজেলা পরিষদ আইনের ২৯ ও ৩৩ ধারা চ্যালেঞ্জ করে আরেকটি রিট করেন বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মিনহাদুজ্জামান লিটন।

আর আইনের ৩৩ ধারাসহ আরও কিছু বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালের ১৫ জুন আরেকটি রিট করেন পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আব্দুল আজিজসহ তিন উপজেলা চেয়ারম্যান।

এসব রিটের পর হাইকোর্ট পৃথক রুল জারি করেন। রুল জারির পরে আইনজীবী হাসান এম এস আজিম বলেছিলেন, উপজেলা পরিষদে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থাকা সত্ত্বেও একজন নির্বাহী কর্মকর্তাকে বেশি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

Advertisement

সব রুলের শুনানি শেষে ১৫ জানুয়ারি রায়ের জন্য ২৯ মার্চ দিন রাখা হয়। সে অনুসারে ২৯ মার্চ বুধবার রায় ঘোষণা করা হয়।

আদালতে পৃথক রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিওসি, হাসান এম এস আজিম ও আইনজীবী মো. মিনহাদুজ্জামান লিটন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।

গত ২৯ মার্চ রায়ের পরে হাসান এম এস আজিম সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন, এটা অবৈধ। চিঠিপত্রে উপজেলা প্রশাসন ব্যবহার করে, এখন আর উপজেলা প্রশাসন ব্যবহার করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ ব্যবহার করতে হবে। ইউএনও সাচিবিক দায়িত্ব পালন করলেও তিনি উপজেলা পরিষদের কাছে জবাবদিহিতার মধ্যে থাকবেন।

তিনি বলেন, ২০১০ সালে ১৭টি বিভাগ হস্তান্তরিত হয়েছিল। তার মধ্যে উপজেলা পরিষদও হস্তান্তরিত হয়েছে। ইউএনও হস্তান্তরিত দায়িত্ব পালনের জন্য চার্টার অব ডিউটিজ আছে। তিনি এগুলো করবেন। এটার ওপরে এসে ৩৩ ধারায় তাকে একচ্ছত্র দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্ট বলছেন, এটা বাতিল। একচ্ছত্র থাকতে পারবে না। ইউএনওকে উপজেলা পরিষদের অধীনে কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সাচিবিক দায়িত্বের সঙ্গে উনাকে একচ্ছত্র আধিপত্য দেওয়া হয়েছে। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এবং আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিপালন ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এখন ২০১০ সালের হস্তান্তরিত বিধান অনুসারে ইউএনও কাজ করবেন।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, উপজেলা পরিষদ হলো উপজেলা পরিষদ আইন-১৯৯৮ এর ২৪ ধারার অধীনে গঠিত/প্রতিষ্ঠিত, সংবিধানের ১৫২ (১) অনুচ্ছেদসহ ৫৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গঠিত একটি স্থানীয় সরকার।

সংসদ উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৮ এর ৩৩ ধারা জাতীয় সংসদে সংশোধনীর মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের সব প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট উপজেলা পরিষদের কাছে দায়বদ্ধ না করে প্রশাসনকে (ইউএনওদের) দিয়েছে। এটি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত পরিষদ এবং সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। একইসঙ্গে উপজেলা পরিষদ আইন-১৯৯৮ সঙ্গেও তা সাংঘর্ষিক। অতএব, উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারা (যা ২০১১ সালের আইন নং ২১ অনুযায়ী (সংশোধিত) সংবিধানের ৭ (২) অনুচ্ছেদ অনুসারে বাতিলযোগ্য।

এফএইচ/এমআরএম/এমএস